এ বছর সীমান্তে একজনেরও মৃত্যু হয়নি : বিএসএফ প্রধানের দাবি
নয়াদিল্লি প্রতিনিধি: ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) মহাপরিচালক কে কে শর্মা দাবি করেছেন, ‘আনন্দের কথা, চলতি বছরে সীমান্তে একজনেরও মৃত্যু হয়নি।’ আর বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিজিবি) মহাপরিচালক মেজর জেনারেল সাফিনুল ইসলাম বলেছেন, ‘বাংলাদেশে জীবনযাত্রার মানের অব্যাহত উন্নতির কারণে ব্যাপক হারে ভারতে চলে যাওয়ার ঘটনা অনেক দিন ধরেই বন্ধ। তবু যাঁরা পারাপার করেন, তাঁরা তা করেন আত্মীয়স্বজনের জন্য।’
দিল্লিতে ছয় দিনব্যাপী দুই দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর দ্বিবার্ষিক সম্মেলন শেষে শুক্রবার দুই বাহিনীর যৌথ সংবাদ সম্মেলনে প্রশ্নের জবাব দেন বিজিবি ও বিএসএফের মহাপরিচালক। সেখানে তাঁরা এসব কথা বলেন।
অবশ্য বাংলাদেশের দুটি বেসরকারি সংস্থা আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক) এবং অধিকারের তথ্য উল্লেখ করে বিবিসি বাংলা বলছে, চলতি বছরের জুন পর্যন্ত বিএসএফের নির্যাতনে ৩ বাংলাদেশি নিহত হয়েছেন।
আজকের সংবাদ সম্মেলনে বিজিবির মহাপরিচালক সাফিনুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশ থেকে ব্যাপক হারে অনুপ্রবেশের কোনো ঘটনা ঘটে না। বাংলাদেশ ক্রমেই উন্নত হচ্ছে। নিম্ন আয় থেকে দেশটি এখন মধ্যম আয়ে পৌঁছেছে। প্রবৃদ্ধির হার ৭ শতাংশের বেশি। জীবনযাত্রার মান অনেক বেড়েছে। মানুষও খুশি। তাই ব্যাপক হারে দেশত্যাগের ঘটনা আর ঘটে না। তিনি বলেন, যেটুকু পারাপার হয় তার কারণ নিতান্তই পারিবারিক। সীমান্তের দুপাশে একই পরিবারের মানুষের বসবাস। পারিবারিক অনুষ্ঠানে যাওয়া আসা স্বাভাবিক।
ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) মহাপরিচালক কে কে শর্মা সংবাদ সম্মেলনে বলেন, চলতি বছরে দুই দেশের দীর্ঘ সীমান্তে অবৈধ পারাপারের চেষ্টায় বাংলাদেশের ১ হাজার ৫২২ জন নাগরিককে আটক করে বিজিবির হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। এই দেড় হাজার জনের মধ্যে ১৬৬ জন এমন যাঁরা বুঝতে না পেরে ভারতে ঢুকে পড়েছিলেন, কেউ কেউ পাচারের শিকার। শর্মা বলেন, কে পাচারকারী আর কারা পাচারের শিকার, তা ধরার প্রশিক্ষণ এখন রক্ষীদের দেওয়া হচ্ছে।
দুই দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর দ্বিবার্ষিক বৈঠকে প্রতিবারই বড় হয়ে ওঠে চোরাচালান সমস্যা ও সীমান্ত হত্যার প্রসঙ্গ। চোরাকারবার কমিয়ে নীতিগতভাবে দুই দেশই সীমান্ত হত্যার সংখ্যা শূন্যে নামিয়ে আনার পক্ষে। এবারের বৈঠকেও বিষয়টি আলোচিত হয়। কে কে শর্মা জানান, আনন্দের কথা চলতি বছরে সীমান্তে একজনেরও মৃত্যু হয়নি।
মেজর জেনারেল সাফিনুল ইসলাম বলেন, গরু পাচারের ঘটনা অনেক কমে গেছে। বাংলাদেশও গরুর বিষয়ে স্বনির্ভর হয়ে উঠছে। পাচার রোধে বিজিবি ও বিএসএফ ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করছে। তিনি জানান, বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী এলাকায় কোথাও কোনো ভারতবিরোধী গোষ্ঠীর অস্তিত্বও নেই। ভারতের দুশ্চিন্তার একটা বড় কারণ জাল নোটের কারবার। বাংলাদেশের উদ্বেগের বিষয় ফেনসিডিলসহ বিভিন্ন ধরনের মাদকের আমদানি। বৈঠকে এই বিষয় নিয়েও আলোচনা হয়েছে। এই অপরাধ বন্ধে বিজিবি-বিএসএফ সহযোগিতার বিষয়টি আরও বাড়ানোর প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেওয়া হয়।
বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে সীমান্ত ৪ হাজার কিলোমিটারেরও বেশি। দীর্ঘ এই সীমান্ত অপরাধমুক্ত রাখার চেষ্টা শুরু হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গের সীমান্ত অঞ্চলে গত মার্চ মাসে এক বিস্তীর্ণ এলাকা ‘অপরাধমুক্ত’ করে গড়ে তোলা হয়েছে। ওই অঞ্চলে দুই দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর সঙ্গে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে সীমান্তবর্তী জেলা প্রশাসকেরা, বিভিন্ন বেসরকারি সংগঠন এবং স্থানীয় জনগণ। এই ধরনের আরও পাঁচটি অপরাধমুক্ত এলাকা খোলার চেষ্টা হচ্ছে। দুই দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর পরবর্তী বৈঠক বসবে ঢাকায়, আগামী বছর মার্চ-এপ্রিল মাসে।