বাসরঘরে তিন দিন স্বামীকে বেঁধে রাখলেন স্ত্রী! এরপর…..
মাত্র ২৫ দিন আগের বাসররাতের স্মৃতি এখন তাড়িয়ে বেড়ায় মেয়েটিকে (১৯)। গায়েহলুদের গন্ধ যায়নি, মেহেদির রং মোছেনি। এর মধ্যেই তিনি জানতে পারেন, যাকে তিনি স্বামী হিসেবে পেয়েছেন, সে জীবনসঙ্গী নয়, প্রতারক। এই ব্যক্তি আগেও একাধিক বিয়ে করেছে। তাকেও টাকার লোভে বিয়ে করেছে। এরই মধ্যে ৩৫ হাজার টাকা নিয়ে লাপাত্তা হয়। এ অবস্থায় স্বামীকে কৌশলে ডেকে এনে সেই বাসরঘরেই শিকলে বেঁধে রেখেছেন। উপযুক্ত বিচারের আশায় তিনি এ কাজ করলেও গতকাল বৃহস্পতিবার পর্যন্ত তিন দিনেও স্বামীর পরিবারের কেউ আসেনি। শেষ পর্যন্ত গতকাল রাতে পুলিশ গিয়ে ওই ব্যক্তিকে আটক করে থানায় নিয়ে যায়।
স্থানীয় সূত্র জানায়, প্রতারণার শিকার মেয়েটির বাড়ি নান্দাইল পৌরসভার চারআনিপাড়া মহল্লা। এক লাখ ৭০ হাজার টাকার দেনমোহরে গত ২৩ সেপ্টেম্বর তাঁর বিয়ে হয় কিশোরগঞ্জ জেলার বাজিতপুর উপজেলার পিরোজপুর গ্রামের মৃত মতি মিয়ার ছেলে আলী আকবরের (২৫) সঙ্গে। বিয়ের তিন দিন পর যৌতুকের ৩৫ হাজার টাকা নিয়ে লাপাত্তা হয়ে যায় বর আলী আকবর। পরে অনেক খোঁজ করেও তার কোনো সন্ধান পাওয়া যায়নি। একপর্যায়ে ফোন করে কৌশলে তাকে (বর) বাড়িতে আনতে সক্ষম হন ওই নারী।
খবর পেয়ে গতকাল সকালে নান্দাইলের চারআনিপাড়া মহল্লায় মেয়েটির বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, বসতঘরের বারান্দায় আলাদা একটি কক্ষে বর আলী আকবরকে কোমরে শিকল বেঁধে সিমেন্টের খুঁটির সঙ্গে আটকে রাখা হয়েছে। এই কক্ষেই তাদের বাসর সাজানো হয়েছিল।
মেয়ের বাবা জানান, স্থানীয় মো. জালাল উদ্দিনের কথায় মেয়েটিকে বিয়ে দেওয়া হয় ধুমধাম করে। এ সময় বরের কোনো অভিভাবক না এলেও তার (জালাল) কথার ওপর ভিত্তি করে এই বিয়েতে রাজি হন। কিন্তু বিয়ের তিন দিন পর যৌতুকের টাকা নিয়ে লাপাত্তা হয়ে যাওয়ার পর খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বর আলী আকবর আরো দুটি বিয়ে করেছে। প্রথম স্ত্রী চলে গেলেও দ্বিতীয় স্ত্রীর সঙ্গে সংসার করছে সে। ওই সংসারে রয়েছে দুটি সন্তান। দ্বিতীয় সন্তান জন্মের দিন সে তৃতীয় বিয়ে করে।
মেয়েটির বাবা আরো জানান, তাঁর মেয়েকে ফেলে চলে যাওয়ার পর তার (বর) সন্ধান করতে বাজিতপুর উপজেলার পিরোজপুর গ্রামে গিয়েও তাকে পাওয়া যায়নি। পরে তার মোবাইল নাম্বার সংগ্রহ করে মেয়েকে দিয়ে বলা হয় তার (বর) চাহিদার আরো ৩০ হাজার টাকা নিয়ে যাওয়ার জন্য। এই ফাঁদে ফেলে গত মঙ্গলবার বাড়িতে এনে আটকে রাখা হয়। তিনি বলেন, ‘আমার মেয়ের মহা সর্বনাশ করেছে সে। এখন তার পরিবারের লোকজন এসে একটা ফয়সালা করে তাকে ছাড়িয়ে নিতে হবে। অন্যথায় থানায় অভিযোগ দেব।’
এ বিষয়ে বর আলী আকবর এর আগেও আরো দুটি বিয়ে করার কথা স্বীকার জানায়, সে আতর আলী নামের এক ঘটকের ফাঁদে পড়ে আগে বিয়ে করার কথা গোপন করে এই বিয়েটি করেছে। এই বিয়ের জন্য ঘটককে ১৫ হাজার টাকা দিতে হয়েছে। আলী আকবর বলে, ‘আমি ভুল করেছি। আমার এক বছর বয়সের ছেলে ও ২৫ দিন বয়সের এক কন্যাসন্তান রয়েছে।’ এখন তাকে ক্ষমা করে দিলে নতুন স্ত্রীকে নিয়ে সে সংসার করবে বলে জানায়।
প্রতারণার শিকার পাগলপ্রায় মেয়েটি কাঁদতে কাঁদতে বলেন, ‘এই প্রতারকের ঘর আমি করতাম না। আমার তো সব শেষ। আমি এর (বর) বিচার চাই। বিচার না করলে এই জীবন রাখতাম না।’
নান্দাইল থানার ওসি কামরুল ইসলাম গতকাল রাত ৮টায় কালের কণ্ঠকে জানান, কিছুক্ষণ আগে পুলিশ গিয়ে প্রতারক আলী আকবরকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসে। থানায় অভিযোগ দিতে সঙ্গে প্রতারণার শিকার মেয়ে ও তাঁর বাবা থানায় আসেন। মামলা প্রক্রিয়াধীন।