ক্যানসার এড়াতে যে ১৩ খাবার খাবেন না
আপনার ডায়েট শুধুমাত্র আপনার শারীরিক সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে না, এর কারণে আপনার বিভিন্ন রোগও হতে পারে- তেমন একটি রোগ হচ্ছে ক্যানসার। কিছু খাবার নিয়মিত ভোজন আপনার ক্যানসার বিকশিত হওয়ার ঝুঁকি বৃদ্ধি করে। এ নিয়ে দুই পর্বের প্রতিবেদনের আজ থাকছে শেষ পর্ব।
* ব্যাগেল, সাদা পাউরুটি ও সাদা চাল
ইউনিভার্সিটি অব টেক্সাস এমডি অ্যান্ডারসন ক্যানসার সেন্টার অনুসারে, আপনি কখনো ধূমপান না করলেও কিছু উচ্চ গ্লাইসেমিক ইনডেক্স খাবার সমৃদ্ধ ডায়েট অনুসরণে আপনার ফুসফুস ক্যানসারের ঝুঁকি ৪৯ শতাংশ পর্যন্ত বাড়তে পারে। গবেষকদের মতে, উচ্চ গ্লাইসেমিক খাবার দ্রুত আপনার রক্ত শর্করা বৃদ্ধি করতে পারে এবং ফুসফুস ক্যানসারের বর্ধিত ঝুঁকির সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত ইনসুলিনের মতো গ্রোথ ফ্যাক্টরও বাড়াতে পারে। আপনার সকল ধরনের কার্বোহাইড্রেট পরিহার করা উচিত নয়। নিম্ন গ্লাইসেমিক ইনডেক্স অপশন বেছে নিন, যেমন- ১০০ শতাংশ স্টোন-গ্রাউন্ড হোল হুইট ব্রেড এবং রোলড বা স্টিল-কাট ওটস।
* খুব গরম কফি
ওয়ার্ল্ড হেলথ অর্গানাইজেশনের ইন্টারন্যাশনাল এজেন্সি ফর রিসার্চ অন ক্যানসারের বিজ্ঞানীদের মতে, কফি নিজে নিজে কার্সিনোজেনিক নয়। কিন্তু বিজ্ঞানীরা সতর্ক করেন: খুব উচ্চ তাপমাত্রার কফি (অথবা চা) পান খাদ্যনালীর ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়াতে পারে। এর মানে এই নয় যে, উচ্চ তাপমাত্রা কিছু কার্সিনোজেনিক কম্পাউন্ডকে অ্যাক্টিভেট করে বরঞ্চ খুব গরম পানীয় পানে আপনার গলা পুড়ে যাওয়ায় টিউমার বিকশিত হওয়ার দিকে ধাবিত করতে পারে। অ্যানালস অব ইন্টারনাল মেডিসিনে প্রকাশিত একটি গবেষণা অনুসারে, খুব গরম পানীয় পানে আপনার ক্যানসার হওয়ার ঝুঁকি পাঁচ গুণ বাড়তে পারে। তাই পানের পূর্বে আপনার পানীয়কে পরিমিত পরিমাণে ঠান্ডা করুন।
* মিষ্টি
ডায়েটারি চিনি বর্জন আপনার ক্যানসার হওয়ার ঝুঁকি কমাতে পারে। একটি গবেষণায় পাওয়া যায়, যেসব নারী সর্বোচ্চ পরিমাণে মিষ্টি খেয়েছেন তাদের স্তন ক্যানসার হওয়ার ঝুঁকি ২৭ শতাংশ বেড়েছে। যেহেতু গ্লুকোজ ও ইনসুলিন বৃদ্ধি পায়, সেহেতু তারা ইস্ট্রোজেনের মাত্রা বাড়াতে পারে- যা সম্ভবত স্তন ক্যানসারের দিকে নিয়ে যেতে পারে। নেচার কমিউনিকেশনস জার্নালে প্রকাশিত অন্য একটি গবেষণা থেকে জানা যায়, চিনি টিউমার বিকাশে প্ররোচিত করে। ক্যানসার কোষের বিকাশের জন্য দ্রুত প্রচুর শক্তি প্রয়োজন, যা সাধারণ কোষের তুলনায় অনেক বেশি। চিনি বেশি খাওয়া ক্যানসার কোষকে খাবার দেওয়ার সমতুল্য।
* দুগ্ধজাত খাবার
এটি বিশেষ করে পুরুষদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য: অত্যধিক দুগ্ধজাত খাবার আপনার প্রোস্টেট ক্যানসার হওয়ার ঝুঁকি বাড়াতে পারে। দুধ সবচেয়ে বেশি গবেষণা করা হলেও আইসক্রিম, পনির এবং দুগ্ধজাত খাবারও সমস্যার কারণ হতে পারে। হেলথলাইন অনুসারে, কিছু গবেষক ধারণা করছেন যে দুধের চর্বি, ক্যালসিয়াম ও হরমোন কন্টেন্টের কারণে দুধ গ্রহণ ও প্রোস্টেট ক্যানসার বিকাশের মধ্যে শক্তিশালী সম্পর্ক থাকতে পারে, যেখানে অন্যদের থিওরি হচ্ছে: দুধ বা দুগ্ধজাত খাবার গ্রহণ ভিটামিন ডি ও টেস্টোস্টেরনের মাত্রা পরিবর্তন করতে পারে। ২০১৬ সালের একটি গবেষণা দুগ্ধজাত খাবার ও ক্যানসারের মধ্যে সম্পর্কের বিষয়ে কোনো মীমাংসা দিতে পারেনি; কিন্তু যদি আপনি প্রোস্টেট ক্যানসারের ঝুঁকিতে থাকেন অথবা ইতোমধ্যে এটি হয়ে থাকে, তাহলে চিকিৎসকের সঙ্গে আপনার ডায়েট নিয়ে কথা বলুন।
* মাইক্রোওয়েভ পপকর্ন
সমস্যা পপকর্নে নয়, সমস্যা হচ্ছে পপকর্ন ব্যাগে- যার ভেতরে একটি কেমিক্যাল ব্যবহার করা হয়, যা কার্নেলকে ব্যাগের সঙ্গে লেগে যাওয়া থেকে বিরত রাখে। ব্যাগে তাপ দিলে আবরণ গলে গিয়ে পারফ্লুরুকট্যানিক অ্যাসিড উৎপন্ন হয়, যার সঙ্গে লিভার ও প্রোস্টেট ক্যানসারের বর্ধিত ঝুঁকির সম্পর্ক পাওয়া গেছে। এই কেমিক্যাল এড়াতে নিজে নিজে পপকর্ন তৈরি করুন।
* স্যাচুরেটেড ফ্যাট
অতীতের গবেষণাগুলোতে ডায়েটারি কোলেস্টেরল ও কোলন ক্যানসারের মধ্যে সংযোগ পাওয়া গেলেও গবেষকরা এখনো এর পেছনে প্রকৃত মেকানিজম কি তা বোধগম্য হতে পারেননি। ইউসিএলএ’র গবেষকরা ইঁদুরের মধ্যে কোলেস্টেরল নিয়ে গবেষণা করে পেয়েছেন যে, উচ্চমাত্রার কোলেস্টেরল ইন্টেস্টাইনাল স্টেম কোষের রেপ্লিকেশন বৃদ্ধি করেছে, যা টিউমার কোষের বিকাশ ১০০ গুণ দ্রুত করেছে। হ্যাঁ, আপনি ঠিক পড়ছেন: ১০০ গুণ দ্রুত করেছে। অতীতের গবেষণাগুলো ধারণা দিয়েছে যে, উচ্চ স্যাচুরেটেড ফ্যাট সমৃদ্ধ ডায়েটের সঙ্গে বিভিন্ন ধরনের ক্যানসার যেমন- ফুসফুস ক্যানসার, ব্রেস্ট ক্যানসার ও প্রোস্টেট ক্যানসারের ঝুঁকি বৃদ্ধির সম্পর্ক থাকতে পারে। অতি সাম্প্রতিক ধারণা হচ্ছে, আপনার ডায়েটারি ফ্যাটের উৎস সবচেয়ে বেশি ভূমিকা পালন করে।
* সোডা
অস্ট্রেলিয়ান গবেষকদের মতে, প্রতিদিন শুধুমাত্র একটি সফট ড্রিংক নানা রকম ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ায়, যেমন- যকৃত ক্যানসার, প্রোস্টেট ক্যানসার, ডিম্বাশয় ক্যানসার ও পিত্তকোষ ক্যানসার। মনে করবেন না যে, আপনি নিরাপদ ডায়েট সোডা নির্বাচন করেছেন: অতীতের গবেষণায় কৃত্রিম সুইটেনারের সঙ্গে স্থূলতা, স্ট্রোক, ডিমেনশিয়া ও ক্যানসারের সংযোগ পাওয়া গেছে।
তথ্যসূত্র : রিডার্স ডাইজেস্ট