সোমবার, ২২শে অক্টোবর, ২০১৮ ইং ৭ই কার্তিক, ১৪২৫ বঙ্গাব্দ

বিশেষ শিশুদের জন্য সব জেলায় হচ্ছে ৮ ধরনের বিশেষায়িত বিদ্যালয়

news-image

ডেস্ক রিপোর্ট : সারাদেশে অটিস্টিক ও প্রতিবন্ধী বিশেষ শিশুদের জন্য আট ধরনের বিশেষায়িত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। প্রতিটি জেলায় একটি করে এবং প্রতিবন্ধী শিশুর সংখ্যার ভিত্তিতে উপজেলাতেও বেসরকারি পর্যায়ে এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা হবে। এছাড়া, বিদ্যমান বেসরকারি প্রতিবন্ধী বিদ্যালয়গুলোকে শর্তপূরণ সাপেক্ষে নিবন্ধন দিয়ে শিক্ষক-কর্মচারীদেরকে বেতন কাঠামোর আওতাভুক্ত করা হবে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, বেসরকারি পর্যায়ে বিশেষায়িত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা এবং বিদ্যমান প্রতিষ্ঠানগুলোকে বেতন কাঠামোর আওতায় আনার জন্য দুটি নীতিমালা প্রস্তুত করেছে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়। এর একটি হচ্ছে ‘নিউরো-ডেভেলপমেন্টাল ডিজঅ্যাবিলিটিজ সম্পর্কিত সমন্বিত/বিশেষ শিক্ষা নীতিমালা-২০১৮’ এবং অন্যটি ‘নিউরো-ডেভেলপমেন্টাল ডিজঅ্যাবিলিটিজ ব্যতীত শিশুর সমন্বিত/বিশেষ শিক্ষা নীতিমালা-২০১৮’।

এই দুটি নীতিমালার আওতায় বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী বিদ্যালয়, অটিজম বিদ্যালয়, সেলিব্রাল পালসি বিদ্যালয়, ডাউন সিনড্রোম বিদ্যালয়, শ্রবণ ও বাক-প্রতিবন্ধী বিদ্যালয়, দৃষ্টি প্রতিবন্ধী বিদ্যালয়, শারীরিক প্রতিবন্ধী বিদ্যালয় এবং মানসিক প্রতিবন্ধী বিদ্যালয় স্থাপন করা হবে।

সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. জিল্লার রহমান বলেন, ‘উচ্চমাত্রার প্রতিবন্ধী শিশুদেরকে মূলধারার একীভূত শিক্ষার সঙ্গে যুক্ত করার জন্য বিশেষায়িত শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালিত হবে এসব প্রতিষ্ঠানে। বিশেষায়িত প্রতিষ্ঠানে শিক্ষা অর্জন শেষে মূলধারার প্রতিষ্ঠানে একীভূত শিক্ষায় লেখাপড়া করবে শিশুরা।’

সচিব আরও বলেন, ‘বিদ্যমান বেসরকারি প্রতিবন্ধী বিদ্যালয়গুলো শর্তপূরণ করে এমপিওভুক্ত হতে পারবে। প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন কাঠামোর আওতায় নেওয়া হবে।’

মন্ত্রণালয়ের সূত্রানুযায়ী নীতিমালা দুটিতে বলা হয়েছে— দেশের অবহেলিত ও অনগ্রসর মানুষের কল্যাণ ও উন্নয়ন নিশ্চিত করতে স্নায়ুবিকাশজনিত সমস্যাযুক্ত প্রতিবন্ধী শিশু বা নিউরো-ডেভেলপমেন্টাল ডিজঅ্যাবিলিটিজ (এনডিডি) ব্যক্তিসহ সব ধরনের প্রতিবন্ধীদের জীবনমান উন্নয়ন ও সমাজের সব স্তরে অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে বিশেষ শিক্ষার ব্যবস্থা করা হচ্ছে।

প্রতিবন্ধীদের শিক্ষার সুযোগ সৃষ্টি করতে সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে বিভিন্ন ধরনের প্রতিবন্ধী বিদ্যালয় রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে স্নায়ূবিকাশজনিত সমস্যাযুক্ত প্রতিবন্ধী শিশু বা ব্যক্তি অটিজম, সেলিব্রাল পালসি, ডাউন সিড্রোম ও বুদ্ধি প্রতিবন্ধী শিশু ও ব্যক্তিসহ সব ধরনের প্রতিবন্ধী শিশুকে মূলধারার শিক্ষা নিতে এসব বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করছে সরকার। প্রাথমিকভাবে প্রতিটি জেলায় কমপক্ষে একটি করে মোট ৬৪টি এনডিডি বিদ্যালয় স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

অটিজম ও প্রতিবন্ধী শিশুদের মূলধারার শিক্ষায় একীভূত করতে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ প্রথমে আটটি মহানগরীতে মডেল বিদ্যালয় নির্বাচন করে। এসব প্রতিষ্ঠানে (একীভূত শিক্ষায়) অটিজম শিশুদেরকে ষষ্ঠ শ্রেণি থেকে ভর্তির উদ্যোগ নেওয়া হয়। নির্দিষ্ট শিক্ষকদের প্রশিক্ষণও দেওয়া হয়েছে। বর্তমানেও প্রশিক্ষণ কার্যক্রম চালু রয়েছে। এছাড়া, সম্প্রতি একীভূত শিক্ষার জন্য দেশের প্রতিটি জেলায় একটি করে মাধ্যমিক বিদ্যালয় বাছাই করছে সরকার। এসব বিদ্যালয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ষষ্ঠ শ্রেণিতে মূলধারার শিক্ষায় নেওয়া হবে প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের।

অন্যদিকে, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় অটিজম ও প্রতিবন্ধীদের জন্য প্রতিটি উপজেলায় একটি করে বিশেষায়িত প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপন করবে।

প্রস্তাবিত ‘নিউরো-ডেভেলপমেন্টাল ডিজঅ্যাবিলিটিজ সম্পর্কিত সমন্বিত/বিশেষ শিক্ষা নীতিমালা-২০১৮’ নীতিমালার বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী বিদ্যালয়ের কার্যক্রমে বলা হয়েছে—বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী শিশুদের বয়স হবে ৩ থেকে ১৮ বছর, তবে প্রযোজ্য ক্ষেত্রে বয়স শিথিলযোগ্য। এনডিডি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মৃদু ও মাঝারি মাত্রার প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীরা বিশেষ ও প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করলে মূলধারার বিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পাবে।

নীতিমালায় আরও বলা হয়—বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের কর্মপরিকল্পনা বা বৃত্তি বা পেশা নির্বাচনের লক্ষ্যে তাদেরকে চাহিদা ও আগ্রহের ভিত্তিতে নৃত্য, সংগীত, অংকন, বাদ্যযন্ত্র, খেলাধুলা, সেলাই, সূচিকর্ম, ব্লক বাটিক, বই বাঁধাই, ঠোঙা বানানো, মোম বানানো, হাঁস-মুরগি পালন বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। এছাড়া, বেকারি প্রশিক্ষণ, বাগান করা, গৃহস্থালীর কাজ, হাট-বাজার করাসহ বিভিন্ন বিষয়ের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা রয়েছে।

অটিজম আক্রান্ত শিশুদেরও প্রতিবন্ধী শিশুদের মতো আগ্রহ ও চাহিদার ভিত্তিতে বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ দেওয়ার এবং মূলধারার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তির সুযোগ থাকার কথা নীতিমালায় উল্লেখ করা হয়েছে। সেলিব্রাল পালসি বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য দুই থেকে পাঁচ বছরের শিশুদের নিবিড় পরিচর্যা করার কথা বলা হয়েছে। শিক্ষার্থীদের জন্য প্রাথমিক ফিজিওথেরাপি, স্পিচ ফিজিওথেরাপি ও অকুপেশনাল ফিজিওথেরাপির ব্যবস্থা থাকবে প্রতিষ্ঠানগুলোতে। পাশাপাশি সহায়ক সব ধরনের উপকরণও থাকবে। এছাড়া, ডাউন সিনড্রোম বিদ্যালয়ের শিশুদের শিক্ষা কার্যক্রমে অভিভাবকদের অবশ্যই সম্পৃক্ত করতে হবে। এদের জন্য স্পিচ থেরাপি ও অকুপেশনাল থেরাপিরও ব্যবস্থা থাকবে।

দুটি নীতিমালায় আট ধরনের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে জনবল কাঠামোর বিষয়ে বলা হয়েছে—প্রত্যেকটি প্রতিষ্ঠানে একজন প্রধান শিক্ষক, একজন সিনিয়র সহকারী শিক্ষক,তিন জন সহকারী শিক্ষক,পাঁচ জন জুনিয়র শিক্ষক,প্রতি সাত জন শিক্ষার্থীর জন্য একজন শিক্ষা সহায়ক থাকবেন। প্রতি ৫০ জন শিক্ষার্থীর জন্য ড্রাইভার একজন (গাড়ির ক্ষেত্রে) এবং ২৫ জন শিক্ষার্থীর জন্য একজন ভ্যানচালক ও একজন নৈশ প্রহরী থাকবে।

অটিজম বৈশিষ্ট্য শিক্ষার্থীর জন্য শিক্ষক-শিক্ষার্থীর অনুপাত হবে ১:২। সেলিব্রাল পালসি বিদ্যালয়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থীর অনুপাত ১:৫। অটিজম,সেলিব্রাল পালসি বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী ও ডাউন সিনড্রোম সম্পন্ন শিক্ষার্থীর শ্রেণি সাহায্যকারীর অনুপাত ১:৭। প্রত্যেকটি প্রতিষ্ঠানে কম করে ৫০ জন শিক্ষার্থী থাকতে হবে। তবে হাওর, পশ্চাৎপদ ও দুর্গম এলকার জন্য এই শর্ত শিথিলযোগ্য।

শ্রবণ ও বাক-প্রতিবন্ধী বিদ্যালয়, দৃষ্টি প্রতিবন্ধী বিদ্যালয়, শারীরিক প্রতিবন্ধী বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীর অনুপাত হবে ১:১০, পেশাজীবী ও শিক্ষার্থীর অনুপাত ১:২০, শিক্ষা সহায়ক (আয়া) শিক্ষার্থীর অনুপাত ১:১০। এসব প্রতিষ্ঠানে কম করে ১০০ জন শিক্ষার্থী থাকতে হবে। তবে হাওর, দুর্গম, পার্বত্য এলকার জন্য এ শর্ত শিথিলযোগ্য।

বিদ্যামান ও নতুন প্রতিষ্ঠানের জন্য নির্ধারিত ফরমে আবেদন করতে হবে। স্বীকৃতিপ্রাপ্ত এমপিওভুক্ত বিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতনের সমপরিমাণ বেতন দেওয়া হবে নতুন শিক্ষক-কর্মচারীদের। চিকিৎসাসহ অন্যান্য ভাতা, উৎসবভাতা অর্থ মন্ত্রণালয়ের নির্দেশ মতো দেওয়া হবে।

নতুন বিদ্যালয় স্থাপনের ক্ষেত্রে সিটি করপোরেশন এলাকার জন্য নির্ধারিত ৬ শতাংশ জমি ও ৫০০০ হাজার বর্গফুটের ফ্লাট থাকতে হবে। জেলা সদরের জন্য ২০ শতাংশ জমি থাকতে হবে। ব্যক্তির নামে প্রতিষ্ঠান হলে প্রতিষ্ঠানের অ্যাকাউন্টে এককালীন ১০ লাখ টাকা জমা দিতে হবে। দাতা সদস্য হতে হলে দিতে হবে দুই লাখ। বিদ্যমান যেসব প্রতিষ্ঠানের জমি নেই, সেই প্রতিষ্ঠানের জন্য দুই বছরের মধ্যে নিজস্ব জমি প্রয়োজন হবে। বিদ্যমান প্রতিষ্ঠানকে নীতিমালা জারির তিন বছরের মধ্যে সব শর্ত পূরণ করতে হবে। নতুন প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে তিন বছরের মধ্যে আবেদন করার সুযোগ রাখা হয়েছে। সব ধরনের বিদ্যালয়ের জন্য সপ্তাহে কমপক্ষে ত্রিশ ঘণ্টা ক্লাস বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। বাংলা ট্রিবিউন