‘বাঘের মাথা’র স্বগৃহে রাজসিক প্রবেশ
---
অনলাইন ডেস্ক : বাংলাদেশ ও জাপানের প্রায় সাড়ে চার দশকের বন্ধুত্বের স্মারক ‘বাঘের মাথা’ রাজসিকভাবে আবার স্বগৃহে প্রবেশ করেছে।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭৩ সালে জাপান সফরকালে ‘বাংলাদেশ এবং বাংলাদেশের জনগণের পরম বন্ধু ও বঙ্গবন্ধুর শ্রদ্ধেয় বন্ধু’ জাপানের পার্লামেন্টের (ডায়েট) সাবেক সদস্য প্রয়াত তাকাশি হায়াকাওয়াকে বাংলার গৌরবের প্রতীক ‘রয়েল বেঙ্গল টাইগার’ বন্ধুত্বের স্মারক হিসেবে উপহার প্রদান করেন।
সুদীর্ঘ ৪৪ বছর জাপানি আতিথিয়েতার পর গতকাল ৭ জুন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মোঃ শাহরিয়ার আলমের উপস্থিতিতে প্রয়াত তাকাশি হায়াকাওয়ার পুত্র ওসামু হায়াকাওয়া দু’দেশের বন্ধুত্বের সর্বব্যাপী প্রসারের জন্য বন্ধুত্বের স্মারক বাঘের মাথাকে বাংলাদেশ দূতাবাসের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে হস্তান্তর করেন।
বাংলাদেশ ও জাপান- এই দু’দেশের মধ্যকার প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে প্রবাহমান ও চিরায়ত বন্ধন এবং বন্ধুত্বের দ্বিতীয় গৃহ থেকে প্রথম গৃহে এটি হলো রাজসিক প্রবেশ।
জাপানে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত রাবাব ফাতিমার সঞ্চালনায় ‘বাঘের মাথা’ হস্তান্তর অনুষ্ঠানে জাপান-বাংলাদেশ সোসাইটির সভাপতি ও বাংলাদেশে নিযুক্ত জাপানের সাবেক রাষ্ট্রদূত মাৎছুশিরো হরিগুছি, ভূমি মন্ত্রণালয়ের সাবেক ভাইস-মিনিস্টার তরু দাই ও জুনযো ইয়ামতো, বাংলাদেশে নিযুক্ত জাপানের সাবেক রাষ্টুদূত জিরো কোবাইয়াশি, জাপান সরকারের প্রতিনিধি এবং জাপান-বাংলাদেশ সোসাইটির পরিচালকবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী এ অনুষ্ঠানে প্রয়াত তাকাশি হায়াকাওয়া পরিবারকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, বাংলাদেশ সরকার বাঘের মাথা সংরক্ষণ ও বন্ধুত্বের অমর বার্তা প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে প্রচার ও প্রসারে সর্বদা সচেষ্ট থাকবে। দু’দেশের মধ্যে বিদ্যমান গভীর সম্পর্ক যা বঙ্গবন্ধু ও প্রয়াত তাকাশি হায়াকাওয়া স্থাপন করেছিলেন তা ভবিষ্যতে আরো শক্তিশালী হবে বলেও তিনি দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশের পরম বন্ধু ও মহান মুক্তিযুদ্ধের একনিষ্ঠ সমর্থক তাকাশি হায়াকাওয়া ছিলেন বাংলার মানুষের জন্য নিবেদিত প্রাণ এক মহৎ ব্যক্তি। ১৯৭০ সালের প্রলয়ংকারী ঘুর্ণিঝড়ের আঘাতে দুর্দশাগ্রস্ত বাংলার মানুষের সাহায্যার্থে টোকিওর রাস্তায় দাড়িঁয়ে যেমন তিনি চাঁদা আদায় করেছেন, তেমনি মহান মুক্তিযুদ্ধে জাপানের সমর্থন ও স্বীকৃতি আদায়ে ডায়েটে ও রাজপথে ছিলেন সদা সক্রিয়। তারই প্রচেষ্ঠায় শিল্পোন্নত দেশগুলোর মধ্যে জাপান সর্বপ্রথম বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয় (১০ ফেব্রুয়ারি ১৯৭২ তারিখে) এবং বাংলাদেশ হয়ে উঠে তাকাশি হায়াকাওয়ার দ্বিতীয় জন্মভূমি।
অনুষ্ঠান শেষে রাষ্ট্রদূত রাবাব ফাতিমা সবাইকে এ ঐতিহাসিক মুহূর্তে সামিল হওয়ার জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ জানান। বন্ধুত্বের বার্তাবাহক ‘বাঘের মাথা’কে রাষ্ট্রদূতের দপ্তরে প্রদর্শনের জন্য স্থাপন ও সংরক্ষণ করা হয়, যাতে জাপানি ও বাংলাদেশী নাগরিকবৃন্দ ও ভবিষ্যত প্রজন্ম জাপান-বাংলাদেশ বন্ধুত্বের গভীরতা ও ব্যাপ্তি সম্পর্কে জানতে পারে।