হাসপাতাল থেকে পালিয়ে যাওয়া দম্পতির নবজাতকের চিকিৎসার দায়িত্ব নিলেন কুমিল্লা জেলা প্রশাসক
কুমিল্লা মা ও শিশু স্পেশালাইজড হাসপাতালের চিকিৎসাধীন নবজাতক।
অবশেষে মায়ের ঘ্রাণ পেল ১৮ দিনের শিশুটি। ১১ দিন পর সন্তানকে দেখতে পেরে খুশির জোয়ারে ভেসে গেল এক মায়ের বেদনার্ত হৃদয়।
আজ বুধবার বিকেলে কুমিল্লা জেলা প্রশাসকের উদ্যোগে কুমিল্লা মা ও শিশু স্পেশালাইজড হাসপাতালের বেডে রেখে পালিয়ে যাওয়া এক নবজাতকের মাকে নিয়ে আসা হয়।
উল্লেখ্য, গত ২৪ আগস্ট হাসপাতালের বিল পরিশোধে অক্ষম চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ উপাজেলার ফুলছোঁয়া গ্রামের অধিবাসী শাহ্ আলম ও তার স্ত্রী রোকেয়া বেগম তাদের নবজাতককে রেখেই হাসপাতাল ছেড়ে পালিয়ে যান।
এ ঘটনায় ৫ সেপ্টেম্বর দৈনিক যুগান্তরে ‘হাসপাতালের বিল পরিশোধ করতে না পারায় নবজাতককে রেখে পালিয়ে গেলেন’ শীর্ষক শিরোনামে সংবাদ প্রকাশ হয়।
বিষয়টি জানার পর হাজীগঞ্জ উপজেলার বাকিলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাহফুজুর রহমান ইউসুফ পাটওয়ারী কুমিল্লার ওই হাসপাতালে যোগাযোগ করেন। তখন এক লাখ টাকা বিল কমিয়ে ৩০ হাজার টাকায় ছাড়পত্র দেবে বলে জানায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও শিশুটির বাবা-মাকে আসতে বলেন তারা।
এদিকে যুগান্তরসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদটি আসার পর বিষয়টি কুমিল্লার জেলা প্রশাসক মোঃ আবুক ফজল মীরের নজরে আসে। তার উদ্যোগে কুমিল্লা জেলা সিভিল সার্জন ও পুলিশ সুপার ঐ দম্পতির খোঁজ করে শিশুটির মাকে কুমিল্লায় মা ও শিশু স্পেশালাইজড হাসপাতালের নিয়ে আসেন।
এভাবে সন্তানকে রেখে কেন চলে গেলেন প্রশ্নে কান্নায় ভেঙে পড়েন রোকেয়া বেগম।
তিনি জানান, দিনমজুর স্বামীর জন্য এ চিকিৎসা ব্যয় বহন করা সম্ভব নয়। ছয় দিনের বিল এক লক্ষ টাকা দিতে আমরা পারবনা তাই বুকে কষ্ট নিয়েই আল্লাহর কাছে আমানত রেখে পালিয়া যাই আমরা। কুমিল্লা থেকে হাজীগঞ্জ ফেরার পুরোটা পথ আমরা অঝোরে কেঁদেছি।
এ ব্যাপারে হাসপাতালের দায়িত্বরত চিকিৎসক তানজিদা চৌধুরী সম্পা জানান, গত ১৮ আগস্ট চাঁদপুরের হাজীগঞ্জের শাহ আলম ও রোকেয়া বেগম দম্পতি তাদের অপরিণত ৭০০ গ্রাম ওজনের সন্তান নিয়ে আমাদের হাসপাতালে আসেন।
শিশুটির অবস্থা গুরুতর দেখে তাকে ছয় দিন নিবিড় পরিচর্যা ইউনিটে (এনআইসিইউ) রেখে চিকিৎসা দেয়া হয়। কিন্তু ২৪ আগস্ট বিকেল বেলা থেকে এই দুজনের সন্ধান পাওয়া যাচ্ছিলনা। তবে আমারা শিশুটির চিকিৎসা এখনবধি চালিয়ে যাচ্ছি।
এ বিষয়ে হাসপাতালের পক্ষ থেকে কুমিল্লা কোতয়ালী মডেল থানায় অভিযোগ জানানো হয় বলে জানান মা ও শিশু স্পেশালাইজড হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
কুমিল্লা জেলা প্রশাসক মো: আবুল ফজল মীর জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে অবস্থা সংকটাপন্ন দরিদ্র পিতা-মাতার এ শিশুটির চিকিৎসা সংক্রান্ত ব্যয় বহন করা হবে বলে জানান।
হাসপাতালে শিশুটির সংকটাপন্ন অবস্থা দেখে কুমিল্লা জেলা পুলিশ সুপার সৈয়দ নুরুল ইসলাম বলেন, বিষয়টি খুব নাড়া দিয়েছে আমাদের। আমরা কুমিল্লা পুলিশ কর্মকর্তারা এ শিশুটির চিকিৎসার জন্য একটি ফান্ড গঠন করেছি। শিশুটির চিকিৎসার জন্য দরিদ্র এ দম্পত্তিকে আর ভাবতে হবে না।
প্রসঙ্গত, ১৮ আগস্ট হাজীগঞ্জ শহরের শাহ মিরান হসপিটালে সিজারের মাধ্যমে ছেলে সন্তানের জন্ম দেন রোকেয়া বেগম। মাত্র ৭০০ গ্রাম ওজনের অপরিণত নবজাতককে বাঁচাতে দ্রুত কুমিল্লার মা ও শিশু স্পেশালাইজড হসপিটালে ভর্তি করানো হয়।
হাসপাতালে ছয় দিন শিশুটিকে নিবিড় পরিচর্যা ইউনিটে (এনআইসিইউ) রাখা হলে শিশুটির জন্য চিকিৎসা খরচ গিয়ে দাঁড়ায় লক্ষাধিক টাকা। দরিদ্র বাবা এ অর্থ পরিশোধ করতে না পেরে নবজাতককে হাসপাতালের বেডে রেখেই ২৪ আগস্ট পালিয়ে চাঁদপুরে চলে আসেন।
পরে বিষয়টি জানাজানি হলে সংশ্লিষ্ট ইউপি চেয়ারম্যান স্থানীয় ব্যক্তিদের কাছ থেকে ৩০ হাজার টাকা উত্তোলন করে নবজাতকের বাবা-মাকে দেন।