‘ওঁর হাতটা আমার পিঠে ওঠানামা করছিল…’
চারদিকে শুধু অভিযোগ আর অভিযোগ। একদিকে নামী সব অভিনেত্রীরা অভিযোগ করছেন অন্যদিনে ফেঁসে যাচ্ছেন গুণী সব পরিচালক- প্রযোজক ও অভিনেতারা। মেয়েদের যৌন কেলেঙ্কারি নিয়ে একের পর এক মুখ খুলছেন অভিনেত্রীরা। বাদ যাননি দীপিকা পাডুকোন, ঐশ্বরিয়া রায় বচ্চনের মতো অভিনেত্রীরাও। এছাড়া এ তালিকায় আরও রয়েছেন বঙ্গকন্যে তনুশ্রী দত্ত, অনন্যা বিশ্বাস, কারিশমা শর্মা, ঐশ্বরিয়া রায় বচ্চন, কঙ্গনা রানাউত, নয়নী দীক্ষিত, সোনা মহাপাত্র, আলোকনাথ, কঙ্গনা রানাউত, কেট শর্মা মতো অনেকেই।
এরই মধ্যে এক অভিনেত্রী শাহরুখের ঘনিষ্ট বন্ধু করিমের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ আনেন। তারপরেই অভিযুক্ত অভিনেতাদের তালিকায় নাম উঠে ভাইজান নামে খ্যাত সালমান খানের। ভাইজানের বিরুদ্ধে অভিযোগ আছে পূজা মিশ্রা নামের এক মডেল-অভিনেত্রী। তার অভিযোগ সালমান খান তাকে অচেতন অবস্থায় ধর্ষণ করেন। একাধিকবার তিনি এমন ঘটনার শিকার হয়েছেন।
#মিটু-র কাঠগড়ায় দাড়াতে হয়েছিল ছবির পরিচালক বিপুল অমৃতলাল শাহও। তাঁর বিরুদ্ধে যৌন হেনস্থার অভিযোগ তুলেন ইরানি অভিনেত্রী ইলনাজ নরৌজি। তাঁর অভিযোগ, ‘নমস্তে ইংল্যান্ড’ ছবিতে সুযোগ দেওয়ার কথা বলে অডিশনের নাম করে বার বার তাঁর যৌন হেনস্থা করেছেন পরিচালক। কখনও জড়িয়ে ধরা, কখনও বা চুমু খাওয়ার চেষ্টা করেছেন।
‘মিড ডে’ ম্যাগাজিনে একটি কলাম লিখেছেন ইলনাজ। সেখানেই তিনি বিপুল শাহর সঙ্গে নিজের তিক্ত অভিজ্ঞতার কথা লিখেছেন অভিনেত্রী।এবার #মিটু আন্দোলনে ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির নতুন একটি নাম যোগ হলো। এ বার ৫৪ বছরের এক দক্ষিণী অভিনেতার বিরুদ্ধে যৌন হেনস্তার অভিযোগ আনলেন ২৯ বছরের অভিনেত্রী।অভিনেত্রী শ্রুতি হরিহরণ ঠিক দু’বছর আগের একটি ঘটনার কথা সামনে এনেছেন। দক্ষিণী অভিনেতা অর্জুন সারজা অভিনয়ের সুযোগে কী ভাবে তাঁকে যৌন হেনস্তা করেছিলেন শনিবার নিজের ফেসবুক পোস্টে সে কথা সকলের সঙ্গে শেয়ার করেছেন তিনি।
শ্রুতি ফেসবুক পোস্টে লেখেন, ‘তখন সবে ডায়ালগ বলা শুরু হয়েছিল। ছবিতে আমি তাঁর স্ত্রী। স্বামী-স্ত্রীর কিছু সংলাপ ছিল। কিন্তু সংলাপের বাইরে গিয়ে নিজেই আলাদা স্ক্রিপ্ট সাজিয়ে ফেলেন। সংলাপ চলাকালীনই সবাইকে অবাক করে আমাকে জড়িয়ে ধরেন। গায়ের জোর ফলিয়ে টেনে আমার শরীরটাকে একেবারে নিজের কাছে নিয়ে আসেন। তাঁর হাতদুটো আমার পিঠে ওঠানামা করছিল। আমি বুঝতে পারছিলাম কিন্তু কিছুই বলতে পারছিলাম না। এরপর পরিচালককে অর্জুন ফিল্মের এই অংশে একটি ফোরপ্লে-র দৃশ্যও রাখতে বলেন।’
অত্যন্ত বিস্মিত হয়েছিলেন শ্রুতি। কিন্তু অর্জুন সারজা বিষয়টা এমন ভাবে সকলের কাছে উপস্থাপন করেছিলেন, যেন সবটাই তিনি অভিনয়ের স্বার্থে করছেন। অভিনয়টাকে আরও সাবলীল করার জন্য। সেই মুহূর্তে তাই কিছু বলতে পারেননি বলে দাবি করেন শ্রুতি।ছোটবেলা থেকে যাঁর ছবি দেখে বড় হয়েছেন, তাঁর সঙ্গে অভিনয়ের সুযোগ পেয়েছেন, এটা ভেবে প্রথম থেকেই খুব উত্তেজিত ছিলেন শ্রুতি। কিন্তু অভিনেতাকে নিয়ে তাঁর ভুল এ ভাবে ভাঙবে তা তিনি কল্পনাও করতে পারেননি।
সে দিন মেকআপ আর্টিস্ট এবং সেটের কয়েক জনকে অর্জুনের অসৎ উদ্দেশ্যের কথা বলেছিলেন বলেও জানান তিনি। তবে বৃহৎ পরিসরে প্রতিবাদ করার সাহস পাননি। #মিটু আন্দোলনই তাঁকে সেই সাহস জুগিয়েছেন বলে ফেসবুকে জানান তিনি।শ্রুতি লেখেন, ‘এই ঘটনা প্রকাশ্যে আনার সিদ্ধান্ত নিই, কারণ আমার মনে হয়েছে অর্জুনের বোঝা উচিত, দু’জন অভিনেতার মধ্যে যে সুক্ষ্ণ লাইনটা থাকে, তা অতিক্রম করা উচিত নয়। ক্ষমতা জাহির করে এমন কাজ করা উচিত নয়, তা অন্যকে আঘাত দেবে। #মিটু আন্দেলন আমাকে শক্তি দিয়েছে, আমাকে বুঝতে শিখিয়েছে যে, কোনও পুরুষই একজন মহিলার ব্যক্তিগত পরিসরে হস্তক্ষেপ করতে পারেন না।’
তিনি আরও লিখেছেন, ‘এই ইন্ডাস্ট্রি (ফিল্ম) আমাকে অনেক কিছু দিয়েছে। আমার স্বপ্নপূরণে সাহায্য করেছে। এত কিছুর পরেও এটা বলতে আমার কষ্ট হচ্ছে যে, অনেক সময়ই আমি ভীষণ অসুরক্ষিত, হতাশ অনুভব করি।’যাঁর বিরুদ্ধে এই অভিযোগ, সেই অর্জুন সারজা অবশ্য ফুৎকারে উড়িয়ে দিয়েছেন যাবতীয় অভিযোগ। তামিল, তেলুগু এবং কন্নড় ভাষায় ১৫০টিরও বেশি ছবিতে অভিনয় করা অর্জুন তাঁর বিরুদ্ধে আনা যৌন হেনস্তার অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা বলে জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন অভিযোগ। আমি বিস্মিত।’