তাহাজ্জুদের দু’আ!
পৃথিবীর ঘুমিয়ে থাকা ভোরে, নিরব মুহূর্তে উঠে, আল্লাহর সামনে দাঁড়াতে পারা বড় সৌভাগ্যের বিষয়। এমন পবিত্র সময়ের গুরুত্ব ভাষায় প্রকাশ করা মানুষের সাধ্যাতীত। আবু হুরায়রা রা. বলেন, নবীজি সা. বলেছেন,
রাতের যখন শেষ তৃতীয়াংশে আমাদের রব প্রথম আকাশে নেমে আসেন। বলেন, কে আমার কাছে দু’আ করবে? আমি তার দু’আ কবুল করব। কে আমার কাছে প্রার্থনা করবে, আমি চাওয়া পূরণ করব। কে আমার কাছে ক্ষমা চাইবে, আমি তাকে ক্ষমা করব। (বুখারি, মুসলিম)
এমন পবিত্র ক্ষণে নবীজি সালাতে দাঁড়িয়ে যেতেন। প্রিয় রবের একান্ত সান্নিধ্যে তাহাজ্জুদ আদায় করতেন। আমরা সাধারণত তাহাজ্জুদ আদায় করে দু’আ করি। কিন্তু নবীজি তাহাজ্জুদের আগেও দু’আ করতেন। ইবনে আব্বাস রা বলেছেন,
كَانَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم إِذَا تَهَجَّدَ مِنَ اللَّيْلِ، قَالَ
নবীজি রাতের বেলা তাহাজ্জুদ আদায় করার সময় বলতেন,
اللَّهُمَّ لَكَ الحَمْدُ أَنْتَ نُورُ السَّمَوَاتِ وَالأَرْضِ، وَلَكَ الحَمْدُ أَنْتَ قَيِّمُ السَّمَوَاتِ وَالأَرْضِ، وَلَكَ الحَمْدُ أَنْتَ رَبُّ السَّمَوَاتِ وَالأَرْضِ وَمَنْ فِيهِنَّ، أَنْتَ الحَقُّ، وَوَعْدُكَ الحَقُّ، وَقَوْلُكَ الحَقُّ، وَلِقَاؤُكَ الحَقُّ، وَالجَنَّةُ حَقٌّ، وَالنَّارُ حَقٌّ، وَالنَّبِيُّونَ حَقٌّ، وَالسَّاعَةُ حَقٌّ،
اللَّهُمَّ لَكَ أَسْلَمْتُ، وَبِكَ آمَنْتُ، وَعَلَيْكَ تَوَكَّلْتُ، وَإِلَيْكَ أَنَبْتُ، وَبِكَ خَاصَمْتُ، وَإِلَيْكَ حَاكَمْتُ، فَاغْفِرْ لِي مَا قَدَّمْتُ وَمَا أَخَّرْتُ، وَمَا أَسْرَرْتُ وَمَا أَعْلَنْتُ، أَنْتَ إِلَهِي لاَ إِلَهَ إِلاَّ أَنْتَ
“হে আল্লাহ! আপনার জন্যেই সমস্ত প্রশংসা। আপনি আসমান ও যমীনের নুর। সমস্ত প্রশংসা আপনারই জন্যে। আপনি আসমান ও যমীনের নিয়ন্তা। আপনার জন্যেই সমস্ত প্রশংসা। আপনি আসমান ও যমীন ও এতদুভয়ের মাঝে যা আছে, সবকিছুর রব। আপনিই হক। আপনার ওয়াদাও হক। আপনার কথা হক। আপনার সাথে সাক্ষাতও হক। জান্নাত হক। জাহান্নাম হক। নবীগণ হক। কেয়ামত হক।
হে আল্লাহ! আপনার কাছেই আত্মসমর্পণ করেছি। আপনি প্রতিই ঈমান এনেছি। আপনার উপরই তাওয়াক্কুল করেছি। আপনার কাছেই ফিরে এসেছি। আপনার সাহায্যেই (বাতিলের বিরুদ্ধে) বিতর্ক করি। আপনার কাছেই বিচারপ্রার্থী হই। আমার আগে পরের, প্রকাশ্য অপ্রকাশ্য সমস্ত গুনাহ মাফ করে দিন। আপনি আমার ইলাহ। আপনি ছাড়া আর কোনও ইলাহ নেই।” (বুখারী)
কী অসাধারণ দু’আ। এমন একটা দু’আ শুনে, রাব্বে কারীম খুশি না হয়ে পারেন! এমন দু’আ পড়লেই বোঝা যায়, সাধারণ কারও কাছ থেকে এই দু’আ আসে নি। দু’আটা বুঝে বুঝে পড়া শুরু করলেই, কেমন যেন গা শিউরে ওঠে। আমার ঈমান, আমার আকীদা সবই যেন পরিশুদ্ধ বিশুদ্ধ হয়ে উঠতে শুরু করে। রাব্বে রাহীমের প্রতি মহব্বত ও শ্রদ্ধায় মাথা আপনিই নুয়ে আসে।
রাতের গভীরে এমন দু’আ পড়ার মজাই আলাদা। আমি আর শুধু আমার রব। আমি আর শুধু আমার মাহবুব। আমি আর শুধু আমার প্রিয় প্রতিপালক। তাই আসুন প্রিয় পাঠক, একদিন পরীক্ষা করেই দেখা যাক না হয়!
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম।