মা-খালা-ভাইকে কুপিয়ে হত্যা স্ত্রীকে নির্যাতন করায়!
নিউজ ডেস্ক।। পাবনার বেড়া উপজেলার সোনাপদ্মা চারাবটতলা গ্রামের চাঞ্চল্যকর মা, খালা ও ছোট ভাইকে হত্যা মামলার একমাত্র আসামি তুহিনকে (২২) গ্রেফতার করেছে পুলিশ। শুক্রবার খুলনা থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারের পর পুলিশের কাছে এবং পরে আদালতে দেয়া জবানবন্দিতে তুহিন তার মা বুলি বেগম (৪০),খালা মরিয়ম ওরফে নসিমন (৪৫) ও ছোট ভাই তুষারকে (১০) হত্যার কথা স্বীকার করে।
শনিবার দুপুরে পাবনা পুলিশ সুপারের সম্মেলন কক্ষে এক সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপার জিহাদুল কবির জানান, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে পুলিশের একটি দল খুলনার ফুলতলা উপজেলার বেজেরডাঙ্গা গ্রামের ফেরদৌস মেম্বারের বাড়ি থেকে তুহিনকে গ্রেফতার করে। গ্রেফতারের পর শনিবার তাকে পাবনা নিয়ে আসা হয়।
পুলিশ সুপার জানান, গ্রেফতারের পর পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে তুহিন তার মা, খালা এবং ছোট ভাইকে হত্যার কথা স্বীকার করে। তুহিন পুলিশকে জানায়- তার খালাসহ অন্যরা তার স্ত্রী রুনাকে গালমন্দসহ নানাভাবে অত্যাচার করতো। এজন্য সে ক্ষিপ্ত হয়ে প্রথমে তার খালা নসিমনকে চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করে। এসময় তার মা ঠেকাতে আসলে মা ও পরে ছোট ভাইকে কুপিয়ে হত্যা করে। হত্যার পর পরই সে বাড়ি থেকে পালিয়ে খুলনা চলে যায়।
পাবনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার গৌতম কুমার বিশ্বাস জানান, শনিবার বিকালে তুহিনকে হাজির করা হয় পাবনার আমলী আদালত-৩ এ।এসময় আদালতের বিচারক আব্দুল মমিনের কাছে তুহিন ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমুলক জবানবন্দি দেয়। জবানবন্দি শেষে তাকে জেল হাজতে পাঠানো হয়।
এদিকে তুহিন একাই তিন জনকে হত্যা করেছে নাকি আরো কেউ ছিল তার সঙ্গে এবং এজন্য তাকে রিমান্ডে নেয়ার দরকার আছে কিনা-এমন প্রশ্নের জবাবে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জানান, যেহেতু তুহিন নিজেই হত্যা করেছে বলে স্বীকার করেছে, সেজন্য তাকে আর রিমান্ডে নেয়ার দরকার নাই। তুহিনই এ মামলার একমাত্র আসামি বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
গত বুধবার ভোর ৪টার দিকে পাবনার বেড়া উপজেলার সোনাপদ্মা চারাবটতলা গ্রামে মা, খালা এবং ছোট ভাইকে কুপিয়ে হত্যার অভিযোগ উঠে ওই গ্রামের মিঠু সেখের ছেলে তুহিনের (২২) বিরুদ্ধে। বুধবার সকালে বেড়া মডেল থানা পুলিশ মিঠু সেখের বাড়ির উঠান থেকে তিনজনের মরদেহ উদ্ধার করে।
নিহতরা হলো, মিঠু সেখের স্ত্রী (তুহিনের মা) বুলি বেগম(৪০), তুহিনের ছোট ভাই তুষার (১০) এবং তুহিনের খালা মরিয়ম ওরফে নসিমন (৫০)। মরিয়ম একই গ্রামের আবু বকরের স্ত্রী। আবু বকর ঢাকায় একটি কোম্পানিতে এবং মিঠু সেখ খুলনা জুট মিলে শ্রমিকের কাজ করেন।
বেড়া মডেল থানার ওসি মোজাফ্ফর হেসেন জানান, বাড়িতে এক ঘরে মিঠু সেখের স্ত্রী বুলি বেগম, বুলি বেগমের বড় বোন মরিয়ম ওরফে নসিমন এবং ছোট ছেলে তুষার ঘুমিয়ে ছিল। বড় ছেলে তুহিন এবং তার স্ত্রী রুনা (২০)পাশের ঘরে ছিল। বুধবার ভোর আনুমানিক ৪টার দিকে তুহিন একটি ধারালো অস্ত্র নিয়ে তার মায়ের ঘরে ঢোকে এবং মা, খালা ও ছোট ভাইকে ঘুম থেকে টেনে তুলে উঠানে নিয়ে এসে তিনজনকে কুপিয়ে হত্যা করে।
এসময় তুহিনের স্ত্রী রুনা ঠেকাতে আসলে তাকে সে তাড়িয়ে দেয়। রুনা ভয়ে বাড়ি থেকে দৌঁড়ে প্রথমে একই গ্রামে বাবার বাড়িতে এবং পরে বাবা-মার সঙ্গে নিয়ে পাশের গ্রামে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আলম খানের বাড়িতে চলে যায়। আলম খানের বাড়িতে গিয়ে সে তিনজনকে হত্যাকাণ্ডের কথা জানায়।
এরপর প্রতিবেশীরা ঘটনাস্থলে ছুটে আসে। কিন্ত তার আগেই তুহিন পালিয়ে যায়। খবর পেয়ে সকালে বেড়া মডেল থানার পুলিশ তিনজনের লাশ উদ্ধার করে। উৎস: যুগান্তর।