অনলাইন ডেস্ক : প্রায়ই দেখে থাকবেন আমাদের বন্ধুরা বাস্তবে একরকম আর ফেসবুকে যে একেবারে অন্য মানুষ। আমরা নিজেরাও সামাজিক যোগাযগের এই মাধ্যমটির সামনে বসলেই কেমন যেন অন্য এক মানুষে পরিণত হই। কেন ঘটে এমন? কেন আমরা নিজেরাই একটি নকল রূপ তুলে ধরি সবার সামনে? আসুন জেনে নিই, মানুষের অদ্ভুত ফেসবুক সাইকোলজি কি বলে-
আমরা জানি আমাদের অন্যেরা দেখছে
উইলক্স এবং স্টিফেন একটি জরিপ করেন। সেখানে দুইদল মানুষের উপর গবেষণা করে তারা দেখেন, ফেসবুকে আমাদের পোস্টে বা ছবিতে লাইক এবং কমেন্ট আমাদের নিজেদের সম্পর্কে আমাদেরই দৃষ্টিভঙ্গী বদলে দেয়। আমরা একটা ইমেজ ধরে রাখতে চাই দূরের মানুষদের কাছে, বোঝাতে চাই আমরা এমন। প্রকৃতপক্ষে ঘনিষ্ট বন্ধুদের কাছে আমরা আসলে এমন নই। এজন্য অনেক দুই তিনটি একাউন্ট ও ব্যবহার করেন। কোন একাউন্টে শুধু ঘনিষ্ঠ বন্ধুরা থাকেন, কোনটায় থাকেন ব্যবসা বা অফিসের কলিগ বন্ধুরা। অনেকে এমনকি ফেক একাউন্ট খোলেন শুধুই অপরিচিতদের সাথে বন্ধুত্ব করার জন্য।
মানুষ আমাদের সম্পর্কে কী জানবে সেটি আমাদের নিয়ন্ত্রণে
ফেসবুকে আমরা চাইলে শুধু আমাদের ভাল দিক, পজেটিভ বিষয়, সাফল্য তুলে ধরতে পারি। আমরা যখন বন্ধুদের সাথে সামনাসামনি আড্ডা দেই তখন কখনো আমরা হাসাহাসি করি, কখনো বিরক্ত হই, কখনো রেগে যাই কখনোবা মন খারাপ করে ফেলি। কিন্তু ফেসবুকে আমরা চাইলে আমাদের সবকয়টি আবেগের প্রকাশই লুকিয়ে রাখতে পারি। তথ্য দিতে পারি নিজের ইচ্ছামত। আমাদের মস্তিষ্ক এই সুযোগটাই গ্রহণ করে।
স্বীকৃতি চাওয়ার মানসিকতা
মানুষ সবসময় নিজের সম্পর্কে ভাল কথা শুনতে পছন্দ করেন। নিজের প্রশংসা শুনতে ভালবাসেন। তাই নিজের প্রকৃত ছবি না দিয়ে আমরা সে ছবি নানান এপস ব্যবহার করে এডিট করে আরও সুন্দর করে প্রকাশ করি। নিজেদের ভাল থাকার এমনকি নিজেই নিজের প্রশংসা করে পোষ্ট দিই। এই কাজগুলো সব মিলিয়ে আমাদের এক ভিন্ন ভাবমূর্তি তৈরি করে সবার মাঝে।
দূরের বন্ধুরা কী চিন্তা করে তা পরোয়া করি না
আমরা প্রায়শই দূরের বন্ধুরা আমাদের কাজকে কীভাবে দেখছে, কী ভাবছে এগুলো নিয়ে চিন্তা করি না। কলেজে, বিশ্ববিদ্যালয়ে অথবা অফিসে দূরে বসে থাকা মানুষটিও আমাদের দিকে কীভাবে তাকাচ্ছে আমরা সেটি খেয়াল করি। সেখানে একভাবে আমরা নিজেদের ব্যক্তিত্বের ছবি তুলে করি। কিন্তু ফেসবুকে আমাদের কেউ সরাসরি দেখতে পাচ্ছে না। দূরের বন্ধুরা যাদের সাথে আমাদের তেমন দেখাই হয় না তারা আমাদেরকে কিভাবে নিচ্ছে সেটি আমরা তখন আর গুরুত্ব দিই না।
অনলাইনে ঘৃণা প্রকাশ করা সহজ
সামনাসামনি যে আপনি হয়ত সহজে কারও সাথে উচ্চস্বরে কথাও বলেন না সেই আপনিই আবার অনলাইনে দ্রুতই প্রতিক্রিয়াশীল আচরণ করে বসেন। ফেসবুকে লেখায় লেখায় ঝগড়া করা, রাগ-ঘৃণা প্রকাশ করা খুবই সহজ। এজন্যই আমরা দেখি, সামাজিক-রাজনৈতিক যে কোন বিতর্কিত বিষয়ে আলোড়িত হয়ে ওঠে ফেসবুক। কিন্তু সেই একই মানুষ অনলাইনের বাইরে যখন সরাসরি সে বিষয়ে কার্যকরি পদক্ষেপ নিতে বলা হয় তখন পিছিয়ে পড়েন।
আমরা বন্ধুদের ইম্প্রেস করতে চাই
নানান রকম ছবি দিয়ে, মজার মজার স্ট্যাটাস দিয়ে আমরা আসলে আমাদের বন্ধুদের ইম্প্রেস করতে চাই। সরাসরি আমরা নিজের সম্পর্কে এত কথা বলার সুযোগ পাই না। আড্ডায়, পার্টিতে নিজেকে এত ভাবে প্রকাশ করা যায় না। কিন্তু ফেসবুকে প্রতিদিন নিত্যনতুন ছবি দিয়ে এবং আরও নানান উপায়ে নিজের গুণাবলি প্রকাশ করা যায়। সেটা করতে করতে আমরা খেয়ালই করি না আমরা যা প্রকাশ করছি সেটা আসলে আমাদের নিজেদের প্রকৃত ছবি নয়। আমি মানুষটা আসলে অন্যরকম, অনেক সাধারণ। কিন্তু ফেসবুক প্রফাইলে হয়ে উঠি ‘সেলিব্রেটি’!