যেভাবে যৌনরোগ ছড়াচ্ছে এটিএম!
বিজ্ঞান প্রযুক্তি ডেস্ক : টাকা তোলা ও জমা দেওয়ার এটিএম মেশিন ব্যবহারে সতর্ক থাকুন। কারণ, এটিএম মেশিন থেকে যৌনরোগ ছড়াচ্ছে। সম্প্রতি এক গবেষণায় এমনই তথ্য উঠে এসেছে।
‘এমস্ফিয়ার’ নামে যুক্তরাষ্ট্রের একটি গবেষণাভিত্তিক সাময়িকীর বরাত দিয়ে ভারতের সংবাদ মাধ্যম ডেকান ক্রনিকেল আজ শনিবার একটি খবর প্রকাশ করেছে। সেখানে জানানো হয়, যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যের এটিএম ব্যবহারকারীদের ওপর গবেষণা চালিয়ে পাওয়া যায় এই ভয়াবহ তথ্য।
ওই গবেষকদলটি এটিএমের কি প্যাডে মানুষ ও অন্যান্য স্তন্যপায়ী প্রাণীর দেহের নিম্নাংশ ও যৌনাঙ্গে অবস্থানকারী পরজীবীর নমুনা পেয়েছেন। এ ছাড়া মানবদেহের যৌনাঙ্গে সংক্রমণ ঘটানো পরজীবী ‘ট্রাইকোমোনাস ভ্যাজিনালিস’ গোত্রের আরেক পরজীবীর অস্তিত্ব পাওয়া গেছে এটিএমের কী-প্যাডে।
গবেষকরা জানিয়েছেন, এটিএম যন্ত্রের কি প্যাড জীবাণু দিয়ে ভর্তি থাকে। আর ওই জীবাণুদের মধ্যে এই দুই ধরনের পরজীবীর উপস্থিতি টাকা তুলতে যাচ্ছেন এমন গ্রাহকদের জন্য ভয়ানক হতে পারে। কারণ যৌনরোগ ছড়াতে এই দুই পরজীবী সিদ্ধহস্ত। এছাড়া এটিএম ব্যবহারের পর হাত না ধোয়াও হতে পারে ভয়ংকর। কারণ খাবারের মধ্যে দিয়ে এসব পরজীবীর বেশি সংক্রমণ হয়।
২০১৪ সালের জুন এবং জুলাই মাসে যুক্তরাষ্ট্রের ম্যানহাটন, কুইন্স এবং ব্রুকলিনের ৬৬টি এটিএম মেশিনের কী-প্যাডে পাওয়া জীবাণুর নমুনা নিয়ে এই গবেষণাটি করা হয়। গবেষকদলের প্রধান ছিলেন নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক জেন কার্লটন।
অধ্যাপক কার্লটন জানান, গবেষণার পর জানা গেছে এটিএমের কি-প্যাড আসলে জীবাণুদের আস্তানা। নানা উৎস থেকে এসে জীবাণুরা বাসা বাঁধে এটিএম কি প্যাডে। ওখানে বাসা বাঁধার মুল কারণ তাদের পরিবাহক অর্থাৎ মানুষের সংস্পর্শের সহজলভ্যতা এবং শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত অনুকূল পরিবেশ। ফলে বায়ু বা প্রাণীবাহিত জীবাণুরা সহজেই কি প্যাডের ওপর বাসা বাঁধে এবং পরিবাহকের মধ্য দিয়ে দ্রুত বিভিন্ন দেহে স্থানান্তরে সক্ষম হয়।
অধ্যাপক কার্লটন জানান, বিশেষ পদ্ধতিতে এটিএমের কি প্যাড থেকে জীবাণু ও পরজীবী সংগ্রহ করে তাঁদের ডিএনএ আলাদা করা হয়। এরপর শুরু হয় গবেষণা। দেখা যায়, টেলিভিশন, ড্রয়িংরুমের সোফা-বালিশ, রান্নাঘরের ময়লা, শামুক ও মুরগি, নষ্ট হয়ে যাওয়া দুধ-দই এবং ডিমে যে জীবাণু থাকে, একই ধরনের জীবাণুর দেখা মেলে এটিএমের কি প্যাডে।
গবেষকরা জানিয়েছেন, সারাদিনের বিভিন্ন কাজে আমাদের শরীরে বিভিন্নভাবে জীবাণু ঢোকে। যেমন কেউ একজন খাবার খেলেন অথবা কোনো পুরোনো-পচা জিনিস ধরলেন। সেখান থেকে তার হাতে জীবাণু স্থানান্তরিত হয়।
এরপর ধরুন তিনি গেলেন এটিএম মেশিনে টাকা তুলতে। হাত থেকে মেশিনের কি প্যাডে খুব সহজেই জীবাণুর স্থানান্তর হয়। এরপর অন্য কোনো ব্যবহারকারী ওই কি প্যাডে হাত রাখলে জীবাণু তাঁর শরীরে চলে যায়।
অধ্যাপক জেন কার্লটন বলেছেন, আমাদের ফলাফল দেখিয়েছে এটিএম কি প্যাডে বিভিন্ন উৎস থেকে জীবাণু আসে। আর স্থানান্তরও হয় দ্রুত। এর মূল কারণ মানুষের অসাবধানতা। কারণ আমরা কোনো নোংরা বস্তু ধরার পর জীবাণুর ভয়েই হাত ঠিকভাবে ধুয়ে ফেলি। কিন্তু এটিএমে জীবাণুর কথা জানি না বলেই এটি ব্যবহারের পর হাত পরিষ্কারের পর মাথায় আসে না। ফলে জীবাণু সংক্রিমত হয় দ্রুত।