g কেন হিটলারকে ছেড়ে গিয়েছিলেন তার সেই গার্লফ্রেন্ড? | AmaderBrahmanbaria.Com – আমাদের ব্রাহ্মণবাড়িয়া

শুক্রবার, ২০শে অক্টোবর, ২০১৭ ইং ৫ই কার্তিক, ১৪২৪ বঙ্গাব্দ

কেন হিটলারকে ছেড়ে গিয়েছিলেন তার সেই গার্লফ্রেন্ড?

AmaderBrahmanbaria.COM
জুলাই ৯, ২০১৭
news-image

---

 

আন্তর্জাতিক ডেস্ক :জার্মানি থেকে ১৯৪০ সালে নিজ জন্মভূমি ইংল্যান্ডে ফিরে এসেছিলেন ইউনিটি মিডফোর্ড। বলা হয়ে থাকে, বিশ শতকের ব্রিটেনকে কলঙ্কিত করেছিলেন এই নারী। ওই সময়ে হিটলারের প্রণয়ী হিসেবে ব্রিটিশ পত্রিকাগুলোর গসিপ কলামের নিয়মিত বিষয় হয়ে ওঠেন তিনি। শুধু তাই নয়, যুক্তরাজ্যের সরকার এবং গোয়েন্দা সংস্থা ‘এমআই ফাইভ’ এরও আলোচনার বিষয়ে পরিণত হন ইউনিটি।

ব্রিটেনে ফিরে এসে ওয়ারউইকশায়ার এলাকায় মার্গারেটদের পরিবারের সঙ্গে বসবাস করতে থাকেন হিটলারের এই ব্রিটিশ গার্লফ্রেন্ড। প্রথমবার ইউনিটি মিডফোর্ডকে দেখার কথা মনে করে মার্গারেট জানান, তার মায়ের সঙ্গে একটি গাছের নিচে দাঁড়িয়ে ছিলেন তিনি। মার্গারেটের বয়স তখন আট। অপরিচিতদের দিকে বারবার তাকাচ্ছিলেন ইউনিটি।

মার্গারেটের ভাষায়, ‘তিনি ছিলেন খুবই লম্বা। সব সময় গলায় একটি লকেট পরতেন। চুলগুলো ছিল অসম্ভব সুন্দর। তাকে নিয়ে এটাই ছিল আমার প্রথম স্মৃতি।’ তিনি বলেন, ‘মা পরিচয় করিয়ে দিলেন- এই আন্টির নাম হচ্ছে ইউনিটি। সে এখন থেকে আমাদের সঙ্গে থাকবে। তবে ইউনিটির মুখ থেকে একটি শব্দও শুনলাম না।’

প্রথম পরিচয় হওয়ার কয়েক সপ্তাহ পরে ইউনিটি হাউস গেস্ট হিসেবে ওয়ারউইকশায়ারে স্থায়ীভাবে থাকতে শুরু করেন। সেখানে বাবা রেভ ফ্রেডেরিখ সিউয়েল-করবি এবং মা বেতেনিকে নিয়ে থাকতেন মার্গারেট। সঙ্গে ছিল তার একটি ছোট বোনও। ইউনিটি ছিলেন কিছুটা অসংযমী স্বভাবের। তার একটি পা ছিল অবশ। মার্গারেটের ভাষায়, ‘হাঁটলে সেটাকে একটা গাছের গুঁড়ির মতো লাগতো।’

তিনি বলেন, ‘আমার মনে হতো, তাকে গৃহবন্দি রাখা হয়েছে। তিনি ছিলেন একদম একা। আন্টি ইউনিটির কোনো আত্মীয় ছিলেন না। কুখ্যাত হিসেবেই পরিচিত ছিলেন তিনি।’ হাউস অব কমন্সে তাকে নিয়ে আলোচনা হতো। জাতীয় নিরাপত্তা সংক্রান্ত ব্যাপারগুলোতে তার উপস্থিতির বিষয়টি বিবেচনা করা হতো। এর কারণ, হিটলারের গার্লফ্রেন্ড হিসেবে পরিচিতি ছিল তার।

ইউনিটি মিডফোর্ডকে নিয়ে আলোচনাটা আরেকটু বেশি হওয়ার কারণ, তিনি ছিলেন ব্রিটেনের ছয় মিডফোর্ড বোনদের একজন। আর তারা সবাই ছিলেন দেশটির হাউস অব কমন্সের স্পিকার লর্ড রেডেসডেলের মেয়ে। তার বোন ডায়ানা বিয়ে করেছিলেন ব্রিটিশ ফ্যাসিবাদী নেতা স্যার অসওয়াল্ড মোসলেকে। বিয়ে করে তখন ব্যাপক আলোচনা সৃষ্টি করেন ডায়ানা। বড় বোনের খ্যাতি দেখে ইউনিটিও লোভে পড়লেন। বিখ্যাত কাউকে বিয়ে করতে চাইলেন তিনি। বেছে নিলেন নাৎসি নেতা হিটলারকে। তবে তাদের মধ্যে কোনো যৌন সম্পর্ক ছিল বলে মনে করেন না বেশিরভাগ ইতিহাসবিদ।
জার্মানিতে থাকার সময় আত্মহত্যার চেষ্টা করেছিলেন এই নারী। তবে ব্যর্থ হন এবং শেষ পর্যন্ত ইংল্যান্ডে ফিরে আসতে হয় তাকে। ১৯৩৯ সালের সেপ্টেম্বরে জার্মানির বিরুদ্ধে ব্রিটেন যখন যুদ্ধ ঘোষণা করল, তখন মিউনিখের বাসিন্দা ইউনিটি। ধারণা করা হয়, যুদ্ধের প্রতিক্রিয়ায়ই তিনি নিজের মাথায় গুলি করেছিলেন। মাথায় বুলেট নিয়েই ব্রিটেনে ফেরেন এই নারী। দেশে ফেরার পর রাষ্ট্রের শত্রু হিসেবে বিবেচনা করা হতো তাকে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়েরও জিজ্ঞাসাবাদের মুখোমুখি হতে হয়।

ইউনিটির মা লেডি রেডেসডেলের সঙ্গে আগে থেকেই সম্পর্ক ছিল মার্গারেটের মায়ের। নিরাপদ মনে করেই ওয়ারউইকশায়ারের বাড়িতে রাখা হয়েছিল তাকে। কিন্তু বিভিন্ন সময়ে সরকারের লোকেরা বাড়িতে আসতে থাকে। এতে বিরক্তবোধ করতেন মার্গারেটের বাবা। যুদ্ধকালীন তার ভূমিকার জন্য সম্ভাব্য বিপজ্জনক ব্যক্তি হিসেবে ভাবা হতো এই নারীকে।

মার্গারেট বলেন, ‘ইউনিটির কাছে কোনো টাকা ছিল না, কোনো পাসপোর্ট ছিল না, লেখার জন্য কোনো কাগজ ছিল না। এগুলো তার জন্য অনুমোদিত ছিল না। এমনকি কোনো লাইব্রেরিতে যাওয়ারও অনুমতি ছিল না।’ ১৯৪৩ সাল থেকে ১৯৪৮ সাল পর্যন্ত মার্গারেটদের পরিবারের সঙ্গে ছিলেন ইউনিটি। আর এটা যতটা সম্ভব গোপন রাখা হয়েছিল।

তিনি আরো বলেন, ‘এটা নিয়ে কারো সঙ্গে কথা বলতে নিষেধ ছিল। ব্যাপারটা ছিল পুরোপুরি ট্যাবু। আমি তখন বুঝতাম না যে তিনি আসলে গৃহবন্দি আছেন।’

অনেক ইতিহাসবিদ মনে করেন, হিটলারের একটি সন্তান এসেছিল ইউনিটির গর্ভে। তবে এমন কোনো লক্ষণ ছিল না বলে জানান মার্গারেট। তার ভাষায়, ‘এটা পুরোপুরি মিথ্যা।’

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ে ইউনিটি সম্পর্কে নানা অপপ্রচারও ছিল। অনেকে মনে করতেন, তিনি হয়তো বিদেশিদের হয়ে কাজ করছেন, বা ব্রিটেনের ক্ষতি করতে পারেন। তবে এমআই ফাইভের ধারণা ছিল, তিনি কারও ক্ষতি করবেন না। ব্রিটেনে ফিরে আসার সময় ডাখহান্ড নামের একটি কুকুর নিয়ে এসেছিলেন ইউনিটি। এটি তাকে দিয়েছিলেন হিটলার।

এত নজরদারির পরও তার সঙ্গে ভালই সময় কাটছিল মার্গারেটের। তার ভাষায়, ‘তিনি ছিলেন খুবই আমুদে স্বভাবের। খুব ভালো শিল্পী। তিনি আমাকে দেখাতেন, কীভাবে আঁকতে হয়। পিয়ানো বাজাতেন ইউনিটি।’ এরপরও মার্গারেট এবং তার বোনকে চোখে চোখে রাখতেন তার মা।

ইউনিটির সঙ্গে কথা বলার এক পর্যায়ে মার্গারেট বুঝতে পারেন, তিনি একজন ইহুদিবিদ্বেষী। যুদ্ধ শেষের দিনগুলো স্পষ্টই স্মরণ করতে পারেন বর্তমানে ৮২ বছর বয়সী মার্গারেট। বাংকারে বসে হিটলারের আত্মহত্যার খবর যেদিন ব্রিটেনে পৌঁছে, মার্গারেটের ছোট বোন ইউনিটির কাছে গিয়ে বলতে থাকেন, ‘আন্টি ইউনিটি, তোমার বয়ফ্রেন্ড মারা যাওয়ার খবরে আমি খুবই দুঃখিত।’ এর জবাবে ইউনিটি বলেন, ‘তুমি একটা মিষ্টি মেয়ে।’
তবে ওই খবরে মনে মনে প্রচণ্ড দুঃখ পান ইউনিটি। মার্গারেটের ভাষায়, ‘আমি বললাম, ওহ! ওই লোকটি। এরপর তিনি আমার দিকে তেড়ে এলেন এবং লাথি মারতে চাইলেন। আমি ভয়ে খাবারের টেবিলেন নিচে গিয়ে লুকাই।’

এরপর মার্গারেটকে পাঠিয়ে দেয়া হয় একটি আবাসিক স্কুলে। তার ধারণা, এরপরও ওই বাড়িতে ছিলেন ইউনিটি। ১৯৪৮ সালে ৩৩ বছর বয়সে মস্তিষ্কের ঝিল্লির প্রদাহে মারা যান তিনি। আর এর জন্য দায়ী ছিল ১৯৩৯ সালে মাথায় ঢুকে যাওয়া সেই বুলেটটি।

এ জাতীয় আরও খবর