একই পরিবারের ৪৬ জনই পবিত্র কুরআনে হাফেজ
পটুয়াখালীর বাউফলের বাঁশবাড়িয়া গ্রামের শাহজাহান হাওলাদার (৬৮)। সাধারণ শিক্ষায় শিক্ষিত তিনি। বাউফল সরকারি কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেছেন।
অথচ তিনি নিজ এলাকায় প্রতিষ্ঠা করেছেন ছয়টি হাফিজি মাদরাসা। পবিত্র কোরআনের হাফেজ বানিয়েছেন নিজের ছেলেমেয়েসহ পরিবারের অন্যদের। তাদের বিয়েও দিয়েছেন হাফেজদের সঙ্গে। সব মিলিয়ে পরিবারের এখন ৪৬ জন হাফেজ। বাড়ির ছোটরাও একই পথে হাঁটছেন।
জানতে চাইলে শাহজাহান হাওলাদার বলেন, বাবা (নুর মোহাম্মদ হাওলাদার) ছিলেন ধর্মপ্রাণ মুসলমান। তিনি হজ করেছেন। হজ পালনরত অবস্থায় ইন্তেকাল করেছেন তিনি। বাবা হাফেজদের খুব ভালোবাসতেন।
এ কারণেই তিনি লক্ষ্য স্থির করেন, পরিবারের সবাইকে হাফেজি পড়াবেন। সেই সূত্র ধরে আত্মীয়তাও করেছেন হাফেজদের সঙ্গে। সে লক্ষে তিনি নিজের ছয় ছেলে ও চার মেয়েকে হাফিজি পড়ান।
পরে ছেলে-মেয়েদের বিয়েও দিয়েছেন হাফেজদের সঙ্গে। এরপর তার ইচ্ছা অনুযায়ী, তার ছেলে-মেয়েরাও তাদের সন্তানদের হাফিজি পড়িয়েছেন ও পড়াচ্ছেন।
একই পরিবারের ৪৬ জনই পবিত্র কুরআনে হাফেজ
শাহজাহান হাওলাদারের মেজ ছেলে হাফেজ মাওলানা নুর হোসেন বলেন, আমিসহ আমার বাবার ছয় ছেলে ও চার মেয়ের মধ্যে এক ছেলে ও এক মেয়ে সৌদি আরব থাকেন।
বাকি সবাই ব্যবসার পাশাপাশি হাফিজি মাদরাসায় শিক্ষকতা ও মসজিদের খতিবের দায়িত্ব পালন করছি। ছয় ছেলের ২৮ সন্তান এবং চার মেয়ের ২৩ সন্তান রয়েছে। এরই মধ্যে তাদের ২৭ জন পবিত্র কোরআনে হাফেজ হয়েছে। বাকিরা হাফিজি পড়ছে।
শাহজাহান হাওলাদার জানান, এলাকায় ছয়টি মাদরাসা স্থাপন করেছি। এর মধ্যে তিনটি ছেলেদের ও তিনটি মেয়েদের। এছাড়া বরিশালের আলেকান্দা এলাকায় মেয়েদের জন্য নুর জাহান বেগম হাফিজি মাদরাসা ও কামরাঙ্গীরচর ঢাকায় দারুল আখরাম নুরানী হফিজি মাদরাসাও স্থাপন করেছেন তিনি।
ছেলেদের মাদরাসা পরিচালনা করেন তার ছেলেরা ও মেয়েদের মাদরাসা পরিচালনা করেন তার মেয়ে ও ছেলের বৌরা। আমার যা ছিল তার সব কিছু মাদরাসা স্থাপন ও বর্তমান খরচ পরিচালনায় খরচ করি। তারপরও মাদরাসার সব খরচ পোশাতে পারি না। এজন্য সরকার যদি এতিম ছেলে-মেয়েদের জন্য সহায়তা করত তাহলে ভালো হতো।
১২ নং বাউফল সদর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মুহা. জসিম উদ্দিন খান বলেন, শাহজাহান হাওলাদারের পরিবারের সবাই ধার্মিক ও বিনয়ী। পরিবারের সবাইকে হাফেজ বানিয়ে এক বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন তিনি।
মহানবী (সাঃ) বলেন- ‘যে ব্যক্তি এই সূরা প্রতি রাতে পাঠ করবেন তাঁকে কখনই দরিদ্রতা স্পর্শ করবে না’
অন্তিম রোগশয্যায় আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ)— এর শিক্ষাপ্রদ কথোপকথনঃ ইবনে—কাসীর ইবনে আসাকীরের বরাত দিয়ে এই ঘটনা বর্ণনা করেন যে, হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) যখন অন্তিম রোগশয্যায় শায়িত ছিলেন, তখন আমীরুল মু’মিনীন হযরত ওসমান (রাঃ) তাঁকে দেখতে যান৷ তখন তাঁদের মধ্যে শিক্ষাপ্রদ যে কথোপকথন হয় তা নিম্নরুপঃ-
→হযরত ওসমানঃ ما تشتكي আপনার অসুখটা কি?
→হযরত ইবনে মাসউদঃ ذنوبي আমার পাপসমূহই আমার অসুখ৷
→ওসমান গণীঃ ما تشتهي আপনার বাসনা কি?
→ইবনে মাসউদঃ رحمة ربي আমার পালনকর্তার রহমত কামনা করি৷
→ওসমান গণীঃ আমি আপনার জন্যে কোন চিকিৎসক ডাকব কি?
→ইবনে মাসউদঃ الطبيب امرضني চিকিৎসকই আমাকে রোগাক্রান্ত করেছেন৷
→ওসমান গনীঃ আমি আপনার জন্যে সরকারী বায়তুল মাল থেকে কোন উপটৌকন পাঠিয়ে দেব কি?
→ইবনে মাসউদঃ لاحاجة لي فيها এর কোন প্রয়োজন নেই৷
→ওসমান গণীঃ উপটৌকন গ্রহণ করুন৷ তা আপনার পর আপনার কন্যাদের উপকারে আসবে৷
→ইবনে মাসউদঃ আপনি চিন্তা করছেন যে, আমার কন্যারা দারিদ্র ও উপবাসে পতিত হবে৷ কিন্তু আমি এরুপ চিন্তা করি না৷ কারণ, আমি কন্যাদেরকে জোর নির্দেশ দিয়ে রেখেছি যে, তারা যেন প্রতিরাত্রে সূরা ওয়াক্কিয়া পাঠ করে৷
আমি রাসুলুল্লাহ (সাঃ)— কে বলতে শুনেছি,
من قرأ سورةالواقعة كل ليلة لم تصبه فاقة ابدا”
অর্থাৎ, যে ব্যক্তি প্রতি রাতে সূরা ওয়াক্কিয়া পাঠ করবে, সে কখনও উপবাস করবে না৷
হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ [রা.] বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি প্রতিদিন রাতে সুরা ওয়াক্বিয়াহ তেলাওয়াত করবে তাকে কখনো দরিদ্রতা স্পর্শ করবে না। হজরত ইবনে মাসউদ [রা.] তাঁর মেয়েদেরকে প্রত্যেক রাতে এ সুরা তেলাওয়াত করার আদেশ করতেন। [বাইহাকি:শুআবুল ঈমান-২৪৯৮]
সুরা আর রাহমান, সুরা হাদিদ ও সুরা ওয়াকিয়া’র তেলাওয়াতকারীকে কেয়ামতের দিন জান্নাতুল ফিরদাউসের অধিবাসী হিসেবে ডাকা হবে।
অন্য এক হাদিসে আছে, সুরা ওয়াকিয়াহ হলো ধনাঢ্যতার সুরা, সুতরাং তোমরা নিজেরা তা পড় এবং তোমাদের সন্তানদেরকেও এ সুরার শিক্ষা দাও। অন্য এক বর্ণনায় আছে: তোমাদের নারীদেরকে এ সুরার শিক্ষা দাও। আম্মাজান হজরত আয়েশা [রা.] কে এ সুরা তেলাওয়াত করার জন্য আদেশ করা হয়েছিল।
তাছাড়া অভাবের সময় এ সুরার আমলের কথাটা তো হাদিস দ্বারাই প্রমানিত। এমনকি বর্ণিত আছে যে হজরত ইবনে মাসউদ [রা.] কে যখন তার সন্তানদের জন্য একটি দিনারও রেখে না যাওয়ার কারণে তিরস্কার করা হলো তখন তিনি উত্তরে বলেছিলেন, তাদের জন্য আমি সুরা ওয়াকিয়াহ রেখে গেলাম। [ফয়জুল কাদির-৪/৪১]
সুবহানাল্লাহ! মহান রাব্বুল ইজ্জতের পবিত্র কালামের বরকত কত পাওয়ারফুল আপনি-আমি তা অনুধাবন করতে পারি কি?
তাই আসুন সকলে সূরা ওয়াক্কিয়া পাঠের এই অতি মূল্যবান আমলটি প্রতিদিন আদায় করার চেষ্টা করি৷ আল্লাহ আমাদের প্রত্যেককে আমল করার তাওফিক দিন৷ আমীন