জয় নিয়ে মাঠ ছাড়লো বাংলাদেশ
ব্যাটসম্যানদের হয়ে ইমরুল কায়েস আর সাইফউদ্দিন তাদের কাজ করে দিয়েছেন ঠিকঠাক। দলকে জেতানোর দায়িত্ব ছিল বোলারদের ওপর। আর যেহেতু দেশের মাটিতে খেলা, তাই দুই বিশেষজ্ঞ স্পিনার মেহেদী মিরাজ আর নাজমুল ইসলাম অপুর দায়িত্ব ছিল একটু বেশি। দুজনেই তা সূঁচারু ভাবে পালন করলেন। প্রথম ম্যাচে ২৮ রানের সহজ জয় তুলে নিয়ে ৩ ম্যাচ সিরিজে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে গেল মাশরাফি বিন মুর্তজার দল।
মিরপুর শের-ই-বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে বাংলাদেশের দেওয়া ২৭২ রানের টার্গেটে ব্যাটিংয়ে নেমে দারুণ শুরু করে জিম্বাবুয়ে। ৪৮ রানের ওপেনিং জুটি ভাঙে মুস্তাফিজ জুয়াওকে (৩৫) বোল্ড করে দিলে। দলীয় ৫৯ রানে ‘নাগিন’ অপুর ঘূর্ণিতে প্যাভিলিয়নের পথ ধরেন অভিজ্ঞ ব্রেন্ডন টেইলর (৫)। ইমরুলের দুর্দান্ত থ্রো আর মুশফিকের দ্রুততায় অধিনায়ক মাসাকাজদা রান-আউট হন ২১ রান করে।
বাংলাদেশের স্পিন আক্রমণের মুখে নিয়মিত বিরতিতেই উইকেট হারাতে থাকে সফরকারীরা। বিপজ্জনক সিকান্দার রাজাকে মাত্র ৭ রানে বোল্ড করে দেন নাজমুল ইসলাম অপু। জিম্বাবুয়ের পঞ্চম উইকেটের পতন ঘটান মেহেদী মিরাজ। তার মায়াবী ঘূর্ণিতে বোল্ড হয়ে যান ক্রেইগ এরভিন। মিরাজের দ্বিতীয় শিকার হন জুটি গড়ার চেষ্টায় থাকা পিটার মুর (২৬)।
ডোনাল্ড ট্রিপানো (২) রান-আউট হয়ে গেলে সপ্তম উইকেটের পতন হয় জিম্বাবুয়ের। এরপর আবারও মেহেদী মিরাজের ঘূর্ণি। তারই নেওয়া দুর্দান্ত এক ক্যাচে প্যাভিলিয়নের পথ ধরেন ব্রেন্ডন মাভুতা (২০)। ১০ ওভারে ৪৬ রান দিয়ে এই অল-রাউন্ডার তুলে নেন ৩ উইকেট। মিডল অর্ডারে নেমে বেশ লড়াই করেন শেন উইলিয়ামস। নবম উইকেট জুটিতে কাইলি জার্ভিসকে নিয়ে পঞ্চাশোর্ধ রানের জুটি গড়েন।
৩২ বলে ৩ চার ২ ছক্কায় ৩৭ রান করা জার্ভিসকে ফিরিয়ে ৬৭ রানের এই জুটি ভাঙেন মাহমুদুল্লাহ। শেষ পর্যন্ত নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৯ উইকেটে ২৪৩ রানে থামে জিম্বাবুয়ে। ২৮ রানের জয় তুলে নিয়ে সিরিজে এগিয়ে গেল বাংলাদেশ। ৫৮ বলে ৫ চার ১ ছক্কায় ৫০ রানে অপরাজিত রইলেন শেন উইলিয়ামস। ম্যান অব দ্য ম্যাচ সেঞ্চুরিয়ান ইমরুল কায়েস।
এর আগে আজ রবিবার টসে জিতে ব্যাটিংয়ে নেমে ইমরুল কায়েসের সেঞ্চুরি আর সাইফউদ্দিনের দারুণ হাফ সেঞ্চুরিতে ভর করে ৫০ ওভারে ৮ উইকেটে ২৭১ রান তোলে বাংলাদেশ। সর্বশেষ ওয়ানডেতে ভারতের বিপক্ষে সেঞ্চুরি করা লিটন দাস আজ শুরু থেকে নড়বড়ে ছিলেন। চাতারার এক ওভারে ধস নামে বাংলাদেশের ব্যাটিং লাইনআপে। দুইবার জীবন পেয়েও ৬ষ্ঠ ওভারের প্রথম বলে ক্যাচ তুলে দেন ১৪ বলে ৪ রান করা লিটন।
শেষ বলে অভিষিক্ত রাব্বি ‘ডাক’ মেরে ফিরেন প্যাভিলিয়নে। ১৭ রানে ২ উইকেট হারানোর পর লিটনের ওপেনিং সঙ্গী ইমরুল কায়েস মুশফিকুর রহিমকে নিয়ে বিপদ সামাল দেওয়ার মিশনে নামেন। দুজনের জুটিতে ৪৯ রান আসার পর আবারও বিপদ। মাভুতার বলে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে ফিরে যান মুশফিক (১৫)। তার সঙ্গী হয়ে হাত খুলে মারতে থাকেন মোহাম্মদ মিঠুন। কিন্তু ১ চার ৩ ছক্কায় ৩৭ রানেই থামতে হয় তাকে। এরপর উইকেটে এসেই জার্ভিসের বলে ‘ডাক’ মেরে ফিরেন মাহমুদ উল্লাহ।
১৩৭ রানে ৫ উইকেট হারানোর পর দলকে ভরসা দিতে পারেননি মেহেদী হাসান মিরাজ। ২ রান স্কোরবোর্ডে যোগ হতেই ১ রান করে জার্ভিসের তৃতীয় শিকার হন তিনি। সঙ্গীহীন হয়ে পড়া ইমরুলকে সঙ্গ দিয়ে যান সাইফউদ্দিন। ৮ নম্বর ব্যাটসম্যানকে নিয়েই ১১৮ বলে ৮ চার এবং ৩ ছক্কায় ক্যারিয়ারের তৃতীয় সেঞ্চুরি তুলে নেন ইমরুল কায়েস। সেঞ্চুরির পর ইমরুলের ব্যাটে যেন আগুন ঝরতে থাকে। চাতারার করা ৪৬তম ওভারে দুই ছক্কা আর এক চার মারেন।
তার দেখাদেখি মারতে শুরু করেন সাইফউদ্দিনও। ১৪০ বলে ১৩ চার এবং ৬ ছক্কায় ১৪৪ রান করা ইমরুল জার্ভিসের বলে মুরের তালুবন্দি হলে ভাঙে ১২৭ রানের সপ্তম উইকেট জুটি। পাশাপাশি ৬৮ বলে ৩ চার ১ ছক্কায় ক্যারিয়ারের প্রথম হাফ সেঞ্চুরি তুলে নেন সাইফউদ্দিন। ঠিক ৫০ রানেই চাতারার বলে ক্যাচ তুলে বিদায় নেন তিনি। ইনিংসের তখন শেষ ওভার। মাশরাফি আজ বিগ হিট করার সুযোগ পাননি। নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৮ উইকেটে ২৭১ রান তুলে নিজেদের ইনিংস শেষ করে বাংলাদেশ।