‘বছরে দশটা মানহীন ছবির চেয়ে একটি মানসম্মত ছবি করতে চাই’
ঢাকাই ছবির অন্যতম জনপ্রিয় নায়ক আরিফিন শুভ। অনেকে তাকে ভালোবেেসে ঢাকাই ছবির ‘নেক্স সুপারস্টার’ও ঢাকেন। প্রায় তিন মাস আমেরিকা সফর শেষে সম্প্রতি ফিরেছেন দেশে। দীর্ঘ এই বিরতির কারণে শুভ চলচ্চিত্র থেকে বিদায় নিচ্ছেন বলে কথা উঠেছে। বাস্তবতা আসলে তা নয়। সম্প্রতি নতুন একটি ছবিতে চুক্তিবদ্ধ হয়েছেন ‘ঢাকা অ্যাটাক’খ্যাত এ নায়ক। হাতে রয়েছে বেশ কয়েকটি ছবির স্ক্রিপ্ট। সব মিলিয়ে নতুন মিশনে নামছেন এ তারকা। জানালেন আগামীর পরিকল্পনা ও বর্তমান ব্যস্ততা সম্পর্কে।
অনেক দিন হলো সিনেমার বাইরে, যোগাযোগও নেই! কেন?
আরিফিন শুভ: দেশে ছিলাম না বলে অনেকের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। বেশ কয়েকটি শো’তে পারফর্ম করতে আমেরিকায় গিয়েছিলাম। এর মধ্যেও কিন্তু অনেকের সঙ্গে যোগাযোগ হয়েছে।
ইন্ডাষ্ট্রিতে আপনার এই অনুপস্থিতির কারণে অনেকেই নেতিবাচক কথা বলছেন। এ কথার উত্তরে কী বলবেন?
আরিফিন শুভ: ‘ঢাকা অ্যাটাক’-এর পর আমার মাত্র একটি ছবি মুক্তি পেয়েছে। তাছাড়া, বেশ কয়েকমাস দেশের বাইরে থাকলাম। এ কারণে হয়তো অনেকে আমাকে নিয়ে নেতিবাচক বলছেন। এর উত্তরে তেমন কিছুই বলার নেই। শুধু বলবো, ভালো ছবির অপেক্ষায় ছিলাম। এটাকে ‘হারিয়ে যাওয়া’ বললে আমার তো কিছু করার থাকে না। আমি আসলে আমার পরিকল্পনায় চলি। যারা নেতিবাচক কথা বলার তারা বলুক। তাদের জন্যও আমার শুভ কামনা! আমি আসলে বছরে দশটা মানহীন ছবির চেয়ে একটি মানসম্মত ছবি করতে চাই।
ভালো ছবি পেলেন?
আরিফিন শুভ: বেশ কয়েকটি ভালো গল্পের ছবিতে কাজের প্রস্তুাব পেয়েছি। এর মধ্যে গোলাম সোহরাব দোদুলের ‘সাপ লুডু’তে চুক্তিবদ্ধ হয়েছি। দারুণ গল্পের ছবি হবে এটি। এতে আমার সঙ্গে মিমও রয়েছে। অক্টোবরে ছবিটির শুটিং শুরুর কথা রয়েছে। এছাড়াও ভালো ও রোমাঞ্চকর গল্পের বেশ কয়েকটি ছবি নিয়ে কথা হচ্ছে। আশা করি সেগুলোও হবে।
অরিন্দম শীলের ‘বালিঘর’ ছবির খবর কী?
আরিফিন শুভ: যৌথ প্রযোজনায় নির্মাণের কথা এটি। বাংলাদেশ ভারত দুই দেশের শিল্পীদের অংশগ্রহণ থাকছে ছবিটিতে। তাই নানা নিয়মনীতির মধ্য দিয়ে যেতে হচ্ছে। এই নীতিমালা মেনে ছবিটি শুরু করা এখনই সম্ভব হচ্ছে না। আমিও এখন বলতে পারবো না ছবিটির শুটিং কবে শুরু হবে।
কি ধরনের ছবির প্রস্তাব বেশি পাচ্ছেন?
আরিফিন শুভ: সকল ধরনের ছবির অফারই আসে। তবে আমি নিজেকে যে ধরনের ছবিতে ও গল্পে দেখতে চাই তেমন গল্প পাইনা। যখন কোন ছবির অফার আসে তখন আমি দর্শক হয়ে আগে গল্পটিতে এক্সাইটিং কিছু খুজিঁ । দর্শক হিসেবে যদি ছবিটির নায়কের চরিত্রটি ভালো লাগে গল্পটি আমাকে মুগ্ধ করে তবেই কাজ করতে আপত্তি করিনা। তবে তামিল ও কোরিয়ান গল্পের অনুপ্রাণিত ছবির প্রস্তাবও আসে। এমন যারা গল্পে ছবি বানাতে চান তারা একবারও ভাবেন না, দর্শকের রুচিতে পরিবর্তন এসেছে। তাদের হাতে এখন স্মার্টফোন। যে ছবি এখন বানাতে চাইছেন তার মূলটা হয়তো দর্শকরা আগেই দেখে ফেলেন। এছাড়া কয়েকশ’ কোটি টাকায় বানানো একটি ছবি নকল করে আমরা বানাতে চাই নতুন ছবি! আর সেজন্য হয়তো বাজেট থাকে মাত্র এক কোটি টাকা। সেই ছবি কতটা ভালো হবে বলুন?
কি ধরনের ছবিতে অভিনয় করতে আগ্রহ পান?
আরিফিন শুভ: চাই ভালো গল্পের ছবিতে কাজ করতে। একজন দর্শক হিসেবে যে গল্প আমাকে মুগ্ধ করে, কাছে টানে। সে ধরনের গল্পেই কাজ করতে চাই। এছাড়া আমাদের দেশ তো গল্পের ভাণ্ডার। দর্শকদের এক্সাইটিং করতে পারে এমন হাজারও গল্প রয়েছে আমাদের। আমাদের সাহিত্য প্রাণবন্ত গল্পে ভরা। সেইসব গল্প নিয়ে ছবি বানালেই মৌলিক ছবি হয়ে উঠবে। সম্প্রতি যে কয়টি চবি আলোচনায় এসেছে এর মধ্যে মনপুরা, ঢাকা অ্যাটাক, আয়নাবাজি, অজ্ঞাতনামা- সবগুলোই কিন্তু দেশি মৌলিক গল্পের ছবি। একটা জিনিস ভালো লাগছে, অনেক দিন পর হলেও আমার প্রিয় মাসুদ রানা সিরিজের গল্পের প্রতি দৃষ্টি পড়েছে। পর্দায় উঠে আসছে সিরিজটি। এমন আরও অনেক গল্প রয়েছে। আমার বিশ্বাস, সে গল্পগুলোর প্রতিও পরিচালকদের নজর পড়বে।
অভিযোগ রয়েছে, দেশের নির্মাতা ও শিল্পীরা নতুন কিছু দিতে পারছেন না। আপনি কী বলবেন?
আরিফিন শুভ: প্রায়ই বলতে শুনি আমাদের ইন্ডাষ্ট্রিতে নায়ক-নায়িকা কম। কথাটা পুরোপুরি ঠিক নয়। ইন্ডাষ্ট্রিতে ভালো পরিচালকেরও সংকট তৈরি হচ্ছে। আমাদের আধুনিক পরিচালক দরকার। এই সময়ের দর্শকদের রুচি ধরতে পারেন- এমন পরিচালক দরকার। একটি বিষয় খেয়াল করুন, টিভি নাটক নির্মাতারা নতুন আইডিয়া নিয়ে যেসব ছবি বানাচ্ছেন সেগুলো কিন্তু হিট হচ্ছে।
চলচ্চিত্রের বর্তমান অবস্থা নিয়ে সবাই হতাশার বাণী শোনায়। আপনি কী মনে হচ্ছে?
আরিফিন শুভ: আমি আশাবাদী মানুষ। হতাশা আমার মধ্যে কাজ করে কম। আমাদের চলচ্চিত্রের অবস্থা কোথায় ছিল দেখেছেন? সেই অস্থা থেকে উত্তরণ হয়ে এখন কোথায় এসেছে। একটু অস্থিরতা চলছে। কিন্তু এটা থাকবে না। শুধু বলার জন্য ‘বলা’ এভাবে কিন্তু বলছি না। অবশ্যই চলচ্চিত্রের কালো মেঘে কেটে যাবে। আমি চলচ্চিত্র আরও এগিয়ে যাবে এমন কিছু কাজ করতে চাই। এটা সবার সঙ্গে মিলেই করতে চাই।