শনিবার, ২৩শে জুন, ২০১৮ ইং ৯ই আষাঢ়, ১৪২৫ বঙ্গাব্দ

বাঞ্ছারামপুরে পায়ে হাটার ভালো রাস্তাটুকুনও অবশিষ্ট নেই!

ফয়সল আহমেদ খান, বাঞ্ছারামপুর (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) প্রতিনিধি: জুন মাস।মুটামুটি শুষ্ক মৌসুম। ঝড় বাদল তেমন নেই।এমনি দিনে ঈদের পর দিন(রবিবার,সকাল) ব্রাহ্মনবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুর উপজেলার রুপসদী ইউপির হোগলাকান্দিতে দীর্ঘ ৫ বছর পর সৌদি ফেরত সোবহান মিয়া সপরিবারে সিএনজি যোগে যাচ্ছিলেন একই উপজেলার উজানচর ইউনিনের কালিকাপুরে শশুড়বাড়িতে।বিধিবাম!শুরুতে হোচট খেলেন নিজ গ্রাম হোগলাকান্দিতেই।তার পরিবারকে বহন করা সিএনজিটি পাঠামারা ব্রীজের মধ্যখানে এক বিশাল গর্তে চাকা দেবে যায়।তিনি ও তার পরিবারের তেমন কোন ক্ষয় ক্ষতি হয়নি।১ ঘন্টা শেষে সিএনটিটি তার চালক টেনে তুলে চাকা পুনরায় রাগিয়ে পুনরায় সকাল ১১ টায় যাত্রা শুরু করেন বাচ্চাদের নানু বাড়ির উদ্দেশ্যে।ফের সমস্যা ছলিমাবাাদ ইউপির মীরপুর গ্রামের রাস্তায় আসার পর।ভাঙ্গা রাস্তায় চাকা দেবে যায় এবং গাড়ির ব্রেকের তার ছিড়ে যায়।ঠিকঠাক করে সাড়ে বারোটায় পুন.যাত্রা শুরু।ঝাকিতে ঝাকিতে তার ৪ বছরের শিশু কন্যা এব্ং স্ত্রী-পুত্র কাহিল।উজানচর কোনক্রমে পাড়ি দিয়ে রাধারনগরে এসে দেখেন এখানে দৃশ্যমান সড়ক নেই।আছে সড়কের উপর নদী।সেই নদীতে রাজহাঁস ভাসছে,খেলা করছে।তিনারা সিএনজি চালককে ছেড়ে দেন।দ্বিগুন ভাড়া দিয়ে।এরপর শুরু হাটা।হেটে হেটে যান কালিকাপুর গন্তব্যস্থলে।সেখানে দেখা সোবহান মিয়ার সাথে।তিনি আজ সোমবার জানালেন গতকালের তিক্ত অভিজ্ঞতা।
বাঞ্ছারামপুর উপজেলার প্রায সাড়ে ৪ লাখ মানুষ নিত্যদিন নিত্যঘন্টা মুখোমুখি হচ্ছেন ১৩টি ্ইউনিয়নের প্রতিটি মানুষ ভাঙ্গাচুড়া রাস্তা নিয়ে।ঈদ এলাকার মানুষের কাছে তেতোঁ হয়ে গেছে বলে জানায় যুবক-যুবতীরা।তারা বলেন,ভাঙ্গা রাস্তা দিয়ে কোন গাড়ির চালক গাড়ি চালাতে রাজি হন না।তিন/চারগুন ভাড়া দিয়ে রজি করানো হলেও ফিরতি পথে বাধে গাড়ি না পাওয়ার আশংকা।গাড়ি তো দূরে থাক,পায়ে হাটার রাস্তাটুকুরও ভালো নেই-বলেন সোনারামপুর ইউপির সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান জালু মাষ্টার।
রাস্তা অভিযোগ নিয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুর উপজেলার ১৩টি ইউনিয়নের মধ্যে অর্ধেক উপজেলা পরিদর্শন করেন।দেখা গেছে,আজ সোমবার উজানচর ইউনিয়নের রাধানগরে হোমনা-বাঞ্ছারামপুরের পুরো ১২ কি:মি: রাস্তা আর আস্তা নেই।একে তো রাস্তার প্লাষ্টার-পিচ উঠে এবরো-থেবড়ো হয়ে আছে,তার উপর এই শুকনো মৌসুমে ড্রেনেজ ব্যবস্থা ভাল নয় বলে ঢাকা যাবার আন্তঃ উপজেলার এই জনগুরুত্বপূর্ন সড়কটিতে জমেছে পানি। এলাকার মুরুব্বী হাজী সফিকুল ইসলাম স্থানীয় সংসদ সদস্যের দৃষ্টি কামনা করে বলেন,-“এমপি তাজ সাহেব আগে ঢাকা হতে এই রাস্তা দিয়ে যখন আসা যাওয়া করতেন,তখন আমাদের বলতে হতো না।রাস্তা সবসময় ঠিক থাকতো।শুনেছি,এখন তিনি হেলিকপ্টারে আসা যাওয়া করেন।ঈদের পর দিনও না-কি তিনি তার বাড়িতে আসেন হেলিকপ্টারে চড়ে।তাই সড়ক এখন বেহাল’’।
ভিন্ন দিকে,ঢাকা-নরসিংদী যাবার বিকল্প পথ বাঞ্ছারামপুর- টু-মরিচাকান্দির ১১কি:মি: সড়ক দেখতে যেয়ে মনে হয়েছে,‘গাড়ি চলবে দুরে থাক,পায়ে হাটাই দুষ্কর।দেখা গেছে,এই সড়ক দিয়ে স্কুলের মেয়েরা গাড়ি/রিক্সার পরিবর্তে পায়ে হেটে দশদোনা হতে বাঞ্ছারামপুর সদরে যাচ্ছে।এক পথিমধ্যে এক বৃদ্ধ আঞ্চলিক ভাষায় বললেন,- ‘বাবা ভাঙ্গা এই রাস্তা দিয়া হাটতেও কষ্ট হয়।এমপি সাবেরে কন না,রাস্তাগুলান ঠিক কইরা দিতে’।
বেসামাল অবস্থা উপজেলার দরিয়াদৌলত,দূর্গারামপুর,ছলিমাবাদ,বাঞ্ছারামপুর টু জাতীয় ব্রীজ নামেখ্যাত ওয়াইব্রীজ পর্যন্ত,পৌর এলাকা হতে ধারিয়ারচর, ফরদাবাদ, পাহাড়িয়াকান্দি,তেজখালি ইউনিয়ন-যেদিকে তাকাই কেবল ভাঙ্গা পীচ বিহীন সড়ক।
এ বিষয়ে কথা হয় স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের সাথে।উপজেলা প্রকৌশলী জাহাঙ্গীর আলম বলেন,-‘উপজেলায় বদলী হয়ে আমি সদ্য যোগদান করেছি।সরেজমিনে দেখে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মুস্তাফিজুর রহমান মুঠোফোনে বলেন,-‘উপজেলা পর্যায়ে সড়ক মেরামত ইনশাল্লাহ বর্ষার আগেই শুরু হবে’।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া-০৬ বাঞ্ছারামপুর আসনের সংসদ সদস্য ক্যাপ্টেন এবি তাজুল ইসলাম (অবঃ)এমপি বলেন-‘গত মৌসুমে অতিবৃষ্টির কারনে সারাদেশেই সড়কগুলোর ক্ষতি হয়েছে।কেবল বাঞ্ছারামপুরে নয়।তবে,একনেকে গ্রামীন সড়ক ও অবকাঠামো মেরামত,সংস্কার ও রক্ষণাবেক্ষনের জন্য প্রধানমন্ত্রী ৭ হাজার কোটি টাকা বরাদ্ধ দিয়েছেন।খুব শীঘ্রই আমার এলাকার মানুষের কষ্ট লাঘব হবে।

Print Friendly, PDF & Email