হজ থেকে ফিরে হাজিদের জন্য করণীয়
নিউজ ডেস্ক।। ইসলামের পঞ্চ স্তম্ভের মধ্যে হজ্জ অন্যতম। পৃথিবীর দিক-দিগন্ত হতে প্রতিবছর জিলহজ্জ মাসে আল্লাহর মেহমানরা হজের উদ্দেশ্যে বাইতুল্লায় সমবেত হয়। এ পবিত্র স্থান বিশ্ব মুসলিমের মিলন কেন্দ্র। প্রতি চন্দ্রবর্ষের জিলহজ্জ মাসেই পবিত্র হজ্জ উদযাপিত হয়। ‘হজ’ শব্দের অর্থ হলো কোনো মহৎ কাজের ইচ্ছা করা। হজের নিয়তসহ ইহরাম ধারণ করে নির্দিষ্ট দিনে আরাফার ময়দানে অবস্থান করা ও কাবা শরিফ তাওয়াফ করাকে হজ বলে। (ফাতাওয়া শামি : ২/৪৫৪)
হজে পালনকারীর জন্য রয়েছে অনেক ফজিলত। একটি হাদিসে নবী (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য হজ করে এবং অশ্লীল ও গুনাহর কাজ থেকে বেঁচে থাকে, সে নবজাতক শিশুর মতো নিষ্পাপ হয়ে যায়। আর মকবুল হজের পুরস্কার জান্নাত ছাড়া অন্য কিছুই নয়।’ (বুখারি : ১/২০৬)
যার হজ করার মত সকল সমর্থই ছিলো কিন্তু হজ করেনি। অর্থাৎ ধন-দৌলত ছিলো, শক্তি সমর্থ ছিলো অথচ হজ না করেই মৃত্যুবরণ করেছে। তার সম্পর্কে নবী (সা.) বলেছেন, ‘হজ ফরজ হওয়ার পর তা আদায় না করে মৃত্যুবরণ করা ইহুদি বা খ্রিস্টান হয়ে মৃত্যুবরণ করার নামান্তর।’ (তিরমিজি : ১/১৬৭)
হজের পর গোনাহমুক্ত জীবন-যাপনই হলো মূলত হজ কবুল হওয়ার লক্ষণ। হজের পর হজ পালনকারীদের উচিত আল্লাহরপাকের সকল বিধি-বিধান পালনের প্রতি যথাযথ গুরুত্বারোপ দেওয়া। বিভিন্ন মনীষীগণ বলেছেন, হজ পরবর্তী জীবনে হজ পালনকারী তাঁর ভালো কাজের ধারাবাহিকতা বজায় রাখে আর সকল প্রকার পাপ কাজ থেকে দূরে থাকে।
হজ হলো তাওহিদ তথা আল্লাহর একত্ববাদের আলোকে নিজের জীবন প্রতিষ্ঠার অন্যতম সহায়ক কাজ। সুতরাং হজ থেকে ফিরতে হবে শুধুমাত্র আল্লাহর একত্ববাদের শিক্ষা ও দীক্ষা নিয়ে। আল্লাহপাক ইরশাদ করেছেন, ‘আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের পক্ষ থেকে মহান হজের দিনে মানুষের প্রতি (বিশেষ) বার্তা হলো, আল্লাহর সঙ্গে অংশীবাদীদের কোনো সম্পর্ক নেই এবং তাঁর রাসুলের সঙ্গেও নেই।’ (সুরা : তাওবা, আয়াত : ৩)
একজন ব্যক্তি হজ করে ফিরে আসার পর তার বিশেষ কিছু করণীয় রয়েছে। সেগুলো হচ্ছে..
হজ পালনকারীর জন্য পবিত্র ভূমি মক্ক নগরি থেকে নিজ দেশে ফিরেই বাড়ির নিকটস্থ মসজিদে দুই রাকাআত নামাজ আদায় করা সুন্নাত। একটি হাদিসে এসেছে, হজরত কাব বিন মালেক (রা.) থেকে বর্ণিত, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.) যখন কোনো সফর থেকে ফিরে আসতেন, তখন মসজিদে গিয়ে আগে (নফল) নামাজ আদায় করতেন।’ (বুখারি)
নিজের ঘরে প্রবেশ করে দুই রাকাআত নামাজ আদায় করা মুস্তাহাব। একটি হাদিসে এসেছে, ‘যখন তুমি ঘর থেকে বের হবে, তখন দুই রাকাআত নামাজ পড়বে। সেই নামাজ তোমাকে ঘরের বাইরের বিপদাপদ থেকে হেফাজত করবে। আর যখন ঘরে ফিরবে, তখনও দুই রাকাআত নামাজ আদায় করবে। সেই নামাজ তোমাকে ঘরের অভ্যন্তরীণ সকল বিপদ-আপদ থেকে রক্ষা করবে।’ (মুসনাদে বাজ্জার)
সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে হজ পালনের পর শুকরিয়াস্বরূপ গরিব-মিসকিন ও আত্মীয়স্বজনকে খাবারের দাওয়াত দেওয়া বৈধ। হাদিসে এসেছে, হজরত জাবের বিন আবদুল্লাহ (রা.) থেকে বর্ণিত, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.) যখন মদিনায় এসেছেন, তখন একটি গরু জবাইয়ের নির্দেশ দেন। জবাইয়ের পর সাহাবিরা তা থেকে আহার করেছেন।’ (বুখারি) তবে অহংকার ও রিয়া থেকে বেঁচে থাকতে হবে।
হজ পরবর্তী সময়ে হাজি সাহেবদের অভ্যর্থনা ও শুভেচ্ছা জানানো, সৌজন্য সাক্ষাত, মুসাফাহ, কোলাকুলি করা এবং তাঁদের দিয়ে দোয়া করানো মুস্তাহাব। তবে ফুলের মালা বিনিময়; তাদের সম্মানে স্লোগান ইত্যাদি ঠিক নয়। এ সব কাজ থেকে বিরত থাকতে হবে।
হাজিগণ সঙ্গে নিয়ে আসা জমজমের পানি লোকদের পান করানো মুস্তাহাব। অসুস্থ রোগীদের গায়ে ব্যবহার করাও বৈধ। একটি হাদিসে এসেছে, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.) জমজমের পানি সঙ্গে নিয়ে যেতেন।’ (তিরমিজি)
আন্তরিকতা ও মনের আগ্রহ ছাড়া লোক দেখানোর উদ্দেশ্যে ব্যতিত আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধবকে হাদিয়া-তোহফা দেয়া সুন্নাত। কিন্তু মনের আগ্রহ ছাড়া লোক দেখানো হাদিয়া বা উপহার প্রদান বৈধ নয়। যা অনেকে চক্ষু লজ্জার জন্য করে থাকেন। যারা ইতিমধ্যে হজ করে দেশে ফিরেছেন এবং যারা দেশে ফিরবেন আল্লাহপাক সবাইকে এই আমলগুলো করার তাওফিক দান করুন। আমীন।