সোমবার, ১৮ই জুন, ২০১৮ ইং ৪ঠা আষাঢ়, ১৪২৫ বঙ্গাব্দ

অব্যবস্থাপনাও দায়ী কুলখানিতে পদদলনে মৃত্যুর জন্য : পুলিশ

চট্টগ্রাম প্রতিনিধি : চট্টগ্রামে এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরীর কুলখানিতে পদদলিত হয়ে ১০ জনের প্রাণহানির জন্য আয়োজকদের অব্যবস্থাপনারও দায় রয়েছে বলে পুলিশি তদন্তে উঠে এসেছে।

গত সোমবারের ওই ঘটনার তদন্ত শেষে বৃহস্পতিবার রাতে চট্টগ্রামের পুলিশ কমিশনার ইকবাল বাহারের কাছে প্রতিবেদন জমা দিয়েছে কমিটি।

কমিটির প্রধান মহানগর পুলিশের উপ-কমিশনার (দক্ষিণ) এস এম মোস্তাইন হোসেন বলেন, অতিরিক্ত ভিড়ের পাশাপাশি অব্যবস্থাপনা ও রীমা কমিউনিটি সেন্টারে নির্মাণ ত্রুটির কারণে এই ঘটনা ঘটেছে।

“সেখানে যে পরিমাণ মানুষ হয়েছে, তাদের সামাল দিতে স্বেচ্ছাসেবক ছিলেন প্রয়োজনের তুলনায় কম।”

এছাড়া ওই কমিউনিটি সেন্টারের প্রবেশ মুখে নির্মাণ ত্রুটি না থাকলে এ ধরনের ঘটনা ঘটত না বলে মনে করছেন তারা।

নির্মাণ ত্রুটি না সারা পর্যন্ত কমিউনিটি সেন্টারটি বন্ধ রাখতে বলেছে পুলিশের তদন্ত কমিটি। এছাড়া ভবিষ্যতে বড় অনুষ্ঠান হলে লোকসংখ্যা কেমন হবে, তার ভিত্তিতে স্থান নির্ধারণসহ ছয়টি সুপারিশ করেছে কমিটি।

গত সোমবার বন্দর নগরীর আশকার দীঘির পাড়ে ওই কমিউনিটি সেন্টারে আওয়ামী লীগ নেতা মহিউদ্দিন চৌধুরীর কুলখানির মেজবানে হুড়োহুড়িতে পদদলিত হয়ে অন্তত ১০ জন নিহত হন, আহত হন অনেকে।

এই ঘটনাটি পূর্ব পরিকল্পিত বলে আওয়ামী লীগেরই কোনো কোনো নেতার সন্দেহের প্রেক্ষাপটে মহিউদ্দিনপুত্র মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল বলেছিলেন, আসলে কী ঘটেছিল, তা জানতে সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে ফল দেখার অপেক্ষায় আছেন তিনি।

ওই ফুটেজ দেখে মঙ্গলবার মহানগর পুলিশের সহকারী কমিশনার (কোতোয়ালি জোন) জাহাঙ্গীর আলম বলেছিলেন, “সিসিটিভি ফুটেজে দেখা গেছে, অনেক লোক বাইরে অপেক্ষা করছিল, ভেতরে যত জন ছিল, তার চেয়ে বাইরে রাস্তায় বেশি লোক অবস্থান করছিল। একটা সময় স্বেচ্ছাসেবকরা গেইট খুলে দেওয়ায় এক সঙ্গে বিপুল সংখ্যক লোক ঢোকার চেষ্টা করে।

“পাশাপাশি কমিউনিটি সেন্টারের প্রবেশ পথে তিন-চার ফুট ঢাল ‍হওয়ায় একসঙ্গে তারা ঢুকতে গেলে ভারসাম্য রাখতে না পেরে নিচের দিকে পড়ে যায়।”

রীমা কমিউনিটি সেন্টারের প্রবেশ পথ বেশ খানিকটা ঢালু। ভবনের দুটি ফটকের মধ্যে পশ্চিম পাশের প্রথম ফটকটি থেকে মূল ভবন প্রায় ১০ ফুট নিচে। মূল ফটক দিয়ে ঢোকার পর ওই ঢালু অংশ পার হয়ে মূল ভবনে যেতে হয়। সেখানেই ভিড়ের মধ্যে পদদলনের ঘটনা ঘটে।

জনপ্রিয় রাজনৈতিক নেতা, সাবেক মেয়র মহিউদ্দিনের কুলখানিতে ১৩টি স্থানে মেজবানের আয়োজন করে পরিবার, যার প্রতিটিতেই ছিল ভিড়। রীমা কমিউনিটি সেন্টারে আয়োজন ছিল যারা গোমাংস খান না, তাদের জন্য।

দুপুরে তিনটি ব্যাচের খাওয়ার পর বাইরে থাকা লোকজন হুড়মুড় করে ঢুকতে শুরু করলে পদদলনের ঘটনা ঘটে।

রীমা কমিউনিটি সেন্টারে মেজবানের ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে ছিলেন আন্দরকিল্লার ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও নগর আওয়ামী লীগের উপ-দপ্তর সম্পাদক জহরলাল হাজারী।

তিনি ঘটনার পর বলেছিলেন, সেখানে তারা ১৩ হাজারের মতো মানুষের খাবারের আয়োজন করেছিলেন।

“দুপুরে খাবার পরিবেশন শুরু হওয়ার পর তিনটি ব্যাচের খাওয়া শেষ হয়। একটি ব্যাচের খাওয়া তখন চলছিল। এরপর বসার জন্য অনেকে বাইরে অপেক্ষা করছিল। প্রচণ্ড ভিড়ের মধ্যে এক সময় পুলিশ ও স্বেচ্ছাসেবকদের ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে লোকজন গেইট খুলে ঢুকতে শুরু করে।”

পদদলনে হতাহতের কারণ অনুসন্ধানে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটকে প্রধান করে পাঁচ সদস্যের আরেকটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।

এই ঘটনায় একটি অপমৃত্যুর মামলাও হয়েছে। রীমা কমিউনিটি সেন্টারও আপাতত বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।

Print Friendly, PDF & Email