সরাইলের দেওড়ায় ‘মিলন মেলা’
---
সরাইল (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) প্রতিনিধি : এক মাস আগ থেকেই গ্রামের আনাচে কানাচে ঝুলছিল রঙ্গিন ব্যানার। দাওয়াত ও প্রচারে ব্যাস্তছিল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম। চলছিল মৌখিক দাওয়াত ও কৌশল বিনিময়। সাড়ে ৩ সহ¯্রাধিক শিক্ষার্থীর ঘুম ভেঙ্গে গেছে। জেগেই দেখে ডাক এসেছে। দেওড়া আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের মিলন মেলায় অংশ গ্রহন করতে হবে। তাদের চোখের সামনে ভেসে ওঠে প্রগতি সংঘের শিক্ষানুরাগী প্রয়াত ও মৃত সদস্যদের হাস্যজ্জোল মুখ মন্ডল। জমিদাতা প্রয়াত ইউনুছ মিয়া ও হারুন মিয়ার মায়াবি অবয়ব। শিক্ষক মন্ডলির পাঠদান ও শাসনের চিত্র। পড়ার সাথীদের সাথে জ্ঞান অর্জনের প্রতিযোগীতা, সামাজিক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান,খেলাধূলা ও ভালবাসার বন্ধনের সোনালী অতিতের নানা চিত্র। হাসির চেষ্টা করলেও কান্না আসে। কারন ফেলে আসা দিনগুলো আর কখনো ফিরে আসবে না। তবে হ্যাঁ। তবে তারা ধন্যবাদ ও স্যালুট পাওয়ার যোগ্য। যারা ত্যাগ তিতিক্ষা স্বীকার ও নানা প্রতিকূলতাকে পেছনে ফেলে সাহসের সাথে বিদ্যালয়ের মাঠে এমন একটি মিলন মেলার আয়োজন করেছেন।
ইতিহাস একদিন তাদেরকে হাতছানি দিয়ে ডাকবেই। কারন সত্যের মৃত্যু নেই। গত সোমবার ছিল শুধু দেওড়া আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্রছাত্রীর অংশ গ্রহনে ঈদ পূণর্মিলনী ও এ মিলন মেলা। সোমবার সকাল বেলা দেখা যায় বর্ণিল সাজে সেজেছে বিদ্যালয়ের আশপাশ ও মাঠ। বিশাল আকৃতির প্যান্ডেল। বাহারি ষ্টেইজ। খ্রিষ্টাব্দ সম্বলিত ষ্টিকারে সাজানো ২৮টি টেবিল। সকাল ৯টা থেকে গ্রামের ও দেশের বিভিন্ন প্রান্থ থেকে ছুটে আসতে থাকে সাবেক শিক্ষার্থীরা। সাথে স্বামী স্ত্রী ছেলে মেয়ে। এক সময় কানায় কানায় পরিপূর্ণ হয়ে পড়ে বিশাল প্যান্ডেল।
প্রত্যেকের মাথায় মিলন মেলার ক্যাপ। আনন্দের সাগরে ভাসছেন সকলেই। এ যেন গত ২৮ বছরের মধ্যে ঐতিহাসিক আরেক মাহেন্দ্রক্ষণ। দীর্ঘ ২৮ বছর পর শৈশব ও কিশোর বয়সের সাথীদের কাছে পেয়ে এক ভাবাবেগময় পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছিল। প্রথমে বয়সের কারনে চাকচিক্য হারিয়ে যাওয়ায় একে অপরকে চিনতে সমস্যা হয়েছে। পরে চলে হাসি কান্নার খোশ গল্প। সংসার ম্বামী স্ত্রী সন্তানদের হিসাব মিটিয়ে নিলেন কয়েক মিনিটে। আর মাঠের সর্বত্র দৌঁড়ে খুঁজ খবর নিচ্ছেন অনুষ্ঠান পরিচালনা পর্ষদের আহবায়ক আবদুর রহিম, অন্যতম পৃষ্টপোশক এভিয়েশন ক্লাব অব বাংলাদেশ লিমিটেডের সাধারন সম্পাদক লায়ন জুম্মান চৌধুরী, উদ্যোক্তা মোঃ আশরাফ চৌধুরী, মোঃ আনিছুর রহমান সহ সকল সদস্যরা।একে একে প্রবেশ করেন সাবেক সভাপতি ও শিক্ষকরা। দুপুর ১২টায় আকিজ উদ্দিনের কোরআন তেলাওয়াত ও সাবক ছাত্র বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির উপ-পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক ইফতেখার আহমেদ চৌধুরী সজিবের সঞ্চালনায় শুরু হয় আলোচনা সভা। আবদুর রহিমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন মোঃ আশরাফ চৌধুরী আর শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন বিদ্যালয়ের সভাপতি মোঃ আরমান মিয়া।
সাবেক শিক্ষার্থী সুমাইয়ার আক্তার হেলেনা, আনিছুর রহমান, শাহ নেওয়াজ, মোঃ রুহুল আমীন, কামাল হোসেন ও আরমান প্রতিক্রিয়া ব্যক্তমূলক বক্তব্যের পর মোঃ আরিফুর রহমান বুলবুল, সুমাইয়া আক্তার, মেরীনা চৌধুরী পলি, মুশফিকুর রহমান তপন, আবুল কালাম আজাদ, বিলকিছ বেগম, এফরান চৌধুরী, রাহাত আলী, নূরুল আলম, অনিতা মজুমদার, আশফাক উদ্দিন আহমেদ আরমান, খান মোহাম্মদ ইউসুফ, নাকির হোসেন, আতিকুল ইসলাম ও আরাফাত ঠাকুর অতিথিদের উত্তরীয় পড়িয়ে দেন। মানপত্র পাঠ করে প্রধান শিক্ষকের হাতে তুলে দেন আনিছুর রহমান। পরে স্মৃতিচারণমূলক বক্তব্য রাখেন- সাবেক সভাপতি মোঃ ছায়েফ উল্লাহ ঠাকুর, মোঃ হাসান আহমেদ, দৈনিক মানবজমিন পত্রিকার যুগ্ম সম্পাদক শামীমুল হক, মিতালীর সভাপতি ও সরাইল প্রেসক্লাবের অর্থসম্পাদক মোহাম্মদ মাহবুব খান বাবুল, সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান মোঃ শফিকুল ইসলাম বকুল, বিটিভি’র বার্তা সম্পাদক শেখ মজলিশ ফুয়াদ, জেলা প্রেসক্লাবের সহসভাপতি আল-আমীন শাহিন, বিদ্যালয়ের সাবেক প্রধান শিক্ষক মোঃ আবুল ফয়েজ, সহকারি শিক্ষক (বর্তমানে শাহবাজপুর বহুমূখী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক) মোহাম্মদ আলী, বর্তমান প্রধান শিক্ষক মোঃ বিলাত খান, সহকারি শিক্ষক মোঃ মনিজুর রহমান ও শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধি লায়ন জুম্মান চৌধুরী প্রমূখ। বক্তারা বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা সংগঠন ‘প্রগতি সংঘ’ ও জায়গাদানকারী ইউনুছ মিয়ার প্রতি গভীর শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। তাদেরকে চিরস্বরনীয় করে রাখার ব্যবস্থা গ্রহনের ও প্রস্তাব করেন। শিক্ষার মান উন্নয়নের জন্য সকলে একযোগে কাজ করার পাশাপাশি শিক্ষকসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে মানুষ গড়ার এ কারখানাটিকে গ্রাম্য রাজনীতিমুক্ত রাখার অনুরোধ করেন। শিক্ষার্থীদের কাছে প্রতিষ্ঠানের সঠিক ইতিহাস তুলে ধরারও আহবান করেন অতিথিরা। সভাশেষে বাদমাগরিব চলে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।