মসজিদে নববীতে পরিচ্ছন্নতার কাজ তদারকি করেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জহিরুল হুদা
নিউজ ডেস্ক : ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জহিরুল হুদা আলমগীর (৪৫)। একমাত্র বাংলাদেশি হিসেবে মদিনা মোনাওয়ারায় প্রিয় নবীর হাতে গড়া ‘মসজিদে নববী’র পরিচ্ছন্নতার কাজ তদারকি করেন। তার অধীনে কাজ করেন প্রায় ১৫শ’ বাংলাদেশি।- বার্তা২৪.কম
যাদের সুখ-দুখ আর ভালো-মন্দের ভাগিদার জহিরুল হুদা আলমগীর। পৃথিবীর অন্যতম বৃহৎ মসজিদ ‘মসজিদে নববী।’
মহানবী হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হিজরত করে মদিনায় আসার পর ৬২২ খ্রিস্টাব্দে সৌদি আরবের মদিনায় নির্মিত হয় এই মসজিদ। গুরুত্বের দিক থেকে মসজিদুল হারামের পর মসজিদে নববীর স্থান। স্বাভাবিক সময়ে ৬ লাখ এবং হজের সময়ে ১০ লাখ মুসল্লি একযোগে নামাজ আদায় করেন এই মসজিদে।
এত বিশাল মসজিদ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার জন্যে তিন শিফটে নিরবচ্ছিন্ন কাজ করেন ১৫’শ বাংলাদেশি।
পবিত্র এই মসজিদের পরিচ্ছন্নতার কাজের দায়িত্বে নিয়োজিত কোম্পানির নাম আল ফাহাদ। এই কোম্পানিতে সহকারী ম্যানেজার হিসেবে কাজ করেন জহিরুল হুদা আলমগীর। মজার বিষয় হলো, তিনি একমাত্র বাংলাদেশি হিসেবে এমন পদে আসীন।
ভালো আরবি বলতে আর লিখতে পারার গুণে আরবদের কাছেও পান বাড়তি কদর। হাতে সবসময় থাকা ওয়্যারলেস সেটে সারাক্ষণই পরিচ্ছন্ন কাজে নিয়োজিত কর্মী আর কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হয় তাকে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার ঘাটিয়ারা গ্রামের মরহুম নুরুল হুদা মোল্লার ছেলে জহিরুল হুদা আলমগীর। চার ভাই, ছয় বোনের মধ্যে চতুর্থ জহির সৌদি আরবে পাড়ি জমান ১৯৮৩ সালে। মক্কার মসজিদে হারামে যোগ দেন ক্লিনিং সুপারভাইজার হিসেবে। ৫ বছর সেখানে কাজ শেষে চলে আসেন মদিনায়। সেই থেকে মসজিদে নববীর পরিচ্ছন্নতা কাজের তদারকি করছেন তিনি।
‘আমি ইসলামের মর্যাদাপূর্ণ মসজিদে কাজ করি। এখানে ৫ ওয়াক্ত নামাজ পড়ি। আলহামদুলিল্লাহ, এটাই আমার জীবনের বড় প্রাপ্তি। আমার কাজ নিয়ে আমি গর্বিত’- বলেন জহিরুল হুদা আলমগীর।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে মাস্টার্স এবং ঢাকা ল’ কলেজ থেকে এলএলবি করে আসা জহিরুল হুদা আলমগীর জানান, গোটা কোম্পানিতে রয়েছে সাত হাজার প্রবাসী।
হজ আর ওমরার মৌসুমে লাখো মানুষের ভিড়ে ব্যস্ততা বেড়ে যায় পরিচ্ছন্ন কর্মীদের। এর বাইরে শুক্রবারেও ঢল নামে মুসল্লিদের।
স্ত্রী-পরিজন নিয়ে মদিনাতেই থাকেন জহির। পেশাগত কাজের বাইরে প্রবাসীদের নিয়েই তার যতো ভাবনা। এখানে প্রবাসী সন্তানদের দেশি কারিকুলামে শিক্ষার সুযোগ সীমিত। তার পরও আমরা চেষ্টা করছি। আমাদের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় এখানে একটি স্কুল করা হয়েছে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত।
নবম শ্রেণি থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে লেখাপড়ার জন্যে সন্তানদের পাঠাতে হয় ৫’শ কিলোমিটার দূরে জেদ্দায়। সেটা বেশ জটিল ও অসাধ্য কাজ। যে কারণে সন্তানদের লেখাপড়ার স্বার্থেই দেশে পাঠিয়ে দিতে হয়। সেসব অবশ্য ভিন্ন প্রসঙ্গ।
তবে মদিনায় দায়িত্ব পালনকালে দেশ থেকে বিশিষ্টজনেরা আসলেই তাদের নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েন জহিরুল হুদা আলমগীর। চেষ্টা করেন সাধ্যমতো সেবা-যত্ন করার।
কিন্তু নিজ দেশে ফিরে সেটার প্রতিদান কতটুকু পান- এমন প্রশ্নে উত্তরে তিনি বলেন, আমরা চাই বিমানবন্দরে আমাদের একটু সন্মান জানানো হোক। আমরা তো রেমিটেন্স যোদ্ধা। সারা মাস খেটেখুটে দেশে টাকা পাঠাই আমরা। সেখানে বিমানবন্দরে হয়রানির বদলে আমাদের প্রতি একটু সদয় আচরণ করলে প্রবাসীরা নিজের দেশকে নিয়ে আরও গর্ব অনুভব করবে। উৎসাহবোধ করবে।
এ বিষয়গুলো যথাযথ কর্তৃপক্ষেকে ভেবে দেখার আবেদন জানান তিনি।