আদালত এলাকায় নিরাপত্তাবলয়
---
চট্টগ্রামে ১০ ট্রাক অস্ত্র মামলার রায় ঘোষণাকে কেন্দ্র করে আদালত ভবন ও আশপাশের এলাকায় নিরাপত্তাবলয় তৈরি করা হয়েছে। ছবি: সৌরভ দাশচট্টগ্রামে ১০ ট্রাক অস্ত্র আটক ও চোরাচালান মামলার রায় ঘোষণাকে কেন্দ্র করে আজ বৃহস্পতিবার আদালত এলাকায় নিরাপত্তাবলয় তৈরি করা হয়েছে। মূল আদালত ভবনের সামনে র্যাব-পুলিশ সতর্ক অবস্থান নিয়েছে। চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারসহ নগরজুড়ে নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে।
আদালতের প্রবেশপথে আইনশৃক্সখলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা তল্লাশি চালিয়ে সংশ্লিষ্টদের ভেতরে ঢুকতে দিচ্ছেন। আদালত ভবনের তৃতীয় তলায় বিশেষ ট্রাইব্যুনাল-১-এর বিচারকের এজলাস ঘিরেও নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে।
নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার মো. রেজাউল মাসুদ প্রথম আলোকে জানান, শুধু আদালত ভবন ঘিরেই ২০০ পুলিশ সদস্য মোতায়নে রয়েছেন।
সকাল সাড়ে নয়টা পর্যন্ত কারাগার থেকে মামলার আসামিদের আদালতে হাজির করা হয়নি। বিচারকও এসে পৌঁছাননি। আদালতের বাইরে প্রচুর সংখ্যক উৎসুক মানুষের ভিড় লক্ষ করা গেছে।
২০০৪ সালের ১ এপ্রিল নগরের চট্টগ্রাম ইউরিয়া সার কারখানার (সিইউএফএল) জেটিঘাটে খালাসের সময় দেশের ইতিহাসে অস্ত্রের সবচেয়ে বড় চালান আটক হয়। ওই ঘটনায় দায়ের হওয়া অস্ত্র আটক ও চোরাচালান মামলার রায় আজ ঘোষণা করা হবে। ঘটনার প্রায় পৌনে ১০ বছর পর চাঞ্চল্যকর এ মামলার রায় ঘোষণা করা হচ্ছে। চট্টগ্রামের বিশেষ ট্রাইব্যুনাল-১-এর বিচারক এস এম মজিবুর রহমান এ রায় ঘোষণা করবেন।
এ মামলার আসামিদের মধ্যে রয়েছেন সাবেক শিল্পমন্ত্রী ও জামায়াতে ইসলামীর আমির মতিউর রহমান নিজামী, সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, সাবেক শিল্পসচিব নুরুল আমিন, গোয়েন্দা সংস্থা ডিজিএফআই ও এনএসআইয়ের সাবেক মহাপরিচালকসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা, সিইউএফএলের কর্মকর্তারা এবং ভারতের বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন উলফার সামরিক কমান্ডার পরেশ বড়ুয়া।
নুরুল আমিন, পরেশ বড়ুয়াসহ মামলার কয়েকজন আসামি পলাতক। রায় ঘোষণা উপলক্ষে গতকাল বুধবার সন্ধ্যা সাতটার দিকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে নিজামী ও বাবরকে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে নেওয়া হয়।
অস্ত্র আটকের ঘটনায় ২০০৪ সালের ৩ এপ্রিল কর্ণফুলী থানায় ১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইনের ২৫(বি) ধারায় একটি এবং ১৮৭৮ সালের ১৯(এ) ধারায় অস্ত্র আইনে অপর একটি মামলা করা হয়। দুটি মামলারই বাদী কর্ণফুলী থানার তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আহাদুর রহমান। এ মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি মহানগর পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) কামাল উদ্দিন আহাম্মদ গতকাল বুধবার প্রথম আলোকে বলেন, ‘দুই মামলায় আসামিদের বিরুদ্ধে ৫৬ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ করেছেন আদালত। এ ছাড়া সাক্ষী ও আসামিদের ১৬৪ ধারায় জবানবন্দিও রয়েছে। সাক্ষ্যে উঠে এসেছে, আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে উলফার জন্য বাংলাদেশের জলসীমা ব্যবহার করে অস্ত্রগুলো নিয়ে এসেছে। রাষ্ট্রপক্ষ আশাবাদী, সাক্ষ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে আসামিদের সর্বোচ্চ সাজা দেবেন আদালত।
আদালত সূত্র জানায়, ১০ ট্রাক অস্ত্র আটক ও চোরাচালান মামলায় ২০০৪ সালের ১১ জুন ৪৪ জনের বিরুদ্ধে প্রথম দফা অভিযোগপত্র দাখিল করে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আবার তদন্ত হয়। ওই বছরের ২৫ আগস্ট স্থানীয় চোরাচালানি হাফিজুর রহমান, দীন মোহাম্মদসহ ৪১ জনের বিরুদ্ধে সম্পূরক অভিযোগপত্র দাখিল করে সিআইডি। অভিযোগপত্রভুক্ত বাকি আসামিদের বেশির ভাগ ছিলেন শ্রমিক, মাঝিমাল্লা। মামলা দুটির বিচার কার্যক্রম শুরু হয় এবং দুই মামলায় ৩১ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ করেন আদালত।
২০০৭ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত সাতটি ত্রুটি চিহ্নিত করে অধিকতর তদন্তের নির্দেশ দেন। তদন্ত শেষে ২০১১ সালের ২৬ জুন সিআইডির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মনিরুজ্জামান চৌধুরী দুই মামলায় নিজামী, বাবরসহ নতুন ১১ জনকে আসামি করে সম্পূরক অভিযোগপত্র দেন। এতে অস্ত্র আটক মামলায় ৫০ জন এবং চোরাচালানের মামলায় ৫২ জনকে আসামি করা হয়। ওই বছরের ১৫ নভেম্বর নতুন ১১ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয় এবং ২৯ নভেম্বর সাক্ষ্য গ্রহণ শুরু হয়। অস্ত্র আটক মামলায় ৫৬ এবং চোরাচালান মামলায় ৫৩ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করেন আদালত। চলতি বছরের ১৩ জানুয়ারি রাষ্ট্রপক্ষ ও আসামিপক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে আজ (৩০ জানুয়ারি) রায় ঘোষণার দিন ধার্য করেন আদালত।
বাদীকে আবার জেরার অনুমতি ও আদালত পরিবর্তনের জন্য হাইকোর্টে তিন আসামির করা চারটি আবেদন ২৭ জানুয়ারি খারিজ হয়।
কারাগারে থাকা আসামিরা: আসামিদের মধ্যে কারাগারে আটক আছেন মতিউর রহমান নিজামী, লুৎফুজ্জামান বাবর, প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা মহাপরিদপ্তরের (ডিজিএফআই) সাবেক মহাপরিচালক মেজর জেনারেল (অব.) রেজ্জাকুল হায়দার চৌধুরী, জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থার (এনএসআই) সাবেক মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) মো. আবদুর রহীম, পরিচালক উইং কমান্ডার (অব.) সাহাব উদ্দিন আহাম্মদ, উপপরিচালক মেজর (অব.) লিয়াকত হোসেন, এনএসআইয়ের মাঠ কর্মকর্তা আকবর হোসেন খান, সিইউএফএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মহসিন উদ্দিন তালুকদার, মহাব্যবস্থাপক (প্রশাসন) কে এম এনামুল হক, হাফিজুর রহমান ও দীন মোহাম্মদ।
জামিনে যাঁরা: আসামিদের মধ্যে জামিনে আছেন মজিবুর রহমান, শেখ আহাম্মদ, বশর মিয়া, বাদশা, কামাল মিয়া, মোহাম্মদ জসিম, মোহাম্মদ আক্তার, মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর, মরিয়ম বেগম, মোহাম্মদ আজিজ, কবির আহাম্মদ, মোহাম্মদ রফিক, মনির আহমদ, আবদুল মালেক, মঞ্জুরুল আলম, ফিরোজ আহমেদ, সাইফুদ্দিন, এজাহার মিয়া, ফজল আহমদ, আকবর আলী, ছালে জহুর, সানোয়ার হোসেন, দিলদার হোসেন, নুরুল আবছার, আবদুল মান্নান, ওসমান গনি ও হাজি আবদুস সোবহান।
পলাতক: পলাতক রয়েছেন পরেশ বড়ুয়া, সাবেক শিল্পসচিব নুরুল আমিন, মোহাম্মদ সোবহান, শাহ আলম, আবদুস সবুর, শাহজাহান, আবদুর রহিম মাঝি, বাবুল মিয়া, হেলাল উদ্দিন, সিরাজুল ইসলাম, নূর নবী ও প্রদীপ কুমার দাশ।
এ ছাড়া মামলার বিচার চলাকালে আসামি মনির আহমদ, ইয়াকুব আলী, আতাউর রহমান ও আবুল কাশেম মারা গেছেন। প্র.আ