ইসি নিয়োগ: আলোচনায় তারা ১০ জন
নিউজ ডেস্ক : নির্বাচন কমিশনে কারা নিয়োগ পাচ্ছেন? সার্চ কমিটি সংক্ষিপ্ত তালিকা করেছে ২০ জনের। এই নাম প্রকাশ করেনি তারা। এর আগে ২৬টি দল পাঁচটি করে নাম জমা দিয়েছে কমিটির কাছে। এসব নামের কোনেটিও প্রকাশ হয়নি। তবে গণমাধ্যমকর্মীদের জানার আগ্রহ ছিল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির নাম নিয়েই।
সার্চ কমিটির মতো দেশের শীর্ষ দুই দলও তাদের জমা দেয়া তালিকা প্রকাশ করেনি। তবে নানা সূত্র থেকে বিভিন্ন নাম প্রকাশ হয়েছে। আর নির্বাচন কমিশনে নিয়োগের ক্ষেত্রে আলোচনায় আছে বেশ কিছু নাম।
গত বৃহস্পতিবার সার্চ কমিটির সব শেষ বৈঠকের পর জানানো হয়েছে, সংক্ষিপ্ত নামের তালিকা নিয়ে তাদের বিষয়ে খোঁজ খবর করা হচ্ছে। তবে এ ক্ষেত্রে গোয়েন্দা সংস্থার বদলে নানা সূত্র থেকে তথ্য যোগাড়ের চেষ্টা করা হচ্ছে।
সার্চ কমিটির সঙ্গে বৈঠকে বসা বিশিষ্টজনেরা বলে আসছেন, নির্বাচন কমিশনে এমন লোকদের নিয়োগ দেয়া উচিত যাদের বিষয়ে কোনো ধরনের বিতর্ক বা রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা নেই।
ঢাকাটাইমস আলোচিত এই ১০ জনের সম্পর্কে খোঁজখবরের চেষ্টা করেছে। তারা কী করতেন, এখন কী করেন, অবসরের পর সরকারি কোনো সুযোগসুবিধা পাচ্ছেন কি না-তাও যাচাইয়ের চেষ্টা করেছে। এবার দেখে নেয়া যাক এই ১০ জনের বিষয়ে কিছু তথ্য।
মোল্লা ওয়াহেদুজ্জামান। সার্চ কমিটির কাছে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে জমা দেয়া তালিকায় তার নাম আছে বলে শোনা যাচ্ছে। ৯০ দশকের শেষ দিকে তিনি টাঙ্গাইলের জেলা প্রশাসক ছিলেন। তার সময় টাঙ্গাইলে অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদের উপনির্বাচনে হেরে গিয়েছিলেন কাদের সিদ্দিকী।
সেনা-সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে মোল্লা ওয়াহেদুজ্জামান খাদ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ছিলেন। পরে তিনি খাদ্য ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের সচিব হন। এই মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে থাকাকালে সংকট ব্যবস্থাপনা বিষয়ক একটি সেমিনারে অংশ নিতে যুক্তরাষ্ট্রে গিয়েছিলেন। সেখানে গিয়ে তিনি সেমিনারে যোগ না দিয়ে নিউইয়র্কে বন্ধু-বান্ধব ও আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে সময় কাটান বলে অভিযোগ উঠে। পরে তাকে ওই ভ্রমণের জন্য যুক্তরাষ্ট্র সরকারের কাছ থেকে থাকা-খাওয়াসহ অন্যান্য খরচের টাকা ফেরত দিতে হয়। খাদ্য মন্ত্রণালয়ের পর বর্তমান সরকারের সময় তাকে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব করা হয়। পরে তিনি (বিলুপ্ত) বেসরকারিকরণ কমিশনের চেয়ারম্যান পদেও নিয়োগ পেয়েছিলেন।
কয়েক বছর আগে মুক্তিযোদ্ধার ভুয়া সনদ সংগ্রহের অভিযোগ উঠে মোল্লা ওয়াহেদুজ্জামানের বিরুদ্ধে। তখন তিনি বেসরকারিকরণ কমিশনের চেয়ারম্যান ছিলেন। তদন্তে অভিযোগ প্রমাণের পর তার মুক্তিযোদ্ধার সনদ বাতিল হয়। তার গ্রামের বাড়ি নরসিংদী।
মনজুর হোসেন। ব্যক্তি হিসেবে মিষ্টভাষী ও সদালাপী। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় থাকতে নেত্রকোণা জেলার প্রশাসক ছিলেন তিনি। ছিলেন ঢাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ সংস্থা ডেসার সদস্য। সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মহাপরিচালক ছিলেন তিনি। পরে তিনি পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব, স্থানীয় সরকার বিভাগের অতিরিক্ত সচিব এবং পরবর্তীতে স্থানীয় সরকার সচিব হন। এছাড়া পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়, স্বরাষ্ট্র, কৃষি মন্ত্রণালয়, রাষ্ট্রপতির কার্যালয়ের সচিব পদেও দায়িত্ব পালন করেন।
শেষে স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব হিসেবে অবসরে যান মনজুর হোসেন। এখন তিনি রাষ্ট্রায়াত্ব ব্যাংক রূপালী ব্যাংকের চেয়ারম্যান পদে দায়িত্ব পালন করছেন। মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের পরিবারের সদস্য মনজুর হোসেনের ভাই মালিক খসরু ৭৩ ব্যাচের পুলিশ কর্মকর্তা ছিলেন। পুলিশ সুপার হিসেবে তিনি অবসর নেন। তার গ্রামের বাড়ি ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গায় আওয়ামী লীগের ঘাঁটি।
আব্দুল করিম। তার নামও আওয়ামী লীগের তালিকায় আছে বলে গণমাধ্যমে খবর প্রকাশি হয়েছে। বর্তমানে তিনি পল্লী কর্ম সহায়ক ফাউন্ডেশনের (পিকেএসএফ) ব্যবস্থাপনা পরিচালক। তিনি সরকারের মুখ্যসচিব ছিলেন। এক এগারোর পর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, মৎস ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, যোগাযোগ মন্ত্রণালয় ( সেতু বিভাগ) এবং অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। ছিলেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যানও। সচিব হিসেবে অবসরে যাওয়ার পর আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় এসে ২০১৩ সালে তাকে পিকেএসএফের ব্যবস্থাপনা পরিচালক পদে নিয়োগ দেয়।
সাদেকা হালিম। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই অধ্যাপকের নামও এসেছে গণমাধ্যমে। তিনিও আওয়ামী লীগের তালিকায় আছেন বলে শোনা যাচ্ছে। বর্তমান সরকারের আমলেই তথ্য কমিশনের কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তার বাবা অধ্যাপক ফজলুল হালিম চৌধুরী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ছিলেন। সাদেকা হালিম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্বাচিত সিন্ডিকেট সদস্য হিসেবে ছয় বছর দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি শিক্ষক সমিতির সদস্য ছিলেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট সদস্য সাদেকা হালিম বাংলাদেশ সমাজবিজ্ঞান সমিতির নির্বাহী সদস্য হিসেবেও কাজ করেছেন। আওয়ামী লীগ ২০০৯ সালে ক্ষমতায় এসে শিক্ষা নীতি প্রণয়নে যে জাতীয় কমিটি করেছিল সাদেকা হালিম ওই কমিটির অন্যতম সদস্য ছিলেন।
নূর মোহাম্মদ। তিনি বাংলাদেশ পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক বা আইজিপি। বিএনপি-জামায়াত সরকারের আমলে নারায়ণগঞ্জের পুলিশ সুপার ছিলেন তিনি। ওই সরকারের আমলে জঙ্গি সংগঠন জেএমবির নেতা বাংলা ভাই ও শায়েখ আবদুর রহমান যখন দেশের উত্তরাঞ্চলে দোর্দ- প্রতাপের সঙ্গে দাপিয়ে বেড়াচ্ছিলেন তখন নূর মোহাম্মদ তখন রাজশাহী রেঞ্জের ডিআইজির দায়িত্বে ছিলেন।
ফখরুদ্দিন-মঈনউদ্দিন সরকারের সময় আইজিপি হন নূর মোহাম্মদ। আইজিপি থেকে অবসরে যাওয়ার পর আওয়ামী লীগ সরকারের গত আমলে যুব ও ক্রীড়া সচিব পদে নিয়োগ পান। পরে তাকে মরক্কোর রাষ্ট্রদূত হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়। তার গ্রামের বাড়ি কিশোরগঞ্জ জেলায়।
সালেহ উদ্দিন আহমেদ। তিনি বিএনপির তালিকায় আছেন বলে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ হয়েছে। এই অর্থনীতিবিদ বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ছিলেন। দেশের অর্থনৈতিক শৃঙ্খলা রক্ষায় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এই নিয়োগ বরাবরই সরকারের ইচ্ছেয় হয়ে থাকে এবং সরকারের নীতি ও আদর্শেও প্রতি অনুগতরাই এই পদে নিয়োগ পান বলে ধারণা কার হয়। এছাড়া তিনি পল্লী ক্ষুদ্রঋণ অর্থায়নকারী জাতীয় প্রতিষ্ঠান পিকেএসএফের ব্যবস্থাপনা পরিচালক পদেও দায়িত্ব পালন করেছেন।
আসাফ উদ্দৌলাহ। তার নামও বিএনপির তালিকায় আছে বলে বিভিন্ন গণমাধ্যমে খবর এসেছে। তিনি যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়সহ বেশ কয়েকটি মন্ত্রণালয়ের সচিব ছিলেন। অবসরের পর রাজনীতিতে এসে আওয়ামী লীগে যোগ দেন। তিনি দীর্ঘদিন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টাপরিষদ সদস্যও ছিলেন। পরে ফরিদপুর সদর আসন থেকে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মনোনয়ন চেয়েছিলেন। কিন্তু পাননি। তবে তাকে সোনালী ব্যাংকের চেয়ারম্যান করা হয়। পরে তিনি ওই পদ ছেড়ে দেন এবং আওয়ামী লীগ থেকে বেরিয়ে এসে বিএনপি ঘরনার সংগঠনের নানা কর্মসূচিতে অংশ নিতে থাকেন। গত কয়েক বছর ধরেই আওয়ামী লীগের কট্টর সমালোচকদের একজন আসাফ উদ্দৌলাহ। ফরিদপুরে তার পরিবারিকভাবে আওয়ামী লীগ বিরোধী বলে পরিচিত।
শাহদীন মালিক। আইনজ্ঞ হিসেবে পরিচিত এই বিশেষজ্ঞ সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে গণমাধ্যমে পরিচিতি পান। তিনি ওই সরকারের আমলে নির্বাচন কমিশনের আইনজীবী ছিলেন। ওই সময় যারা দুই নেত্রীকে নেতৃত্ব থেকে সরিয়ে দেয়াসহ বিরাজনীতিকরণের সঙ্গে জড়িত ছিলেন তাদের সঙ্গেও শাহদীন মালিকের সখ্য ছিল।
শাহদীন মালিকও আওয়ামী লীগের সমালোচকদের একজন। তার পরিবারও আওয়ামী লীগবিরোধী হিসেবে পরিচিত। তার ভাই মোহাম্মদ জহির বিএনপির ঘরাণার রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে তাকে বিএনপি থেকে প্রার্থী করার ব্যাপারে জোর গুঞ্জন ছিল।
স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ হিসেবে পরিচিত তোফায়েল আহমেদের নামও বিএনপির তালিকায় আছে বলে গণমাধ্যমে খবর প্রকাশ হয়েছে। তার কর্মজীবনের শুরুটা কেটেছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে। সেখানে লোকপ্রশাসন বিভাগে শিক্ষকতার পদ ছাড়েন তিনি ২০০৭ সালে সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে। ওই সরকারের আমলেই গঠন করা স্থানীয় সরকার কমিশনের সদস্য হন তিনি। পরে সে কমিশন বিলুপ্ত হওয়ার পর বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ব্র্যাকে যোগ দেন তোফায়েল। বর্তমানে তিনি নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটিতে অধ্যাপনা করছেন। এ ছাড়া বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনেও তিনি জড়িত। মাঝে কাজ করেছেন জাতিসংঘের উন্নয়ন সংস্থা ইউএনডিপিতেও।
ড. তাসনিম সিদ্দিকী। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের এই অধ্যাপকের নামও বিএনপির তালিকায় রয়েছে বলে শোনা যাচ্ছে। তিনি বিএনপি-জামায়াত সমর্থিত সাদা দলের সমর্থক হিসেবে পরিচিত। শিক্ষকতার পাশাপাশি অভিবাসীদেরকে নিয়ে কাজ করা সংগঠন রামরুর চেয়ারপারসন।ঢাকাটাইমস