বিজয়নগরে চোরাচালানের রাঘব-বোয়াল
---
আমিরজাদা চৌধুরী, ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে : ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগর সীমান্তে তৎপর দু-পাড়ের এক-দেড়শ চোরাচালানী। তবে এরমধ্যে শীর্ষ চোরাচালানী ২০ থেকে ২৫ জন। তাদের হাত ধরেই উপজেলার ৩২ কিলোমিটার সীমান্তপথে ঢুকছে মাদকসহ অন্যান্য চোরাচালানী পন্য। শীর্ষ চোরাচালানী আর তাদের সাঙ্গপাঙ্গদের নাম রয়েছে মুখেমুখে। এরা হচ্ছে কেশবপুরের ইকবাল,কাউসার,নোয়াগাওয়ের আমিন ভূইয়া,ঢালিম ভূইয়া,ইসহাক ভূইয়া,পত্তনের মবুল্লা,জুরুল হক,হানিফ মিয়া,মহরম আলী, দুলালপুরের লিটন,পাগলা বাচ্চু,কালু কাশিনগরের শাহজাহান,মাতু,কবির,পাতলা জামাল, বৈশা ফারুক, সেলিম, নাজমা, সুমন,ওয়াসিম,জসিম,আলাল মিয়া,দুলাল মিয়া,সুরুজ মিয়া,রেনু মিয়া,জিল্লু মিয়া,খোকন,শফিক মিয়া,বিল্লাল,রশিদ মিয়া,মাইজহাটির ইকবাল,জামাই লিটন,পেন্ডু ইব্রাহিম,আলমগীর,শ্রীপুরের জিতু মিয়া,সাহেদ মিয়া,মনির হোসেন, কাশিমপুর সামসু ও হাফিজুর,এনামুল,মেরাশানীর হারিছ মিয়া,কালাছড়ার হানিফ,চান্দুরার জালালপুরের বজলু,মাসুক,আক্তার,রফু ও শাহআলম,আবদুল্লাহপুরের ফয়সাল,কালীসীমার আয়েত আলী ও সাদ্দাম হোসেন,আলাদাউদপুরের রহিম,আলী রহমান,আমতলীর ফারুক,সাতবর্গের রেনু। ওপারের চোরাচালানীরা হচ্ছে ত্রিপুরার নশিনপুরের সাধন দাশ,সহদেব,মিঠু, শান্ত, নারায়নপুরের স্বপন দাশ,লনি দাশ,প্রিয়া,মানিক,সুব্রত,সজল,সুভাস দাশ,কিশোর,ইন্দ্র দাশ,কানু দাশ ও ভানু দাশ,পিংকু ও সতু। চোরাচালানীর এই রাঘব বোয়ালরা ধরা পড়ছে কমই। মাদক চোরাচালান আর ব্যবসা বদলে দিয়েছে এখানকার অনেক চোরাচালানীর জীবন। কারো কারো সাফল্য চোখে পড়ার মতো। একাধিক গাড়ি-বাড়ির মালিক এদের কেউ কেউ। ব্যবসা করছে দাপটের সঙ্গে। প্রভাবশালী মাদক ব্যবসায়ীদের অনেকে আবার বিশেষ দলের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত।
সীমান্তের সতর্ক পাহাড়া এড়িয়েই বিষ্ণুপুর,সিংগারবিল,পাহাড়পুর ও হরষপুর এ ৪ ইউনিয়নের বিভিন্ন পথে নেমে আসে মাদক। খোজ নিয়ে জানা গেছে-বিষ্ণুপুরের কালাছড়া,রূপা,সিংগারবিলের নলগুড়িয়া,নোয়াবাদী,পাহাড়পুরের সেজামুড়া,কামালমোড়া,বামুটিয়া,ছড়ারপাড় সীমান্ত দিয়ে বিজয়নগরে মাদক ঢুকে। পাশ্ববর্তী আখাউড়া উপজেলার আমোদাবাদ ও মাধবপুর উপজেলার ধর্মঘর এবং বিজয়নগরের পত্তন ও চান্দুরা ইউনিয়ন হয়ে এ মাদক ছড়িয়ে পড়ে দেশের বিভিন্নস্থানে। সুত্র জানায় সিংগারবিল ইউনিয়নের ১৫,১৬,১৭,১৮ সীমান্ত পিলার এলাকা দিয়ে প্রতিদিন ১৫ থেকে ২৪’শ কেজি গাজা,২ থেকে ৪ হাজার পিস ফেন্সিডিল,বিষ্ণপুরের কালাছড়া এলাকার ১০,১১,১২,১৩ নম্বর সীমান্ত পিলার এলাকা দিয়ে প্রতিরাতে ৩ হাজার বোতল ফেন্সিডিল,এক হাজার থেকে ১৪’শ কেজি গাজা নেমে আসে। প্রতিরাতে আনুমানিক ৫০ হাজার পিস ইয়াবা ট্যাবলেট ঢুকে এই উপজেলায়। বিভিন্ন যানবাহনে করে এসব মাদক ছড়িয়ে পড়ছে রাতেই দেশের বিভিন্নস্থানে। এখানকার মাদক কারবারীরা কখনো ধরাও পড়ছেনা। অভিযান হলে মাদক পরিবহনে জড়িতরাই ধরা পড়ছে।
শীর্ষ চোরাচালানী প্রত্যেকের রয়েছে আবার ১০/২০ জনের দলবল। সবচেয়ে বেশী ৪০/৫০ জনের দল রয়েছে ইকবালের। এই চোরাচালানী ও লাইনম্যানরা হচ্ছে নলগুড়িয়ার সুমন মিয়া,জসিম,ওয়াসিম,আলাল মিয়া,দুলাল মিয়া,সুরুজ মিয়া,বৈশা ফারুক,হানিফ মিয়া,জিল্লু মিয়া,রেনু মিয়া,খোকন,শফিক মিয়া,বিল্লাল,আলাল,পারভীন, রশিদ মিয়া,বিষ্ণুপুরের আবু সৈয়দ,মান্টু,তৌহিদ মিয়া,দুলাল মিয়া,কাজল,ফিরোজ মিয়া,সোহেল মিয়া,রুবেল মিয়া,বাবু মিয়া,জালাল,অহিদ মিয়া,রূপা গ্রামের ঝাড়– মিয়া,হারুন মিয়া,পাহাড়পুর ইউনিয়নের সেজামুড়া গ্রামের হোসেন মিয়া,আমির আলী,কামাল ভূইয়া,ডালিম মিয়া,জাহাঙ্গীর মিয়া,আলমগীর মিয়া,জুরুল হক,হানিফ মিয়া,মহরম আলী,রুবেল মিয়া,শরীফ মিয়া,বিলকিস বেগম,আসমা বেগম,শ্রীপুরের সাহিদ মিয়া,হোসেন ভূইয়া ও তার ভাই,কাশিনগরের শুক্কুর আলী,বাচ্চু,জসিম,সেলিম,ইসহাক,মনির, আলমগীর,ইব্রাহিম,নোয়াবাদীর মনির হোসেন,হানু,স্বপন,ইদন মিয়া,মোগল মিয়া,তাজল,মাইঝহাটির হারিছ মিয়া,টুনি,জাহানারা ও মিষ্টি,ক্ষীরাতলার জিতু মিয়া। এদের অনেকের বিরুদ্ধে রয়েছে মামলা। গ্রেফতার হয়ে জেল খেটেছে কেউ কেউ। তারপরও বন্ধ নেই মাদক চোরাচালান ও ব্যবসা। এদিকে সিংগারবিল বাজারের বাবুলের মালিকানাধীন এলাহি বস্ত্র বিতান থেকে প্রতিদিন মাদক কেনাবেচার কোটি কোটি টাকা লেনদেন হচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। বিকাশের মাধ্যমে দেশের বিভিন্নস্থানের মাদক ব্যবসায়ীরা এই দোকানে টাকা পাঠান। টাকা পেয়ে এখান থেকে পাঠানো হয় মাদক। ঐ দোকানে নিয়মিত আসেন এক পুলিশ কর্মকর্তাও। এ ব্যাপারে বিজয়নগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আলী আরশাদ বলেন- পুলিশ সুপার মিজানুর রহমানের নির্দেশে মাদক নির্মুলে আমরা তৎপর। ২০১৬ সালরে ১ লা জানুয়ারী থেকে নবেম্বরের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত ১৩৩ টি মাদক সংক্রান্ত মামলা হয়েছে। এসময় গ্রেফতার করা হয়েছে ১৫২ জনকে। ৩২৫ কেজি গাজা,৩৫৮ বোতল ফেন্সিডিল,৪১০৫ পিস ইয়াবা,২৮৯ বোতল স্কপ,বিয়ার ৪০ বোতল,হুইস্কি ১৯০ বোতল,৪৯ বোতল আরসিকপ,৬০ লিটার চোলাই মদ,অফিসার্স চয়েজ ৪৬ বোতল ও রেকুডেক্স ৪৯ বোতল ও ভারতের মোটা তাজার বিশেষ টেবলেট ৪০ হাজার পিস উদ্ধার করা হয়।