বাংলাদেশী ১০ শ্রমিকের বকেয়া বেতন নিয়ে সিঙ্গাপুরে রুদ্ধদ্বার শুনানি আজ
নিউজ ডেস্ক : আলী পরেশ সহ মোট ১০ বাংলাদেশী শ্রমিক কঠোর পরিশ্রম করেও এখন অসহায়। গত বছরের মাঝামাঝি সময় তারা সিঙ্গাপুরে হেং শান কনস্ট্রাকশন কোম্পানিতে কাজ নেন। সেখানে দু’মাস কাজ করার পরই তাদের বেতন বাকি পড়ে। এর ফলে কঠিন সময়ের মুখে পড়েন বাংলাদেশের এসব শ্রমিক। বাধ্য হয়ে গত বছর অক্টোবরে সিঙ্গাপুরের মানব সম্পদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে তারা ওই কোম্পানির বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন। তাতে তারা দাবি করেন প্রতিজন শ্রমিক ওই কোম্পানির কাছে ৪ হাজার ডলার করে বকেয়া পাবেন। এসব শ্রমিকের বেসিক বেতন মাসে ৬৫০ ডলার। ওভারটাইম ধরে প্রতি মাসে তাদের আয় এক হাজার ডলার। তাদের এ অভিযোগ আজ সিঙ্গাপুরের শ্রম আদালতে রুদ্ধদ্বার বৈঠকে শুনানি হচ্ছে। এ খবর দিয়েছে সিঙ্গাপুরের দ্য স্ট্রেইটস টাইমস। এতে বলা হয়েছে, কাজে যোগ দেয়ার পর বাংলাদেশী ওই ১০ শ্রমিক সপ্তাহে ৬দিন প্রতিদিন ১০ ঘন্টা করে কাজ করেছেন। পার্ক ভিউ প্রাইমারি স্কুল এবং ইলিয়াস পার্ক প্রাইমারি স্কুলের সম্প্রসারণের কাজ করেন তারা। এ বিষয়ে ৪১ বছর বয়সী আলী পরেশ বলেন, খুব কঠোর পরিশ্রম করতে হয়েছে আমাদের। কোম্পানি বস খুব দ্রুততম সময়ে কাজ শেষ করতে চাইছিলেন। তাই আমাদেরকে মুষলধারে বৃষ্টি উপেক্ষা করে কাজ করতে হয়েছে। আমরা কখনো কাজ বন্ধ রখি নি। কিন্তু গত বছর জুলাই মাস থেকে আমাদের বেতন বন্ধ রয়েছে। এর ফলে দেশে আমার ৭ ও ১১ বছর বয়সী দু’বাচ্চার পড়াশোনা বন্ধ হয়ে যাওয়ার অবস্থা হয়েছে। ওদিকে একাউন্টিং অ্যান্ড করপোরেট রেগুলেটরি অথরিটির (একরা) রেকর্ডে দেখা যায় হেং শান কন্সট্রাকশন কোম্পানি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে ২০১৪ সালের মার্চে। এর মালিক চীনের নাগরিক কিয়ান ইউফেই। তার বয়স ৪০ এর কোটায়। তিনি সিঙ্গাপুরের স্থায়ী অধিবাসী। তবে এ কোম্পানিটির কোনো প্রাতিষ্ঠানিক অফিস নেই সিঙ্গাপুরে। এ প্রতিষ্ঠানের নামে কোনো চিঠি এলেই তা পাঠিয়ে দেয়া হয় ইন্টারন্যাশনাল প্লাজায়। এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে কিয়ান ইউফেই ১০ বাংলাদেশী শ্রমিকের বেতন বকেয়া থাকার কথা স্বীকার করেছেন। তবে তাদেরকে চার মাস বেতন দেয়া হয় নি এমন অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেছেন, তাদের বেতন বকেয়া থাকতে পারে সর্বোচ্চ এক বা দুই মাসের। এটা হতে পারে প্রতিজনের এক হাজার ডলার করে। কারণ তাদের বেতন অনেক কম। তিনি আরও স্বীকার করেন আর্থিক সঙ্কটে আছেন। তাকে মূল দু’টি কাজের কন্ট্রাক্টররা এখনও টাকা দেয় নি। ওই অর্থ পাওয়ামাত্রই বাংলাদেশী শ্রমিকদের পাওনা পরিশোধ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তিনি। এ সময় তিনি বাংলাদেশী এসব শ্রমিকের ধৈর্য্য নেই বলে অভিযোগ করেন। বলেন, তারা বেতন পরিশোধের সুযোগ না দিয়েই শ্রম মন্ত্রণালয়ে অভিযোগ করেছে। কিয়ান ইউফেই বলেন, আমি শিগগিরই এ কোম্পানি বন্ধ করে দেবো। আমার ব্যক্তিগত তহবিল থেকে এসব শ্রমিকের বেতন পরিশোধ করার চেষ্টা করবো। আমি ১৬ বছর যাবত সিঙ্গাপুরে কাজ করছি। ২০০৮ সালে এখানে আমি স্থায়ী আবাসিক অনুমতি পেয়েছি। আমি পালাবো না। ওদিকে হিউম্যানিটারিয়ান অর্গানাইজেশন ফর মাইগ্রেশন ইকোনমিক (হোম)-এর সমাজকর্মী জেভোন নগ বলেছেন, বিদেশী শ্রমিকদের বেতন না দেয়ার এমন ঘটনা অহরহ ঘটছে। অর্থনৈতিক মন্দার কারণে তা আরও বৃদ্ধি পেতে পারে। এসব শ্রমিক ‘হোম’ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করেন গত মাসে। তারা তাদের সহায়তা চান। এ সময় তাদের প্রত্যেককে আর্থিক সহায়তা হিসেবে ৪০ ডলার করে দেয়া হয়। পাশাপাশি পরামর্শ সুবিধা দেয়া হয়। ওদিকে শ্রম মন্ত্রণালয় এসব শ্রমিককে মাইগ্রেন্ট ওয়ার্কার্স সেন্টার পরিচালিত একটি আশ্রয়শিবিরে থাকার ব্যবস্থা করে দিয়েছে। এখন সবকিছুকে পিছনে ফেলে আলী পরেশ ও অন্যরা আশা করছেন তাদের বকেয়া পরিশোধ করা হবে।