‘আমি আমার স্ত্রী তুলিকে হত্যা করলাম’
মাত্র কয়েক মিনিট আগে আমি আমার স্ত্রী তুলিকে হত্যা করলাম। নিজের হাতে বিষ মিশানো দুধ খাইয়েছি ওকে। অবাক করা বিষয় কি জানেন? তুলি জানতো আজ আমি ওকে খুন করবো।
এমনকি ও এটাও জানতো যে দুধে বিষ আছে। তারপরও ও আমার হাত থেকে দুধটা হাসি মুখে খেয়ে নিলো। দুধ খেয়ে বললো আমি তোমাকে শেষ বারের মত জড়িয়ে ধরে তোমার চোখে একটা চুমো খাবো?
আমি কিছু বলতে পারিনি। কি বলবো? শুধু ওকে শক্ত করে বুকের মাঝে জড়িয়ে ধরেছিলাম। ও আমার চোখে একটা চুমো দিলো। তারপর আমার বুকে ঘুমিয়ে পরলো। আমি ওকে বিছানায় শুইয়ে দিয়ে আসলাম। এখন আমি লিখছি। কি লিখছি? জীবনের কিছু কথা লিখছি। তুলিকে খুন করার কোন কারন আমার কাছে নাই।
কারন তুলির মত স্ত্রী পাওয়া যে কোন পুরুষের জন্য ভাগ্যের বিষয়। যে মেয়ে তার সবটা দিয়ে তার স্বামীকে ভালোবাসে, শ্বশুর শ্বাশুরির সম্মান করে , নিজের সংসারটাকে মন্দিরের ন্যায় পুজ্যনীয় মানে সে মেয়েকে পাওয়া সত্যিই ভাগ্যের বিষয়। তাহলে কি তুলির কোন পরকিয়া ছিলো ? ছিঃ এ কথা মুখে আনাও পাঁপ। কারন তুলি ছিলো যথেষ্ট ধার্মিক মেয়ে। ওর পুরো পৃথিবী জুড়ে ছিলাম শুধু আমি আর আমাদের সংসার।
তাহলে আমি তুলিকে মারলাম কেন? হুম শুনলে আপনাদের বুক কেঁপে উঠবে। তুলিকে মেরেছি কারন আমার মা বলেছে। এখন আপনারা বলবেন মা বলেছে বলে আমি তুলিকে মেরে কেন ফেললাম? কারন মা তুলিকে ঘৃনা করতো আর আমি আমার মাকে খুব ভালোবাসি। মা কখনোই তুলিকে পছন্দ করতেন না। তার একমাত্র কারন হচ্ছে তুলি অনাথ।
ওর জন্ম পরিচয়ের ঠিক নাই। ছোট বেলা থেকে অনাথ আশ্রমে বড় হয়েছে। নিজের অভিজ্ঞতা আর কঠিন প্রচেষ্টায় তুলি অনার্স কমপ্লিট করেছে।ভালোবেসে বিয়ে করেছিলাম আমরা। আমাদের ভালোবাসাটা বাবা মা কখনোই মেনে নেয়নি। তবুও তাদের অমতে জোড় করে আমি তুলিকে বিয়ে করি। তুলিও তাদের অমতে বিয়ে করতে চায়নি কিন্তু আমার জেদের কাছে হার মানতে হলো।
আমাদের বিয়ের পর তুলি আমাদের বাড়ির সবার খুব খেয়াল রাখতো। বিশেষ করে বাবা মায়ের। কিন্তু তবুও মা পান থেকে চুন খসলেই তুলিকে যা তা বলে গালি দিতো। মাঝে মাঝে তুলিকে অবৈধ পাঁপও বলতো। তুলি কখনো তাদের মুখের উপর কোন কথা বলতো না।
চুপচাপ নিচের দিকে তাকিয়ে থাকতো। ওর কষ্টটা আমি আমার ভালোবাসা দিয়ে ভুলাতে চেষ্টা করতাম। তুলিকে আমি কয়েকবার বলেছিলাম চলো আমরা আলাদা বাসায় উঠি! কিন্তু ও বলতো বাবা মা যতই বকা দিক তারা কিন্তু বাবা মাই।
জন্মের পর থেকে তুলি কখনো বাবা মায়ের স্নেহ ভালোবাসা পায়নি। ভেবেছিলো বিয়ের পর সেটা পুরন হবে। কিন্তু কথায় আছে না তৃষ্নার্ত যেখানেই যায় সাগর শুকিয়ে যায়। তখন যদি তুলি আমার কথামত আলাদা বাসায় যেতে রাজি হতো তাহলে ওর মৃত্যু হতো না।
কিছুদিন থেকে মা খুব অসুস্থ ছিলেন। তুলি মাকে খুব সেবা যত্ন করতো। সেদিন মা আমায় রুমে একা ডাকলেন। আমি যাওয়ার পর মা বললো মাঃ বাবা তোর কাছে কিছু চাইবো দিবি? আমার শেষ চাওয়া। শেষ ইচ্ছা। মায়ের কথায় খুব কষ্ট হচ্ছিলো।
শত হলেও নিজের মা তো? আমিঃ হ্যা বলো মা। মাঃ আগে আমাকে ছুয়ে প্রতিজ্ঞা কর যে আমি যা বলবো তাই শুনবি। আমিঃ ঠিক আছে মা প্রতিজ্ঞা করলাম। ( মাকে ওয়াদা করাটাই আমার জীবনের চড়ম কাল হয়ে দাড়ালো। )
মাঃ তুই ঐ পাঁপকে বিদায় কর। নয়তো মেরে ফেল। ও যতদিন থাকবে আমি মরেও শান্তি পাবো না। মাকে কিছু বলতে চাইছিলাম কিন্তু মা বলতে দিলো না। মা বললেন দেখ তুই আমাকে ছুয়ে প্রতিজ্ঞা করছিস। এখন বল তোর মা বড় না বৌ।
আমি কোন কথা না বলে রুম থেকে চলে আসতে নিলাম। দেখলাম তুলি পানি হাতে দাড়িয়ে আছে। ওর চোখ থেকে পানি পড়ছে। মানে ও সবটা শুনেছে। আমি কোন কথা না বলে রুমে চলে আসলাম। সেদিন রাতে তুলি নিজে থেকেই আমায় অনেক আদর করলো।
ভালোবাসায় ভরিয়ে দিলো আমার মনটাকে। আমায় পরিপূর্ন করলো ওর রাঙানো ভালোবাসায়। শেষ রাতে তাহাজ্জুত নামাজ পড়ে আমায় বললো তুলিঃ তোমার জায়গায় আমি থাকলে আমি আমার মায়ের কথা মানতাম। আমি অবাক দৃষ্টিতে তুলির দিকে তাকিয়ে ছিলাম।
আমার চোখ দুটো দিয়ে পানি পরছিলো। তুলি আমার চোখের নিচে চুমো দিয়ে আমার চোখের পানি গুলোকে শুষে নিলো। গত দুদিন তুলি আমায় এত ভালোবাসা দিয়েছে যা কল্পনার বাইরে। হয়তো এটাই ওর শেষ ভালোবাসা। আর আজ আমি তুলিকে মারলাম। তুলি এটাতো জানতো যে আমি ওকে মারবো কিন্তু ও কি এটা বুঝতে
পারেনি যে আমি ওকে ছাড়া বাঁচবো না। ও কি ভেবেছে আমি মায়ের কথা শুনবো আর আমার ভালোবাসার মান রাখবো না? হুমমম তা কি হয়? আমি মায়ের কথায় যেমন তুলিকে মেরে ফেললাম। তেমনি তুলির ভালোবাসার মান রাখতে তুলির সাথে এক হয়ে এক সাথে দুজন পরপারে পাড়ি জমাবো।
জানি উপরওয়ালা আমায় মাফ করবে না। তুলিকে খেতে দেয়া অর্ধেক পরিমান দুধ আমি নিজের জন্য রেখেছিলাম। সেটা মাত্র খেলাম। মাকে কিছু কথা বলার আছে—– মা তুমি মা। মায়ের স্থান কাউকে দেয়া যায় না। আল্লাহর পর মায়ের স্থান।
কিন্তু মা , মা যদি কলিজা হয় স্ত্রী তবে হৃদয়। কলিজা ছাড়া যেমন মানুষ বাঁচতে পারে না তেমনি হৃদয় ছাড়াও বাঁচতে পারে না। দুজনই জীবনের অবিছেদ্দ অংশ। আমি তোমার কথা রাখলাম। সাথে আমার ভালোবাসার মর্যাদাও রাখলাম। মা
তোমার শেষ ইচ্ছাতো আমি পূরন করলাম। এবার তুমি আমার শেষ ইচ্ছা পূরন করবে মা? মা আমাকে আর তুলিকে এক জায়গাই পাশাপাশি কবর দিও। আর হ্যা মা তিনজনের জানাজা পড়িও। তিন জন কে সেটা ভাবছো তো?
আমি , তুলি আর আমাদের অনাগত সন্তান। হ্যা মা তুলি সেদিন তোমায় বলেছিলো না মা আপনাদের নাতি নাতনি থাকলে কেমন হতো? সেদিন তুমি তুলিকে বলেছিলে তোর সন্তান তোর মতই পাঁপ হবে। না মা আমাদের সন্তান পাঁপ না। ও আমার ওরশজাত সন্তান। আমার রক্ত ছিলো।
মা আমি জানি কাল তুমি খুব কাঁদবে। তোমার আর্তনাতে পুরো বাড়ি কেঁপে উঠবে। কিন্তু মা তোমার সন্তান মরেছে বলে তুমি এত কষ্ট পাবে তাহলে আমার সন্তানের জন্য আমার ঠিক কতটা কষ্ট হচ্ছে তা তুমি বুঝতে পারছো? জানো মা আজ তুলিকে মারার পর আমি বিছানার নিচ থেকে একটা কাগজ পাই। সেটা থেকেই আমি জানতে পারি আমি বাবা হতে চলেছি। না বাবা হতে চলেছিলাম।
রিপোর্টটা দুদিন পুরোনো। মানে তুলি জানতো বেবির কথা বললে ওকে আমি মারতে পারবো না। মা জানো তুলি মরার সময় কি বলেছে? মায়ের খেয়াল রেখো। পাগলিটা জানতেও পারবে না যে , মায়ের খেয়াল রাখার জন্য আমি থাকবো না।
মা জানো আজ শুধু তিনটা মানুষের মৃত্যু হলো না মৃত্যু হলো ভালোবাসার, বিশ্বাসের, ভরশার, স্নেহের , মমতার, মায়ার বাঁধনের আর সম্পর্কের। মা তুমি ভালো থেকো নিজের খেয়াল রেখো। আমার ঘুম পাচ্ছে। খুব ঘুম পাচ্ছে।
যাই তুলির পেটে একটা চুমো দিবো। কারন এতক্ষনে ওর ভিতরে থাকা আমাদের ছোট্ট সোনার হয়তো হ্যার্টবিট বন্ধ হয়ে গেছে। তারপর তুলিকে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে পরবো। শান্তির ঘুম। আর হ্যা। আমার আর তুলির মৃত্যুর জন্য কেউ দায়ী না। আমরা নিজেদের ইচ্ছায় দুনিয়া ছাড়লাম।
গল্পটি ফেসবুক থেকে সংগ্রহীত