g একুশের দিনে বইমেলায় মানুষের স্রোত | AmaderBrahmanbaria.Com – আমাদের ব্রাহ্মণবাড়িয়া

শুক্রবার, ৪ঠা আগস্ট, ২০১৭ ইং ২০শে শ্রাবণ, ১৪২৪ বঙ্গাব্দ

একুশের দিনে বইমেলায় মানুষের স্রোত

AmaderBrahmanbaria.COM
ফেব্রুয়ারি ২১, ২০১৬

---

gggggশাহবাগ মোড় পেরিয়ে চারুকলা অনুষদের উল্টো পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন আসফিয়া রহমান। সঙ্গে ছোট মেয়ে ও ভাই। গন্তব্য বইমেলা। ছবির হাট পার হয়ে টিএসসির কাছাকাছি যেতেই পুরনো দিনের বান্ধবীর সাথে দেখা। তার বান্ধবী আসছেন বিপরীত দিক থেকে। তিনি আসফিয়াকে জানালেন, মেলার ঢোকার লাইনে দাঁড়াতে হবে। কিন্তু সেই লাইন তারা দু’জনেই ছাড়িয়ে এসেছেন। বাধ্য হয়ে বান্ধবীর সাথে উল্টো দিকে আবার হাঁটতে লাগলেন। কেননা বইমেলায় প্রবেশের লাইন টিএসসি পার হয়ে গেছে। এটি আজ ২১ ফেব্রুয়ারি রোববার বইমেলার ফটকের বাইরের চিত্র। আজ বইমেলায় কাল যেন বইছে মানুষের স্রোত! হাজার হাজার মানুষের মিলনমেলায় পরিণত হয়েছে প্রাণের মেলা। প্রকাশক কি লেখক, সবাই এই দিনের অপেক্ষায় থাকেন। আর পাঠক বা বইপ্রেমীরাও এক ঢিলে দুই পাখি মারেন। কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারেও ঘোরাফেরা হলো, বইমেলা থেকেও বই কেনা হলো। তারউপর সরকারি ছুটির দিন থাকায় দেশের নানান প্রান্ত থেকে অনেকেই আসছেন বইমেলায়, প্রাণের টানে। বইয়ের গন্ধ নিতে। আসফিয়া রহমান বলেন, ‘গাজীপুর থেকে এসেছি। ছেলেমেয়েদের পড়াশোনার কারণে আসতে পারি না।

আজ রাস্তায় যানজট নেই। ছেলের স্কুল বন্ধ, আমারও ছুটি, তাই চলে এলাম’। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক এই ছাত্রী জানান, তার ছেলের প্রিয় লেখক মুহম্মদ জাফর ইকবাল। ‘বলতে পারেন ছেলে আমার জাফর ইকবালের বইয়ের পোকা। আর কিছু বোঝে না’। যোগ করেন তিনি। পাশ থেকে তার বান্ধবী শর্মিলা আহমেদ বলেন, ‘বইমেলায় না এলে তবে ফেব্রুয়ারি মাসটা আমার পূর্ণ হয় না। আগে ভার্সিটিতে পড়ার সময় তো সারাদিনই থাকতাম। এখন চাকরি-সংসার ফেলে আসতে পারি না’। ততোক্ষণে তারা লাইনে দাঁড়িয়ে গেছেন। মেলায় মানুষের ঢল, প্রবেশের জন্য লম্বা লাইনে বইপ্রেমীরা। ছবি: ফোকাস বাংলা কয়েকটি লাইনে বইপ্রেমীরা মেলায় ঢোকার অপেক্ষায় রয়েছেন। ২১ ফেব্রুয়ারি মেলায় ভিড় হবে এটা চিরচেনা কথা। ২১ ফেব্রুয়ারি, যেদিন বাঙালি জাতির চেতনাকে জাগ্রত করে একটি ঘটনা। ১৯৫২ সালের এ দিনে সারাবিশ্ব বাঙালি জাতির সঙ্গে পরিচিত হয়। যারা মায়ের ভাষার জন্য নিজের প্রাণ বিলিয়ে দিতে একটুও পিছ পা হয়নি। তারা মাতৃভাষাকে সমুন্নত করেছে, বিশ্ব দরবারে বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্র ভাষার দাবি পৌঁছে দিয়েছে। বাংলাদেশ নামে তখন কোনো দেশ ছিল না পৃথিবীর বুকে। তবে ছিল বাংলা ভাষা আর বাঙালি জাতি। এই ভাষাকে নিজেদের সব কাজে ব্যবহার না করতে দিতে চলছিল ষড়যন্ত্র। তা বুঝতে দেরি হয়নি বাঙালির। গঠিত হয় সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ। নারী পুরুষ সবাই তাদের ভাষার জন্য এগিয়ে আসে। দানা বাঁধতে থাকে ষড়যন্ত্রের শেকলের বিরুদ্ধে। বিশেষ করে তখনকার ছাত্রসমাজ।

বায়ান্নের ২১ ফেব্রুয়ারি তারা পূর্ব পাকিস্তানে (বর্তমান বাংলাদেশ) সভা, হরতাল, বিক্ষোভ মিছিলসহ বিভিন্ন কর্মসূচির ঘোষণা দেয়। সেদিনই বিকালে ছিল গণপরিষদের অধিবেশন। বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার জন্য স্মারকলিপি প্রদানের উদ্দেশ্যে গণপরিষদের দিকে মিছিল নিয়ে যাওয়ার কর্মসূচিও ছিল। ছাত্রসমাজের এমন কর্মসূচিতে বিচলিত বোধ করে সরকার। সরকার ২০ ফেব্রুয়ারি থেকে এক মাসের জন্য ১৪৪ ধারা জারি করে আন্দোলন দমনের চেষ্টা করে। কিন্তু ২১ ফেব্রুয়ারি ছাত্রছাত্রীরা সকাল থেকেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আমতলায় জমায়েত হতে থাকে। তারা ১৪৪ ধারা ভেঙে ভাষা আন্দোলনকে আরও জোরদার করতে চায়। তারা মিছিল বের করলে পুলিশ গুলি চালায়। সেদিন প্রাণ দিয়ে শহীদ হয়েছেন রফিক, বরকত, সালাম, জব্বার, শফিউরসহ অনেকে। বাঙালি জাতির শেকড়ের অনুপ্রেরণার দিন এই ২১ ফেব্রুয়ারি। পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন আন্দোলনের শক্তি যোগায় এই ভাষা আন্দোলন। এমন কি মহান মুক্তিযুদ্ধের পেছনেও এর ভূমিকা কম নয়। তাই আমাদের ২১ ফেব্রুয়ারি কখনও ভুলবার নয়। আমাদের জীবনের সাথে মিশে একাকার হয়ে আছে এই দিন।

২১ ফেব্রুয়ারিকে কেন্দ্র করে ফেব্রুয়ারি মাস ইতিহাসের পাতায় এক উজ্জ্বল মাস হিসেবে নাম লেখায়। আর এ মাসেই এখন হচ্ছে বাঙালি সংস্কৃতির এক জাগরণ বইমেলা। এখন অমর একুশে বইমেলা বলতেই আমরা ২১-কে বুঝি। কিংবা ২১ বলতে এই বইমেলা। তাছাড়া এ দিনে বইমেলায় নামে মানুষের স্রোত। সকাল থেকে সন্ধ্যা অবধি এই স্রোত বহমান রয়েছে। বইয়ের বিক্রি চলছে প্রচুর। স্টল প্রতিনিধিদের কথা বলারও ফুসরত নেই। ক্রেতাকে সামলাতেই ব্যস্ত তারা। একুশের দিনে মেলায় জনস্রোত। ছবি: ফোকাস বাংলা সাহস পাবলিকেশন্সের প্রতিনিধি তারেক জানান, সকাল থেকেই বই বাড়ছে। তবে অনেকেই মেলার ভেতরে আসছে না। সামনের দিকে ঘুরেফিরে বই কিনে ফেরত যাচ্ছেন। বইমেলা জমে উঠেছে সেই সকাল থেকেই। শহীদ মিনারে শ্রদ্ধাঞ্জলি জানানোর পরপরই তারা চলে আসেন মেলায়। মেলায় প্রবেশের যে ভিড়, তা মেলা থেকে শুরু করে শাহবাগ পর্যন্ত, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে, নীলক্ষেত, দোয়েল চত্বরেও ভিড় ছিল দেখার মতো। এসব এলাকায় তিল ধারণেরও জায়গা ছিল না। আর মেলায় প্রবেশের জন্য দাঁড়াতে হয়েছে লম্বা লাইনে। যেসব লাইন ছাড়িয়ে গেছে টিএসসি, দোয়েল চত্বর। দীর্ঘ সময় লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়েছে। তবুও কারো মাঝে ছিল না বিরক্তি। মেলায় আসতে পেরেই তাদের মুখে ছিল আনন্দ। উৎসাহ উদ্দীপনায় টইটম্বুর ছিল সকলের মুখ।

এ জাতীয় আরও খবর