চট্টগ্রাম বন্দর আরো ৬ গ্যান্ট্রি ক্রেন কিনছে
---
নিজস্ব প্রতিবেদক : বন্দর ব্যবহারকারী ও আমদানিকারকেদের দীর্ঘদিনের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে অবশেষে চট্টগ্রাম বন্দরের বহুল প্রত্যাশার ছয়টি গ্যান্ট্রি ক্রেন কেনা হচ্ছে। ইতিমধ্যে টেন্ডার প্রক্রিয়াও সম্পন্ন হতে চলেছে। গত ৬ এপ্রিল টেন্ডার দাখিলের শেষদিনে তিনটি কোম্পানি দরপত্রে অংশ নিয়েছে। ৩৯৬ কোটি টাকা ব্যয়ে এই ছয়টি গ্যান্ট্রি ক্রেন চট্টগ্রাম বন্দরের নিউমুরিং কন্টেনার টার্মিনালে স্থাপন করা হবে। ক্রেনগুলো স্থাপন করা হলে চট্টগ্রাম বন্দরের কন্টেনার হ্যান্ডলিং সক্ষমতা বহুলাংশে বাড়বে বলেও আশা করা হয়েছে।
চট্টগ্রাম বন্দরের একজন কর্মকর্তা বলেছেন, ছয়টি গ্যান্ট্রি ক্রেন কেনার জন্য বহুদিন ধরে চেষ্টা করছিল বন্দর কর্তৃপক্ষ। নিউমুরিং কন্টেনার টার্মিনালের ইকুইপমেন্ট সংগ্রহ প্রকল্পের আওতায় ৩৯৬ কোটি টাকা ব্যয়ে ‘শিপ টু শোর’ (এসটিএস) গ্যান্ট্রিক্রেনগুলো কেনার প্রক্রিয়া শুরু হয়। কিন্তু নানামুখী ষড়যন্ত্র এবং মামলা মোকাদ্দমায় জড়িয়ে ক্রেনগুলো কেনা সম্ভব হচ্ছিল না। নিউমুরিং কন্টেনার টার্মিনালের ভাগ্যের সাথে গ্যান্ট্রি ক্রেনের ভাগ্যও জড়িয়ে গিয়েছিল।
চট্টগ্রাম বন্দরের কর্মকর্তারা জানান, বার্ষিক পাঁচ লাখ টিইইউএস কন্টেনার হ্যান্ডলিং ক্ষমতাসম্পন্ন নিউমুরিং কন্টেনার টার্মিনালের নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হয় ২০০৮ সালে। বন্দরের সবচেয়ে বড় এই টার্মিনালের হ্যান্ডলিং ক্ষমতা পাঁচ লাখ বলা হলেও পাঁচটি জেটি সম্বলিত এই টার্মিনালে বছরে অন্তত ১৫ লাখ টিইইউএস কন্টেনার হ্যান্ডলিং করা সম্ভব। বন্দর কর্তৃপক্ষ প্রায় ছয়শ কোটি টাকা ব্যয়ে টার্মিনালটি নির্মাণ করলেও এখনো পুরোপুরি চালু করতে পারেনি। নানা ধরনের মামলা মোকাদ্দমায় জড়িয়ে এনসিটির অপারেটর নিয়োগ থেকে শুরু করে ইকুইপমেন্ট সংগ্রহ পর্যন্ত সবকিছু ঝুলিয়ে দেয়া হচ্ছিল। সংঘবদ্ধ একটি প্রভাবশালী চক্র নিউমুরিং কন্টেনার টার্মিনাল পুরোদমে চালু করার ক্ষেত্রে ক্রমাগত বাঁধার সৃষ্টি করেছে।
অবশেষে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ নিজেদের অর্থায়নে এই টার্মিনালে ইকুইপমেন্ট স্থাপন করছে। এরই অংশ হিসেবে ইতোমধ্যে প্রায় ১৬০ কোটি টাকা ব্যয়ে ১১টি আরটিজি (রাবার টায়ার গ্যান্ট্রিক্রেন) কেনা হচ্ছে। নতুন করে আরো ছয়টি আরটিজি কেনার জন্য টেন্ডার আহ্বান করা হয়েছে। আরটিজির পর বহুল প্রত্যাশার শিপ টু শোর গ্যান্ট্রি ক্রেন কেনার টেন্ডার আহবান করা হয়।
গত ৬ এপ্রিল ছিল টেন্ডার দাখিলের শেষদিন। তিনটি কোম্পানি গ্যান্ট্রি ক্রেন সরবরাহের আগ্রহ প্রকাশ করে টেন্ডারে অংশ নিয়েছে। কোম্পানি তিনটি হচ্ছে চীনের মেসার্স সাংহাই জেনুয়া হ্যাভি ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড। চীনের এই কোম্পানিটির লোকাল এজেন্ট হিসেবে কাজ করছে ঢাকার মেসার্স বিওয়াইডি কর্পোরেশন। জাপানের মেসার্স সুমিতুমো কর্পোরেশন নামের কোম্পানিও টেন্ডারে অংশ নিয়েছে। এই কোম্পানির লোকাল এজেন্ট সাইফ পাওয়ারটেক। জার্মানির মেসার্স নক আরভেল্ট কার্নবাউ জিএমবিএইচ নামের একটি কোম্পানিও টেন্ডারে অংশ নিয়েছে। এদের লোকাল এজেন্ট হিসেবে কাজ করছে ন্যাশনাল ডাইনামিকস লিমিটেড। এই তিনটি কোম্পানির দাখিল করা টেন্ডার মূল্যায়ন করে সর্বন্নি দরদাতাকে কার্যাদেশ দেয়া হবে বলেও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
বন্দরের পদস্থ একজন কর্মকর্তা বহুল প্রত্যাশার ছয়টি শিপ টু শোর গ্যান্ট্রি ক্রেন কেনার কথা স্বীকার করে বলেন, বন্দরে বর্তমানে চারটি গ্যান্ট্রিক্রেন আছে। কন্টেনার হ্যান্ডলিংয়ে গতিশীলতা বাড়াতে গ্যান্ট্রি ক্রেনের বিকল্প নেই। চট্টগ্রাম বন্দরে আরো অন্তত দশটি গ্যান্ট্রি ক্রেন কেনা দরকার বলেও তিনি মন্তব্য করেন। নিউমুরিং কন্টেনার টার্মিনালে প্রথম দফায় ছয়টি ক্রেন আনা হলেও পরবর্তীতে আরো চারটি ক্রেন কেনার পরিকল্পনা রয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
তিনি বলেন, নিউমুরিং কন্টেনার টার্মিনাল পুরোদমে চালু করতে প্রায় ১২শ কোটি টাকার ইকুইপমেন্ট কেনা হচ্ছে। আমরা ক্রমান্বয়ে ইকুইপমেন্টগুলো সংগ্রহ করছি। বন্দরের সক্ষমতা বাড়াতে ইকুইপমেন্ট সংযোজনের কোনো বিকল্প নেই বলেও তিনি মন্তব্য করেন।