মা বলতেন, আমার দুই ছেলে
চট্টগ্রামের জুবলি রোডে আমরা পাশাপাশি থাকতাম। আমি তখন ক্লাস এইট-নাইনে পড়ি। আমার চেয়ে বয়সে একটু বড়ই হবে বাচ্চু। ১৯৭৭ সালে প্রথম ব্যান্ড ‘রিদম ৭৭’ করি। চট্টগ্রামের হেন জায়গা নেই, যেখানে আমরা বাজাইনি। দুই বছর পর করলাম ‘ফিলিংস’। বাচ্চুও যোগ দেয়। আমরা তখন ইংরেজি ইনস্ট্রুমেন্টালই বেশি করতাম। ‘ফিলিংস’ প্রথম কাজ পায় আগ্রাবাদ হোটেলে। ওখানে বিদেশি অতিথিরাই বেশি থাকত। দীর্ঘদিন এই হোটেলে বাজিয়েছি। সেই সময় থেকেই আসলে বাচ্চু ওয়েস্টার্ন ঘরানার গিটার বাজানো শুরু করে। রাত করে ঘরে ফিরতাম। মা রান্না করে আমাদের খাওয়াতেন। মা বলতেন, আমার দুই ছেলে। মাকে এখনো বাচ্চুর মৃত্যুর খবরটা জানাইনি। মাঝেমধ্যে প্রায়ই ফোন করে ও বলত—দোস্ত, মাসিমাকে দেখতে আসব। আমাদের সম্পর্ক এমন ছিল যে আমরা পরস্পরকে ‘মামা’ বলে ডাকতাম।
আমি ঢাকায় চলে এলে ও তখন ‘সোলস’-এ গিটারবাদক হিসেবে যোগ দেয়। এরপর বাচ্চু ঢাকায় চলে এলো। আমরা তখন একসঙ্গে থাকতাম। এমনকি এক খাটেও ঘুমিয়েছি। এভাবেই তিন-চার বছর কাটিয়েছি। সম্ভবত ১৯৮৫ সালে আমরা একসঙ্গে শেষবার বাজিয়েছিলাম। সেটা ছিল রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের এক অনুষ্ঠান। এরপর বাচ্চু একদিন বলল—দোস্ত, একটা ব্যান্ড করতে চাই। একটা বাসা নিয়ে দে না। আমার বাসার পাশেই একটা বাসা নিয়ে দিলাম। সেটা এতটাই কাছে ছিল যে জানালা দিয়েই কথা বলা যেত। এরপর বাচ্চুর প্রেম, বিয়ে। বিয়ের বাজার সদাই, বরের গার্জিয়ান হিসেবে যাওয়া—সব কিছুই করেছি আমি।
৪০ বছর ধরে সংগীতাঙ্গনে একসঙ্গে কাজ করলে কত স্মৃতিই না জমা হয়! সংগীতশিল্পী হিসেবে সে এককথায় অসাধারণ। নিজেকে সব সময় আপগ্রেড করতে চাইত। কিছুদিন আগে একটা অনুষ্ঠানে শেষবারের মতো দেখা হয়েছিল। তখন বাচ্চু বলেছিল—দোস্ত, শেষ পর্যন্ত হয়তো আমাদের একজন আরেকজনকেই কাঁধে নিতে হবে। তাই আমাদের সম্পর্কটা আরো নিবিড় হওয়া দরকার।’