৫ জনের ইসিতে আ. লীগ প্রস্তাবে ১, বিএনপির প্রস্তাবে ১
নিজস্ব প্রতিবেদক : সাবেক সচিব খান মোহাম্মদ নূরুল হুদাকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) করে পাঁচ সদস্যের নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করা হয়েছে। কমিশনার হয়েছেন সাবেক সচিব মো. রফিকুল ইসলাম, সাবেক অতিরিক্ত সচিব মাহবুব তালুকদার, রাজশাহীর সাবেক জেলা ও দায়রা জজ কবিতা খানম ও ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) শাহাদৎ হোসেন চৌধুরী
এর মধ্যে আওয়ামী লীগ কবিতা খানম ও বিএনপি মাহবুব তালুকদারের নাম প্রস্তাব করেছিল বলে জানিয়েছেন ইসি গঠন প্রক্রিয়ায় সাচিবিক দায়িত্ব পালনকারী মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব শফিউল আলম।
তবে সার্চ কমিটির প্রস্তাবিত ১০ নামের মধ্যে বিএনপির প্রস্তাবিত স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ ড. তোফায়েল আহমদ এবং আওয়ামী লীগের প্রস্তাবিত পরিকল্পনা কমিশনের সাবেক সদস্য আবদুল মান্নানের নাম ছিল। এই দুটি নাম রাষ্ট্রপতি অনুমোদন করেননি।
তবে সিইসি হিসেবে যে দুজনের নাম প্রস্তাব করেছিল সার্চ কমিটি, তাঁদের নাম বড় দুটি দল (আওয়ামী লীগ ও বিএনপি) কেউ প্রস্তাব করেনি বলেও জানিয়েছেন মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব।
আজ সোমবার রাতে সচিবালয়ে নবগঠিত ইসির নামের তালিকা প্রকাশ করেন শফিউল আলম। এ সময় তিনি সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন। তিনি জানান, ‘একেকটি নাম অনেকগুলো দলের কাছ থেকে এসেছে। নামগুলো প্রায় কমন। ১২৮টি নামের মধ্যে এই নামগুলো এসেছে।’
একপর্যায়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বিএনপির প্রস্তাবনার ব্যাপারে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব বলেন, ‘অতিরিক্ত সচিব মাহবুব তালুকদার এবং স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ ড. তোফায়েল আহমদের নাম বিএনপির কাছ থেকে এসেছিল। এর মধ্যে মাহবুব তালুকদারকে নির্বাচন কমিশনার হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি।’
‘অপরদিকে আওয়ামী লীগ প্রস্তাব করেছিল রাজশাহীর সাবেক জেলা ও দায়রা জজ কবিতা খানম ও পরিকল্পনা কমিশনের সাবেক সদস্য আবদুল মান্নানের নাম। এর মধ্যে রাষ্ট্রপতি কবিতা খানমকে নিয়োগ দিয়েছেন।’
তবে তাঁদের নামে ‘কালার’ দেওয়া ঠিক হবে না বলেও মন্তব্য করেন শফিউল আলম। তিনি বলেন, ‘বিএনপি দিলেও নামগুলো কিন্তু নির্দলীয় হিসেবে এসেছে।’
‘সার্চ কমিটি স্বাধীনভাবে কাজ করেছে। আমরা সাচিবিক সহায়তা প্রদাস করেছি’, যোগ করেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব।
সন্ধ্যায় নির্বাচন কমিশন গঠনের জন্য সার্চ কমিটি তাদের প্রস্তাবিত ১০ জনের নাম রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের কাছে দেয়। সেখান থেকেই রাষ্ট্রপতি সিইসি ও অন্য নির্বাচন কমিশনারদের নিয়োগ দেন।
সার্চ কমিটি সিইসি হিসেবে সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদার ও সাবেক সচিব কে এম নূরুল হুদার প্রস্তাব করেছিল।
এ ছাড়া কমিশনার হিসেবে সাবেক অতিরিক্ত সচিব মাহবুব তালুকদার, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. জারিনা রহমান খান, সাবেক সচিব মো. রফিকুল ইমলাম, স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ ড. তোফায়েল আহমেদ, রাজশাহীর অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ কবিতা খানম, পরিকল্পনা কমিশনের সাবেক সদস্য মো. আবদুল মান্নান, ব্রিগেডিয়ার (অব.) শাহাদৎ হোসেন চৌধুরী, নির্বাচন পর্যবেক্ষণকারী সংস্থা জানিপপের চেয়ারম্যান ড. নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহ।
এখন আইন অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে পরামর্শ করে নবগঠিত ইসির ব্যাপারে প্রজ্ঞাপন জারি করবেন। এ প্রক্রিয়ায় সাচিবিক দায়িত্ব পালন করছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ।
এর আগে আজ সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় বঙ্গভবনে যান সার্চ কমিটির ছয় সদস্য। সেখানে তাঁরা রাষ্ট্রপতির কাছে নামের তালিকা ও এ-সংক্রান্ত প্রতিবেদন তুলে দেন। পরে সন্ধ্যা ৭টার দিকে বঙ্গভবন থেকে বেরিয়ে যান সার্চ কমিটির সদস্যরা। বঙ্গভবনে যাওয়ার আগে আজ বিকেল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত প্রায় দুই ঘণ্টার বৈঠকে সার্চ কমিটি ১০ জনের নাম চূড়ান্ত করে। সুপ্রিম কোর্টের জাজেস লাউঞ্জে এ বৈঠক হয়।
সার্চ কমিটির শেষ বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন কমিটির প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি ওবায়দুল হাসান, মহা-হিসাব নিরীক্ষক মাসুদ আহমেদ, সরকারি কর্মকমিশনের (পিএসসি) চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ সাদিক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য শিরীণ আখতার।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী রকিবউদ্দীন আহমদের মেয়াদ হচ্ছে ৮ ফেব্রুয়ারি।
গত ২৫ জানুয়ারি ছয় সদস্যের এই অনুসন্ধান দল গঠন করে ১০ কার্যদিবসের মধ্যে সুপারিশ জমা দিতে বলা হয়। আগামীকালই শেষ হচ্ছে এই সময়সীমা।
পাঁচ সদস্যের নির্বাচন কমিশনে এবার প্রথমবারের মতো একজন নারী আসলেন।
বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বে ছয় সদস্যের সার্চ কমিটি নিজেদের মধ্যে চার দফা বৈঠক ছাড়াও প্রথমে ১২ বিশিষ্ট ব্যক্তি এবং পরে আরো চারজনের সঙ্গে বৈঠক করেছে। এ ছাড়া রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সংলাপে অংশ নেওয়া ৩১টি দলের মধ্যে ২৬টি দলের কাছ থেকে পাঁচটি করে নাম জমা নিয়েছে তারা। বাকি দলগুলোর চারটি সার্চ কমিটিতে নাম দেয়নি আর একটি দল নির্ধারিত সময়ের পর নাম জমা দেওয়ায় তা গ্রহণযোগ্য হয়নি।
রাজনৈতিক দলগুলোর কাছ থেকে পাওয়া ১৩০টি নামের মধ্য থেকে ২০টি নাম নিয়ে একটি সংক্ষিপ্ত তালিকা করে সার্চ কমিটি নিজেদের মধ্যে সর্বশেষ বৈঠকে বসে গত বৃহস্পতিবার (২ ফেব্রুয়ারি)।
নির্বাচন কমিশনে নিয়োগ নিয়ে গত ১৮ ডিসেম্বর থেকে ১৮ জানুয়ারি পর্যন্ত নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত মোট ৩১টি দলের সঙ্গে বৈঠক করেন রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ। আর এই সংলাপ শেষ হওয়ার এক সপ্তাহ পর গঠন করা হয় সার্চ কমিটি।
২০১২ সালেও বর্তমান নির্বাচন কমিশন নিয়োগ দেওয়ার আগে সে সময়ের রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান একই প্রক্রিয়ায় নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ দিয়েছিলেন।