অনেকেই প্রাত্যহিক জীবনের অনেক কাজ ও তৎপরতার কথা ভুলে যায়। এটাকে বয়সজণিত ও স্বাভাবিক বিষয় মনে করা হয়। বাস্তবতার প্রেক্ষিতে বিষয়টি যথার্থ মনে হলেও কোরআন-হাদিসে এমন কিছু আমলের কথা এসেছে, যা পরিপালনে এমন সমস্যা কাটিয়ে উঠা অনেকটাই সহজ।
আসলে ভুলে যাওয়া মানুষের সহজাত প্রবৃত্তি। তাই তো জনৈক কবি বলেছেন, ইনসানকে (ইনসান আরবি শব্দ, মানুষ, খোদার বান্দা) ইনসান (ভুলকারী) নাম দেওয়া হয়েছে, যেহেতু সে ভুলে যায়। আর কলবকে (অন্তর) কে কলব (পরিবর্তনশীল) নাম দেওয়া হয়েছে- যেহেতু সে পরিবর্তিত হয়।
তবে ভুলে যাওয়ার সমস্যা, প্রবৃত্তি অনুযায়ী এক ব্যক্তি থেকে অন্য ব্যক্তির ক্ষেত্রে বেশ তারতম্য রয়েছে। কিছু লোকের মাঝে ভুলে যাওয়ার সমস্যা প্রবল; আর কারও মাঝে কম। এমতাবস্থায় ভুলে যাওয়ার সমস্যা কাটিয়ে উঠতে অভিজ্ঞ ইসলামি স্কলাররা নিম্নের কাজগুলো মেনে চলার পরামর্শ দিয়ে থাকেন।
এক. গোনাহ থেকে দূরে থাকা। কারণ গোনাহের কারণে মুখস্থশক্তিতে দুর্বলতা আসে; জ্ঞানার্জনে ঘাটতি আসে। জ্ঞান হলো আলো আর গোনাহ হলো অন্ধকার। সুতরাং আলোর সঙ্গে অজ্ঞতার অন্ধকার একত্রিত হয় না। এক্ষেত্রে ইমাম শাফেয়ির কথা উল্লেখ করা যেতে পারে। তিনি বলেন, আমি আমার শিক্ষক ওকির নিকট অভিযোগ করলাম, আমার মুখস্তশক্তির দুর্বলতা প্রসঙ্গে। তিনি আমাকে গোনাহ পরিহার করার পরামর্শ দিলেন এবং বললেন, জ্ঞান হচ্ছে আল্লাহর নূর; আল্লাহর নূর কোনো গোনাহগারকে দেওয়া হয় না।
এক লোক মালেক ইবনে আনাসকে বললেন, হে আবু আবদুল্লাহ! মুখস্থশক্তি বাড়ানোর কোনো কিছু আছে কি? তিনি বলেন, যদি কোনো কিছু থাকে তাহলে সেটা হলো- গোনাহ পরিত্যাগ করা। যখন কোনো মানুষ গোনাহ করে, তখন এ গোনাহটি তাকে ঘিরে রাখে এবং গোনাহের ফলে তাকে দুশ্চিন্তা ও দুর্ভাবনা পেয়ে বসে। সে গোনাহের কারণে তার চিন্তাধারা ভিন্নধারায় মশগুল থাকে। এভাবে এ দুশ্চিন্তা তার অনুভূতির ওপর আধিপত্য বিস্তার করে এবং তাকে অনেক কল্যাণকর কাজ থেকে দূরে রাখে। এর মধ্যে মুখস্থশক্তি অন্যতম।
দুই. অধিক হারে আল্লাহর জিকির করা। যেমন- সুবহানাল্লাহ, আলহামদুলিল্লাহ, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ, আল্লাহু আকবার ইত্যাদি পড়া। এ প্রসঙ্গে কোরআনে কারিমে ইরশাদ হয়েছে, ‘যখন ভুলে যান; তখন আল্লাহর জিকির করুন।’ -সূরা কাহাফ: ২৪
তিন. বেশি না খাওয়া। যেহেতু বেশি খাওয়া বেশি ঘুম, নির্বুদ্ধিতা, স্মৃতিশক্তির দুর্বলতা, অঙ্গপ্রত্যঙ্গের নির্জীবতা ও অলসতার কারণ। এছাড়াও বেশি খাওয়া অনেক শারীরিক রোগের কারণ।
চার. কোনো কোনো আলেম এমন কিছু খাবারের কথা উল্লেখ করেছেন, যেগুলো মুখস্থশক্তিকে বৃদ্ধি করে। যেমন- মধু ও কিসমিস খাওয়া। ইমাম যুহরি বলেন, মধু স্মৃতিশক্তির জন্য ভালো। তিনি আরও বলেন, যে হাদিস মুখস্ত করতে চায়; সে যেন কিসমিস খায়।
অনেক আলেম বলেন, অম্লজাতীয় খাবার স্মৃতিশক্তির জড়তা ও মুখস্তশক্তির দুর্বলতা বাড়াতে সহায়তা করে।