রিমান্ডে স্বীকার করলেও আদালতে স্বীকারোক্তি দেয়নি যুবলীগ নেতার সেই ছেলে
বগুড়ায় কলেজছাত্রীকে তুলে নিয়ে গোপনাঙ্গে ছুরিকাঘাত মামলার আসামি শহর যুবলীগ সভাপতির ছেলে কাওসার আলম অভি (২২) পুলিশি রিমান্ডে নিজের অপরাধের কথা স্বীকার করলেও আদালতে স্বীকারোক্তি দেয়নি।
বুধবার দুপুরে তাকে আদালতে হাজির করার পর স্বীকারোক্তি না দিলে অভিকে জেলহাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট শ্যামসুন্দর রায়।
এর আগে সোমবার বিকেলে অভিকে বগুড়ার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করে ৫ দিনের রিমান্ড আবেদন করে পুলিশ। শুনানি শেষে তার ২ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন বিচারক। মঙ্গলবার তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। বুধবার তাকে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠানো হয়।
অভি বগুড়া শহর যুবলীগের সভাপতি মাহফুজুল আলম জয়ের দ্বিতীয় স্ত্রীর সন্তান।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, প্রভাবশালী পরিবারের প্রশ্রয়েই সে বখে যায়। বগুড়া শহরতলির সরকারি মুজিবুর রহমান মহিলা কলেজে একাদশ শ্রেণিতে পড়েন নির্যাতিতা ওই ছাত্রী। লেখাপড়ার পাশাপাশি শহরের বাদুড়তলায় একটি বিউটি পার্লারে কাজ শেখেন তিনি। কলেজ ও পার্লারে যাতায়াতের পথে অভি তাকে উত্ত্যক্ত করে আসছে। প্রেমের প্রস্তাবে সাড়া না পেয়ে অভি ও তার তিন সহযোগী গত ৩০ আগস্ট বিকালে বাদুড়তলায় পার্লার থেকে ওই ছাত্রীকে ধরে কাটনারপাড়ার একটি বাড়িতে আনে। সেখানে আবারো প্রেমের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করলে অভি ক্ষিপ্ত হয়ে ছাত্রীর উরু ও হাতে ছুরিকাঘাত করে। এরপর হুমকি দিয়ে বাড়ি থেকে বের করে দেয়।
স্থানীয়রা ছাত্রীকে উদ্ধার করে একটি ক্লিনিকে ভর্তি করে দেন। পরে তাকে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ (শজিমেক) হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়।
পরে অভির মা নাসরীন আলম কাকলী হাসপাতালে গিয়ে মীমাংসার প্রস্তাব দেন। অভিভাবকরা প্রভাবশালী পরিবারের ভয়ে রিলিজ ছাড়াই মেয়েকে হাসপাতাল থেকে বাড়িতে নিয়ে আসেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে পুলিশের একজন কর্মকর্তা বলেন, অভি বগুড়ার অপরাধ জগতের সঙ্গে জড়িত। প্রভাবশালী পরিবারের ছেলে হওয়ায় তার মধ্যে সবসময় একটা ডোন্ট কেয়ার ভাব দেখা গেছে। এক বছর ধরে ওই তরুণীর পিছে লেগে আছে সে। তার টার্গেট ছিল যে কোনোভাবে মেয়েটিকে কাছে পাওয়ার। সবসময় অভির সঙ্গে ২০-২২ জনের একটি বাহিনী থাকত। ৮-১০টি মোটরসাইকেলের বহর নিয়ে চলাফেরা করত। ঘটনার দিন ওই তরুণীকে বাদুরতলা এলাকা থেকে অভিসহ তার বাহিনী তুলে নিয়ে যায়। এরপর কাটনারপাড়া এলাকায় তরুণীর গোপনাঙ্গে ছুরিকাঘাত করে অভি।
জিজ্ঞাসাবাদে অভি পুলিশকে জানায়, আজিজুল হক কলেজের অনার্স তৃতীয় বর্ষের এক ছাত্রের সঙ্গে ওই তরুণীর বিয়ে ঠিক হয়। তার পরিবারকে ভয় দেখানো এবং তরুণীকে উচিত শিক্ষা দিতে এ ঘটনা ঘটায় অভি।
পাশাপাশি অভি বলেছে, নির্যাতিত ওই মেয়েটিকে আমি ভালোবাসি। কিন্তু ওই মেয়ে অন্য এক ছেলের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে বিয়ের সিদ্ধান্ত নেয়ায় ক্ষিপ্ত হয়ে আমি এমন কাণ্ড ঘটিয়েছি।
গত ১ সেপ্টেম্বর বিকালে ছাত্রীর বাবা সদর থানায় অভিসহ ৪ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। পুলিশের ব্যাপক তৎপরতার মুখে মা নাসরিন আলম কাকলী ২ সেপ্টেম্বর রাতে ছেলেকে সদর থানা পুলিশে সোপর্দ করেন।