বাঞ্ছারামপুরের ড. রওশন আলম ভালো নেই !
---
ফয়সল আহমেদ খান,বাঞ্ছারামপুর প্রতিবেদক (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) : ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুরের গর্বিত সন্তান ড. রওশন আলম।স্কুল,কলেজ,মসজিদ কতো-ই না দিয়ে বাঞ্ছারামপুরবাসীকে পরিপূর্ণ করে দিয়েছিলেন ড. রওশন আলম।উপজেলার মিরপুর (ছলিমাবাদ ইউপি)গ্রামে জন্ম গ্রহন করলেও বাঞ্ছারামপুরবাসীকে উদার মনে বহু কিছু তিনি দিয়েছেন।বাঞ্ছারামপুর জনগন তাকে সংসদ নির্বাচনে রীতিমতো জোর করে দাড় করায়।
ক্ষোভ- মান-অভিমানে দল থেকে দূরে বহুদিন। সূজন হত্যার পর শুরুতে এমপি পদে স্বতন্ত্র্য হিসেবে প্রার্থী হয়ে নির্বাচন করে পরাজিত হন তিনি।এরপর ১৯৯৬ সালে ফের বিএনপি হতে মনোনয়ন নিয়ে ক্যা.তাজের কাছে পরাজিত হন। এরপর,যে তিনি এলাকা থেকে চলে গেলেন,আর এলেন না।
সেই- ড. রওশন আলম এখন ভালো নেই।ব্যবসায় লস করেছেন বহু।
ব্যাংকঋণ পরিশোধ না করায় আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংক লিমিটেডের সঙ্গে লিবরা ইনফিউশন্স লিমিটেডের আইনি বিবাদ দীর্ঘদিনের। ব্যাংকটির উপব্যবস্থাপনা পরিচালককে (ডিএমডি) হুমকি দেয়ার অভিযোগে গতকাল গ্রেফতার হন পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডা. রওশন আলম। গ্রেফতারের পর তাকে মহানগর হাকিম গোলাম নবীর আদালতে হাজির করা হলে তার আইনজীবী জামিনের আবেদন করেন। শুনানি শেষে আদালত জামিন মঞ্জুর করলে গ্রেফতারের কয়েক ঘণ্টা পরই ছাড়া পান রওশন আলম।
রূপনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শহীদ আলম জানান, লিবরা গ্রুপের রূপনগরস্থ কারখানার জমি বন্ধক রেখে আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়েছিলেন ডা. রওশন আলম। কিন্তু সময়মতো ঋণ পরিশোধ না করায় ২০১৫ সালের ১৮ আগস্ট পর্যন্ত তার কাছে ব্যাংকের পাওনা দাঁড়ায় প্রায় ৮৭ কোটি ৪৬ লাখ টাকা। পরে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ বন্ধককৃত জমি নিলামে বিক্রির জন্য পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে, যা দেখে ক্ষিপ্ত হন রওশন আলম। তিনি এ নিয়ে আল-আরাফাহ্ ব্যাংকের ডিএমডি ফজলুল করিমকে মোবাইল ফোনে হুমকি দেন।
ওসি আরো জানান, হুমকির পর ফজলুল করিমের পক্ষ থেকে মতিঝিল থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়। জিডির পরিপ্রেক্ষিতে তদন্তে ঘটনার সত্যতা পায় পুলিশ। জিডির তদন্ত প্রতিবেদন পেশ করার পর গত ২৪ সেপ্টেম্বর আদালত থেকে তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়। পরোয়ানাটি হাতে পাওয়ার পরই গতকাল রূপনগরের কার্যালয় থেকে রওশন আলমকে গ্রেফতার করা হয়। এরপর মহানগর হাকিম গোলাম নবীর আদালতে তাকে হাজির করা হলে শুনানি শেষে আদালত তার জামিন মঞ্জুর করেন।
এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংকের ডিএমডি ফজলুল করিম বলেন, দফা সুযোগ দেয়ার পরও ঋণ পরিশোধ না করায় ব্যাংকের পক্ষ থেকে লিবরা ইনফিউশন্সের বন্ধকি জমি নিলামের উদ্যোগ নিলে ক্ষুব্ধ হন ডা. রওশন আলম। এ নিয়ে তিনি আমাকে মুঠোফোনে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন এবং হত্যার হুমকি দেন। নিজের নিরাপত্তার জন্য আমি থানায় জিডি করি। এ বিষয়ে ডা. রওশন আলমের মোবাইলে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি সাড়া দেননি।
উল্লেখ্য, পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ওষুধ ও রসায়ন খাতের কোম্পানি লিবরা ইনফিউশন্স লিমিটেড ২০০৯ সালে কারখানা স¤প্রসারণের ঘোষণা দেয়। প্রথম ইউনিটের চলতি মূলধন জোগানের পাশাপাশি দ্বিতীয় ইউনিট চালুর জন্য ব্যাংকঋণের উদ্যোগ নেয় কোম্পানিটি। এজন্য আল-আরাফাহ্ ব্যাংকের সঙ্গে ঋণচুক্তি করে লিবরা ইনফিউশন্স। এরই অংশ হিসেবে ২০০৯ সালে অগ্রণী ব্যাংকে কোম্পানির ২০ কোটি ৭৫ লাখ টাকার ঋণ টেকওভার করে আল-আরাফাহ্ ব্যাংক। পরবর্তীতে ২০১৩ সাল পর্যন্ত কোম্পানিটিকে ফান্ডেড ও নন-ফান্ডেড মিলিয়ে মোট ৬০ কোটি ২৮ লাখ টাকার ঋণ দেয় ব্যাংকটি। তবে নিয়মিত কিস্তি পরিশোধের ব্যর্থতায় কোম্পানিটি পরবর্তীতে খেলাপি হয়ে পড়ে। ২০১৫ সালের আগস্ট পর্যন্ত খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৮৭ কোটি ৪৬ লাখ ৫২ হাজার ৩৩১ টাকায় দাঁড়ায়।
ব্যাংক কর্তৃপক্ষ দাবি করছে, লিবরা ইনফিউশন্সকে ঋন পুনঃতফসিলীকরণের জন্য একাধিকবার সুযোগ দেয়া হয়েছে। সর্বশেষ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনা অনুযায়ী, ২০১৫ সালের ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে নির্ধারিত হারে ডাউন পেমেন্টসাপেক্ষে পুনঃতফসিলীকরণের সুযোগ দেয়া হয়। তবে কোম্পানি সে সুযোগ না নেয়ায় একই বছরের ১ অক্টোবর অর্থঋণ আদালত আইন, ২০০৩ (সংশোধনী-২০১০) এর ১২ ধারা অনুযায়ী বন্ধকিকৃত রূপনগর শিল্প এলাকায় কোম্পানির ১৬৯ শতাংশ জমি, জমির ওপর তিনটি বহুতল ভবন ও কারখানার বিভিন্ন যন্ত্রপাতি নিলামে বিক্রির জন্য দরপত্র আহ্নান করে। অবশ্য পরবর্তীতে লিবরার পক্ষ থেকে হাইকোর্টে নিলামের বিরুদ্ধে রিট করা হলে ছয় মাসের স্থগিতাদেশের পাশাপাশি রুল জারি করা হয়।
এদিকে লিবরা ইনফিউশন্স কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে চিঠির মাধ্যমে আল-আরাফাহ্ ব্যাংক থেকে ৯০ কোটি টাকার ক্ষতিপূরণ দাবি করে। ব্যাংকের বিরুদ্ধে প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী অর্থ না দেয়া ও সময়মতো এলসি ছাড় না করার অভিযোগ আনা হয়। কোম্পানির দাবি ছিল, এ কারণে পণ্য উত্পাদন ব্যাহত হয়েছে। কারখানার স¤প্রসারণও সম্পন্ন হয়নি। ব্যাংকের অসহযোগিতার কারণে কোম্পানি বিপুল ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক বিষয়টি তদন্ত করে এবং এ বিষয়ে আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের কাছে ব্যাখ্যা চেয়ে পাঠায়। ব্যাংকের বক্তব্যের পর কেন্দ্রীয় ব্যাংক ঋণ আদায়, মঞ্জুর ইত্যাদি বিষয় ব্যাংকের নিজস্ব এখতিয়ারভুক্ত বলে জানায় এবং এ বিষয়ে বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেয়।
অবশ্য ব্যাংকটির কর্মকর্তারা বলছেন, শুধু কেন্দ্রীয় ব্যাংকে অভিযোগপত্রই নয়, ব্যাংকের চেয়ারম্যান, ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলাও দায়ের করে লিবরা ইনফিউশন্স কর্তৃপক্ষ।
আশির দশকে প্রতিষ্ঠিত লিবরা ইনফিউশন্স ১৯৯৪ সালে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হয়। রাজধানীর রূপনগর শিল্প এলাকায় প্রায় দুই একর জায়গায় প্রতিষ্ঠিত এ কোম্পানির পরিশোধিত মূলধন মাত্র ১ কোটি ২৫ লাখ টাকা। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে লিবরা ইনফিউশন্স শেয়ারের সর্বশেষ দর ছিল ৫৫৭ টাকা ১০ পয়সা।