বুধবার, ১০ই মে, ২০১৭ ইং ২৭শে বৈশাখ, ১৪২৪ বঙ্গাব্দ

বাঙ্গিতে স্বাবলম্বী বাঞ্ছারামপুরের বাহেরচর গ্রাম

AmaderBrahmanbaria.COM
মে ৫, ২০১৭
news-image

ফয়সল আহমেদ খান, বাঞ্ছারামপুর : গ্রীষ্মকালীন ফল হিসেবে বাঙ্গির গ্রাম হিসেবে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার বাঞ্ছারামপুর উপজেলার বাহেরচর গ্রামের সুনাম রয়েছে দেশজুড়ে। স্বাদে গন্ধে অতুলনীয় বাহেরচর বাঙ্গি। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সারাবছর বাঙ্গির চাষ হলেও এ এলাকার বাঙ্গির দেখা মেলে বৈশাখ মাসে। মেঘনা নদীর পাড় ঘেষে এই গ্রামটির বিস্তীর্ণ জুড়ে চাষ হয় এ বাঙ্গির। স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে বৃহত্তর কুমিল্লাসহ,ঢাকা,চট্রগ্রাম,নরসিংদী,সিলেটে যায় বাহেরচরের বাঙ্গি। এ সময় গ্রামে শুরু হয় উৎসবের আমেজ।
জানা যায়, আজ থেকে প্রায় দেড় শ’ বছর আগে স্থানীয় কৃষকরা অর্থনৈতিক মুক্তির জন্য এ এলাকায় বাঙ্গির চাষ শুরু করেন। ধীরে ধীরে অর্থনৈতিকভাবে বাঙ্গি চাষে সাফল্যর মুখ দেখেন এ অঞ্চলের বাঙ্গি চাষীরা। এরপর থেকেই বাণিজ্যিকভাবে বাঙ্গির উৎপাদন শুরু করেন এরা। এক সময় বাহেরচর গ্রামে অন্যান্য ফসলের চাষ হতো কিন্তু বাঙ্গিতে লাভ বেশি হওয়ায় এ এলাকার কৃষকরা বাঙ্গি চাষের প্রতি ঝুঁকে পড়েন। বাঙ্গি চাষে সাফল্যে আজ অনেকেরই অর্থনৈতিকভাবে মুক্তি মিলেছে এবং এলাকার মানুষের জীবনযাত্রার মানোন্নয়ন সম্ভব হয়েছে। সেই থেকে আজ পর্যন্ত নানা প্রতিকূলতা উপেক্ষা করে এলাকার চাষীরা অতীত ঐতিহ্যকে সাফল্যের সাথে ধরে রেখেছেন। বর্তমানে বাহেরচর গ্রামে প্রায় সবাই বাঙ্গি চাষের সাথে সম্পৃক্ত। চৈত্র-বৈশাখ মাস এলেই বাঙ্গির মৌ মৌ গন্ধে মোহিত হয় বাহেরচর সহ বাঞ্ছারামপুর উপজেলার ১২১টি গ্রামের চারপাশ। গাঁয়ের মেঠো পথ দিয়ে হেঁটে গেলে বাঙ্গির সু-ঘ্রাণ ভেসে আসে নাকে।
বাঞ্ছারামপুর উপজেলা কৃষি অফিসার মো.জামাল হোসেন জানান, বাহেরচরের কৃষকদের বাঙ্গি চাষের সাফল্যে উপজেলার তাতুয়াকান্দি,আইয়ুবপুর,নগরীরচর গ্রামে এখন বাঙ্গি চাষ হচ্ছে।
স্থানীয় বাঙ্গি চাষীরা জানান, বর্ষার পানি নেমে যাওয়ার পর পরই জমিতে রোপণ করা হয় বাঙ্গি বীজের। ৪/৫ মাস নিয়মিত পরিচর্যা করার পর চৈত্র মাসের প্রথম দিকে বাঙ্গি গাছে ফুল আসে এবং ফল ধরা শুরু করে।তাতে পরির্পূর্নতা আসে বৈশাখের শেষে। চাষীরা পুরো এক মাস বাঙ্গি তুলতে পারেন গাছ থেকে। প্রতিটি গাছ দুই থেকে আড়াই মিটার পর্যন্ত লম্বা হয়ে থাকে।
স্থানীয় বাঙ্গি চাষী মো.নাজিমুদ্দিন বলেন, এ বছর ৩ কানি (৩৩ শতকে ১ কানি) জমিতে বাঙ্গি চাষ করেছি। আর এই ৩ বিঘা জমিতে বাঙ্গি চাষে খরচ হয়েছে প্রায় ৫ হাজার টাকা। এ পর্যন্ত ১৫ দিনে প্রায় ৯ হাজার টাকা বাঙ্গি বিক্রি করেছি। তিনি জানান, আরও প্রায় ১০/১২ দিন গাছ থেকে বাঙ্গি তুলতে পারবেন।
রফিকুল ইসলাম নামে আরেক বাঙ্গি চাষী জানান, বাপ দাদার পেশা হিসেবে এখনো তাঁরা বাঙ্গির চাষ করছেন। এ বছর তিনি ২ কানি জমিতে বাঙ্গির চাষ করেছেন। জমিতে যা ব্যয় করা হয়েছে তার কয়েকগুণ লাভ উঠে এসেছে এরই মধ্যে। আরও কয়েক সপ্তাহ গাছ থেকে বাঙ্গি তোলা যাবে। তিনি অভিযোগ করে বলেন, আমরা দীর্ঘদিন ধরে বাঙ্গি চাষ করে আসছি। বাঞ্ছারামপুরের বাহেরচর গ্রামটি বাঙ্গি এলাকার ঐহিত্যবহন করে চলেছে। কিন্তু বাঙ্গিতে অনেক সময় পোকামাকড়ের ও অজানা অনেক রোগ আক্রমণ করে। কিন্তু রোগ প্রতিরোধের জন্য আমরা স্থানীয় কৃষি অফিস থেকে ভালো কিংবা আন্তরিকতার সাথে কোন পরামর্শ পাই না। যদি আমরা বাঙ্গি চাষের ওপর সঠিক পরামর্শ পেতাম তাহলে আরও ভাল পরিচর্যার মাধ্যমে ভাল ফলন পেতাম। সুরুজ খান নামে এক চাষী অভিযোগ করে বলেন, কৃষি খাতে সরকার ঋনের সুবিধা দিয়ে থাকলেও এ এলাকার বাঙ্গি চাষীরা কোন প্রকার ঋণ সহায়তা পায় না। চাষীরা জানান, ভাল ফলন হলে আমাদের মনে আনন্দের জোয়ার বয়ে যায়। আর যদি ফলন ভাল না পাই তবে আমাদের আর দুঃখের সীমা থাকে না। বাঙ্গি চাষের ওপরই আমাদের পুরোপুরি নির্ভর করতে হয়।
বাঞ্ছারামপুর উপজেলার সন্তান ও বাংলাদেশ সমবায় ব্যাংকের চেয়ারম্যান মহিউদ্দিন মহি বলেন”বাঙ্গির মৌসুমে এই গ্রামের ছোট বড় সবার মাঝে আনন্দের বন্যা বয়ে যায়। বছরের একটি মাস বাহেরচর গ্রামে উৎসব বয়ে যায়। বাঙ্গির মৌসুমে গ্রামে বেড়াতে আসেন বিভিন্ন আত্মীয় স্বজনরা। বাঞ্ছারামপুর এলাকার বাঙ্গি দেশ ছেড়ে বিদেশে পাড়ি জমায় স্থানীয় প্রবাসীদের মাধ্যমে। বাঙ্গির জন্য বাহেরচরের জনপদ সমৃদ্ধ হচ্ছে দিন দিন সারাদেশের মানুষের কাছে”