g কোরবানির মাংস বুঝেশুনে খান | AmaderBrahmanbaria.Com – আমাদের ব্রাহ্মণবাড়িয়া

বুধবার, ৬ই সেপ্টেম্বর, ২০১৭ ইং ২২শে ভাদ্র, ১৪২৪ বঙ্গাব্দ

কোরবানির মাংস বুঝেশুনে খান

AmaderBrahmanbaria.COM
সেপ্টেম্বর ১, ২০১৭

---

লাল মাংস বা রেড মিট শরীরের জন্য কতটা ক্ষতিকর তা আমরা সবাই জানি। কিন্তু কোরবানির মাংসে রেড মিটের বিকল্প নেই বললেই চলে। রেড মিটে প্রচুর পরিমাণ স্যাচুরেটেড ফ্যাট থাকে, যা মানবদেহের স্থূলতা বৃদ্ধি করতে দায়ী। এ ছাড়াও রক্তনালিতে চর্বি জমানোসহ হৃদযন্ত্রের স্বাভাবিক রক্তপ্রবাহকে ব্যাহত করা, রক্তচাপ বাড়ানো, স্টোক ও হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বাড়াতেও এই ফ্যাট মুখ্য ভূমিকা পালন করে। এ ছাড়াও স্তন ক্যান্সার ও কোলন ক্যান্সারের কারণ হিসেবেও রেড মিটের দুর্নাম রয়েছে। তাই ঈদে যতই মজাদার মাংসের পদ থাকুক না কেন, খেতে হবে পরিমাণমতো। ডায়াবেটিস, রক্তচাপ বা হৃদরোগে ভুগছেন যারা, তাদের জন্য চাই বিশেষ সতর্কতা। বিশেষজ্ঞদের মতে, দিনে মোট আহারের ৩০ শতাংশের বেশি চর্বিযুক্ত খাবার খাওয়া শরীরের জন্য ক্ষতিকর।

কোরবানির মাংস সাধারণত একটু বেশিই খাওয়া হয়। অনেকেই একসঙ্গে এত তৈলাক্ত খাবার হজম করতে পারেন না। যার ফলে পেটের পীড়ায় ভুগতে হয়। তা ছাড়াও পেট ফাঁপা, জ্বালাপোড়া করা, ব্যথাও ভোগাতে পারে আপনাকে। পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান না করলে কোষ্ঠকাঠিন্য কষ্ট দিতে পারে। তাই বারবার প্রচুর পরিমাণে পানি পান করুন।

পোলাও, কোরমা, বিরিয়ানি, কাবাব, রেজালাসহ চটপটি, দইবড়া, বোরহানি ইত্যাদি সকালে ও দুপুরে পরিহার করাই উত্তম। সকালে যতটা সম্ভব হালকা খাবারই আপনাকে রাখতে পারে সুস্থ। ঈদের দিন সকালে কিশমিশ, বাদামে ভরপুর সেমাই-ই হতে পারে আদর্শ খাবার।

আপনার খাদ্য তালিকায় রাখতে পারেন কোনো টাটকা ফলের জুস অথবা ডাবের পানি। তবে বাজারে পাওয়া জুস এড়িয়ে চলার চেষ্টা করুন। কারণ এগুলোর বেশিরভাগই ভেজালে ভরপুর। দীর্ঘদিন এসব জুস পানে পাকস্থলীর মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে। সঙ্গে শরবত এবং ইসবগুলের ভুসিও রাখতে পারেন। রান্নার স্বাদ বাড়াতে অতিরিক্ত পরিমাণ তেল ও চর্বির ব্যবহার থেকে বিরত থাকতে হবে। মাংসের সঙ্গে মাছ ও সবজির একটি প্রকরণ আপনাকে রাখতে পারে সুস্থ। তাই ফ্রিজের মাছগুলোকে একদম অবহেলা না করে তৈরি করতে পারেন একটি ডিশ। আর বাড়তি সতর্কতার জন্য হাতের কাছে রাখতে পারেন কিছু প্রয়োজনীয় ওষুধ।

 

চর্বি ফেলে দিয়ে মাংস খান
কসাইয়ের কাছে থেকে মাংস আনার পর দেখা যায় মাংসে প্রচুর চর্বি থাকে। ওজন বাড়া এবং বিভিন্ন রোগ বেড়ে যাওয়ার জন্য কিন্তু এই চর্বিই দায়ী। এসব কারণে মাংস থেকে কেটে ফেলে দিন যতটা সম্ভব।
অতিরিক্ত তেল-চর্বি দিয়ে রান্না করবেন না
মাংস রান্নার সময় অতিরিক্ত তেল-চর্বি না দিয়েই রান্না করার চেষ্টা করুন। চর্বি ফেলে দেওয়ার পরও মাংসের ভেতরে যতটা চর্বি থাকে তা রান্নার জন্য যথেষ্ট। এতে আরও চর্বি বা তেল যোগ করলে রান্না হয়তো মজা হবে, কিন্তু স্বাস্থ্যের হবে ক্ষতি।

বেশি করে সবজি খান মাংসের সঙ্গে
কোরবানি এলেই যে সবজি খাওয়া বাদ দিতে হবে তা কিন্তু নয়। বরং সুষম খাদ্যাভ্যাস বজায় রাখার জন্য অনেকটা সবজি খাবেন প্রতিবার মাংস খাওয়ার সময়। খেতে পারেন সালাদ অথবা সবজির তরকারি। মাংসের সঙ্গেও সবজি দিয়ে রান্না করতে পারেন।

কিমা থেকে ঝরিয়ে ফেলুন চর্বি
বেশ কয়েকটি উপায়ে কিমা থেকে চর্বি সরিয়ে ফেলতে পারেন। কড়াইতে কিমা একটু ভেজে নিন, এতে চর্বিটা গলে বের হয়ে আসবে। এই চর্বিটুকু কড়াই কাত করে ফেলে দিন। এ ছাড়াও ঝাঁঝরি চামচে করে মাংস তুলে নিতে পারেন, এতে চর্বিটা আলাদা হয়ে যাবে। মাংসটুকু তুলে পেপার টাওয়েল দিয়ে শুষে নিতে পারেন চর্বিটুকু। এ ছাড়াও গরম পানি ব্যবহার করতে পারেন। একটি ঝাঁঝরি বোলে নিন মাংসের কিমাটুকু। এরপর প্রায় ফুটন্ত গরম পানি ঢালতে থাকুন এর ওপরে। পানির সঙ্গে চর্বিটুকু গলে চলে যাবে। পানি ঢেলে দেওয়ার পর পাঁচ মিনিট ধরে পানিটা ঝরিয়ে নিন।
অতিরিক্ত খাবেন না

দৈনিক কিছু পরিমাণ প্রোটিন খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্যই জরুরি। কিন্তু অতিরিক্ত খাওয়া যাবে না। অনেকে মনে করেন কোরবানির সময়টাতেই বেশি করে খেয়ে নেবেন। তা না করাই ভালো। দৈনিক ৯০ গ্রামের বেশি মাংস না খাওয়ার চেষ্টা করুন।

ডা. ফারুক আহমেদ
সহযোগী অধ্যাপক
লিভার বিভাগের বিভাগীয় প্রধান
ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল