ধরা পড়েছেন গুলশান হামলার ‘অস্ত্র জোগানদাতা’ সাগর
গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে নজিরবিহীন জঙ্গি হামলায় অস্ত্র জোগানদাতা হিসেবে যাকে চিহ্নিত করেছিল পুলিশ, সেই হাদিসুর রহমান সাগর ধরা পড়েছেন।
বৃহস্পতিবার ভোররাতে বগুড়া থেকে নব্য জেএমবির নেতা সাগরের (৩৫) সঙ্গে আকরাম হোসেন নিলয় (২৫) নামে আরেকজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
নিলয় গত বছরের ১৫ অগাস্ট ঢাকার পান্থপথের হোটেল ওলিও ইন্টারন্যাশনালে বিস্ফোরণের ঘটনায় অর্থের জোগানদাতা বলে পুলিশের দাবি। নিলয়ের বাড়ি কিশোরগঞ্জে, সাগরের বাড়ি জয়পুরহাটে বলে পুলিশ জানিয়েছে।
গ্রেপ্তারের পর দুজনকে ঢাকায় আনা হয়েছে। সাগরকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আদালতের মাধ্যমে সাত দিনের হেফাজতে নিয়েছে গুলশান হামলার তদন্ত সংস্থা কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি)।
দুই বছর আগে হলি আর্টিজান বেকারিতে হামলা চালিয়ে ১৭ বিদেশিসহ ২২ জনকে হত্যার এই মামলায় অভিযোগপত্র এখনও জমা পড়েনি।
এজন্য অস্ত্র জোগানদাতা সাগরকে গ্রেপ্তার করতে না পারাকে কারণ দেখিয়েছিলেন কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের প্রধান মনিরুল ইসলাম।
এখন সাগর গ্রেপ্তার হওয়ার পর এই ইউনিটের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “অভিযোগপত্র দেওয়ার প্রস্তুতি মোটামুটি সারা হয়েছিল। এখন সাগর গ্রেপ্তার হওয়ায় তা একটু পিছিয়ে যেতে পারে।”
বগুড়ার পুলিশ কর্মকর্তারা জানান, রাত দেড়টার দিকে শিবগঞ্জ উপজেলার কিচক থেকে সাগর ও নিলয়কে গ্রেপ্তার করা হয়। তারা অন্য কোথাও যাওয়ার উদ্দেশ্যে কিচক বাজারে অবস্থান করছিলেন।
বগুড়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আরিফুর রহমান মণ্ডল সাংবাদিকদের বলেন, “গোপন সূত্রে খবর পেয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।
“দুজনই হাইপ্রোফাইল জঙ্গি। তাদেরকে গ্রেপ্তারের খবর কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটকে (সিটিটিসি) জানানো হয়। সিটিটিসি’র নির্দেশে তাদেরকে রাতেই ঢাকায় পাঠানো হয়।”
ঢাকায় আনার পর গুলশান হামলার মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সিটিটিসির পরিদর্শক হুমায়ুন কবির ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে নিয়ে যান সাগরকে। ১০ দিন পুলিশ হেফাজতের আবেদনও আদালতের কাছে করেন তিনি।
মহানগর হাকিম রায়হানুল ইসলাম শুনানি নিয়ে সাতদিন হেফাজতের আদেশ দেন বলে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান হুমায়ুন কবির।
সাগরকে নিয়ে এই মামলায় এই পর্যন্ত সাতজনকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে বলে তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। এর মধ্যে পাঁচজন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।
হামলায় জড়িত যাদের বিভিন্ন অভিযানে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, তাদের মধ্যে রয়েছেন মিজানুর রহমান ওরফে বড় মিজান, জাহাঙ্গীর আলম ওরফে ‘রাজীব গান্ধী’, রাশেদুল ইসলাম রাশেদ ওরফে র্যাশ, রাকিবুল হাসান রিগান, সোহেল মাহফুজ।
সন্দেহভাজন আসামিদের মধ্যে তামিম চৌধুরী, বাশারুজ্জামান চকলেট, ছোট মিজানসহ কয়েকজন মারা গেছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানে।
নর্থসাউথ ইউনিভার্সিটির সাবেক শিক্ষক হাসনাত করিমকেও এই ঘটনায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তিনি এখনও কারাগারে রয়েছেন। তবে তার সম্পৃক্ততার বিষয়ে এখনও স্পষ্ট কিছু বলেনি পুলিশ।