g উত্তরাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি | AmaderBrahmanbaria.Com – আমাদের ব্রাহ্মণবাড়িয়া

শুক্রবার, ১৮ই আগস্ট, ২০১৭ ইং ৩রা ভাদ্র, ১৪২৪ বঙ্গাব্দ

উত্তরাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি

AmaderBrahmanbaria.COM
আগস্ট ১৫, ২০১৭

---

নিউজ ডেস্ক : টানা বৃষ্টি আর উজান থেকে নেমে আসা ঢলে উত্তরাঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি হয়েছে। পানি বৃদ্ধির কারণে তলিয়ে গেছে উত্তরের ২০টি জেলা। গত দুই দিনে বন্যায় ভেঙে গেছে বেশ কয়েকটি নদী রক্ষা বাঁধ। বন্যায় বিভিন্ন জেলায় এ পর্যন্ত ২০ জনের প্রাণহানি ঘটেছে বলে সরকারিভাবে জানানো হয়েছে।

বন্যা পূর্বাবাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানায়, ব্রহ্মপুত্র-যমুনা এবং গঙ্গা-পদ্মা নদ-নদী সমূহের পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। গঙ্গা-পদ্মা নদী সমূহের পানি বৃদ্ধি আগামী ৭২ ঘণ্টায় অব্যাহত থাকবে। আজ সকাল ৯ টা পর্যন্ত গত চব্বিশ ঘন্টায় পানি পর্যবেক্ষণের ৯০ টি পয়েন্টের মধ্যে বৃদ্ধি পেয়েছে ৫৬ টি পয়েন্টে এবং হ্রাস পেয়েছে ৩২টি পয়েন্টে। এর মধ্যে বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে ৩০ টি পয়েন্টে। অপরিবর্তিত ১টি ও তথ্য পাওয়া যায়নি ১টি পয়েন্টের। এর মধ্যে যমুনার কাজিপুর পয়েন্টে বিপদসীমার সবচেয়ে বেশি ওপর দিয়ে (১৩৫ সে.মি.) প্রবাহিত হচ্ছে। তবে সুরমা-কুশিয়ারা নদীসমূহে পানি হ্রাস পেয়েছে।

এদিকে নতুন করে বন্যাকবলিত হয়ে পড়েছে উত্তরাঞ্চলের কয়েকটি এলাকা। ছোট যমুনা নদীর ফ্লাড ওয়ালের আউটলেট দিয়ে পানি প্রবেশের ফলে নওগাঁ শহরের কয়েকটি এলাকা গতকাল প্লাবিত হয়েছে। শহরের বন্যাপ্লাবিত মহল্লাগুলোর রাস্তাসহ বাড়িঘরে পানি ঢুকে যাওয়ায় এসব এলাকার প্রায় ৪০ হাজার মানুষ জলমগ্ন হয়ে পড়েছে।

অপরদিকে ধরলা, ব্রহ্মপুত্র ও দুধকুমোর-এ তিনটি নদ-নদীর পানি অস্বাভাবিকহারে বৃদ্ধি পাওয়ায় কুড়িগ্রামের বন্যা পরিস্থিতি এখন ভয়াবহ। এ জেলার ৯টি উপজেলার ৬০টি ইউনিয়নের প্রায় ৪ লাখ মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে।

অন্যদিকে বগুড়ায় যমুনা নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় এ নদীর সংযোগ নদী ‘বাঙ্গালী’র পানিও বৃদ্ধি পেয়ে বিপদ সীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ‘বাঙ্গালী’ নদী সংলগ্ন এ জেলার ৩টি উপজেলায় বন্যা পরিস্থিতির অবনতি ঘটায় প্রায় ৬০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।

তবে নীলফামারী জেলায় বন্যা পরিস্থিতি উন্নতি হয়েছে বলে পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র সূত্রে জানানো হয়। মঙ্গলবার তিস্তা ব্যারাজ পয়েন্টে নদীর পানি বিপদসীমার ৫০ সেন্টিমিটার নীচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

বগুড়া জেলায় বন্যা পরিস্থিতি ক্রমেই ভয়াবহ আকার ধারণ করছে। পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় হুমকিতে পড়েছে দুটি বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ। এদিকে ৩ উপজেলার ৮২ টি বিদ্যালয়ে পানি উঠায় হাজার হাজার শিক্ষার্থীর পাঠদান বন্ধ রয়েছে। সারিয়াকান্দি ও ধুনট উপজেলার অন্তত ১০ টি পয়েন্টে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ দিয়ে পানি ভিতরের অংশে প্রবেশ করছে। আজ বিকেলে যমুনার পানি বিপদসীমার ১২০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়।

অপর দিকে যমুনার সঙ্গে বাঙালী নদীর পানিও বাড়ছে। দুই নদীর নিম্মাঞ্চলের এলাকাগুলো এখন প্লাবিত। বন্যার্ত ও বাঁধের ওপর সহ বিভিন্ন স্থানে আশ্রয় নেয়া লোকজনের সংখ্যা বাড়ছে। সার্বিক ভাবে বগুড়ার বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি হয়েছে।

বন্যাকবলিত সারিয়াকান্দির কুতুবপুর, দিঘলকান্দি, চন্দনবাইশা ও ধুনটের পুকুরিয়া ভান্ডারবাড়ি, বড়ইতলি, বানিয়াজান, শিমুলবাড়ি ও আটাচর এলাকার বন্যা নিয়ন্ত্রন বাঁধের নীচ দিয়ে পানি চুইয়ে পড়ছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড এসব স্থানে বালির বস্তা ও পাইলিং করে মেরামত করছে। তবে এর পরেও বাঁধ সংলগ্ন এলাকাগুলোর লোজনের মধ্যে আতঙ্ক বেড়েই চলছে।

বগুড়া পানি উন্নয়নের বোর্ডের নিবাহী প্রকৌশরী রুহুল আমিন যমুনার পানি বৃদ্ধির কারনে বাঁধ ঝুকির মুখে পড়ার কথা স্বীকার করেন। কিছু সমস্যা থাকলেও পারিস্থিতি নিয়ন্ত্রনের মধ্যে রয়েছে বলে তিনি জানান।

জেলা ত্রাণ কর্মকর্তা শাহারুল হোসেন মো: আবু হেনা জানিয়েছেন জেলার বন্যাকবলিত ৩ উপজেলা সারিয়াকান্দি, সোনাতলা ও ধুনটে প্রায় ২৫ হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে রয়েছে।

মঙ্গলবার বিকেলে সারিয়াকান্দিতে বাঁধ পরিদর্শন করে দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকতাদের নির্দেশ দিয়েছেন বগুড়া জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ নূরে আলম সিদ্দিকী।

এদিকে বগুড়া জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নগদ ২ লাখ টাকা ও ১০০ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ করা হয়েছে। এর মধ্যে সারিয়াকান্দি বন্যা দুর্গত এলাকায় গত সোমবার নগদ ১ লাখ টাকা ও ৫০ মে:টন চাল বিতরণ করা হয়েছে। বন্যাকবলিত দুটি উপজেলা সোনাতলায় নগদ ৫০ হাজার টাকা ও ৩০ টন চাল এবং ধুনটে নগদ ৫০ হাজার টাকা ও ২০ টন চাল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।

লালমনিরহাটের তিস্তা নদীর পানি বিপদসীমার নীচ দিয়ে প্রবাহিত হলেও ধরলা নদীর পানি বিপদসীমার ১০০ সে.মিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তিস্তা নদীর তীরবর্তী এলাকায় বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হলেও ধরলা নদীর তীরবর্তী এলাকায় বন্যা পরিস্থিতি অপরবর্তিত রয়েছে। তিস্তা ও ধরলা নদী বন্যায় লালমনিরহাট জেলার ৫টি উপজেলার ৩৫ টি ইউনিয়ন ও ২টি পৌরসভার ১ লাখ ২শ’ পরিবার বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। ইতোমধ্যে সদর উপজেলার মোগলহাট ও কুলাঘাট ইউনিয়নের ধরলা নদীর তীরবর্তী ৪ টি বন্যা নিয়ন্ত্রন বাঁধ ভেঙ্গে ব্যাপক এলাকা প্লাবিত হয়েছে।

নওগাঁয় প্রধান দুই নদীর পানি আরও বৃদ্ধি হওয়ায় সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। একটি সড়ক ভেঙ্গে যাওয়ায় আত্রাই উপজেলার সাথে জেলা সদরের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। শহরের নতুন নতুন রাস্তায় পানি উঠেছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে গত ২৪ ঘন্টায় আত্রাই নদীর পানি ২৩ সেন্টিমিটার বেড়ে গিয়ে এখন বিপদসীমার ১২৩ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ছোট যমুনা নদীর পানি ৯ সেন্টিমিটার বেড়ে এখন বিপদসীমার ৫৮ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

রনানীনগর উপজেলার বেতগাড়ির সন্নিকটে আত্রাই-নওগাঁ সড়ক ভেঙ্গে যাওয়ায় সেদিক দিয়ে যমুনা নদীর পানি রানীনগর ও আত্রাই উপজেলার পূর্বাঞ্চলে ঢুকে পড়েছে। এতে আত্রাই উপজেলার তিনটি এবং রানীনগর উপজেলার ৪টি ইউনিয়নে নতৃুন করে বন্যা দেখা দিয়েছে। আত্রাই উপজেলার সাথে নওগাঁ জেলা সদরের সড়কযোগাযোগ বন্ধ হয়ে পড়েছে।

এদিকে যমুনা নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় নওগাঁ শহরের হাসপাতাল সড়ক, মুক্তিরমোড় থেকে কাজির মোড় পর্যন্ত প্রধান সড়ক জলমগ্ন হয়ে পড়েছে।

অপরদিকে নীলফামারী জেলায় বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। মঙ্গলবার ডিমলা উপজেলার ডালিয়া ব্যারাজ পয়েন্টে তিস্তা নদীর পানি বিপদসীমার ৫০ সেন্টিমিটার নীচ দিয়ে প্রবাহিত হয়। গত রবিবার ওই পয়েন্টে নদীর পানি বিপদসীমার ৬৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছিল।

তবে অনেকের বাড়িঘরে এখনো পানি প্রবেশ করায় বিভিন্ন স্থানে আশ্রয় নিয়েছে। অপরদিকে পানির তোড়ে ভেঙে পড়েছে তিস্তাপাড়ের যোগাযোগ ব্যবস্থা। ডিমলা উপজেলার খালিশা চাপানী ইউনিয়নের ছোট খাতা ও বাইশপুকুর গ্রামের প্রায় এক হাজার পরিবার এখনো পানিবন্দী রয়েছে বলে জানান এলাকাবাসী ও জনপ্রতিনিধিরা। ইউনিয়নের ছোটখাতা গ্রামে তিস্তার গাইডবাঁধ ভাঙার কারণে গ্রামের ৪০ পরিবার তিস্তার বাঁধে আশ্রয় নিয়েছে। ব্যারাজের ভাটিতে ইউনিয়নের বাইশপুকুর গ্রামে স্বেচ্ছাশ্রমে নির্মিত বাঁধের সংযোগ বাঁধটি ভেঙে যাওয়ায় সেখানকার প্রায় ৮শ পরিবার পানি বন্দী অবস্থায় আছে বলে ওই ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আতাউর রহমান জানান।

ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র সূত্র জানায়, মঙ্গলবার তিস্তা ব্যারাজ পয়েন্টে নদীর পানি বিপদসীমার ৫০ সেন্টিমিটার নীচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। গত রবিবার ওই পয়েন্টে নদীর পানি বিপদসীমার ৬৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছিল। সোমবার বিকেল তিনটায় সেখানে বিপদসীমার ৪০ সেণ্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়। ওই পয়েণ্টে বিপদসীমা ৫২ দশমিক ৪০ সেণ্টিমিটার।

ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধ জরুরী মেরামতের প্রক্রিয়া চলছে। বাঁধগুলো মেরামত করা না হলে আবারো বন্যার পানি আসলে ক্ষতির পরিমাণ বেড়ে যাবে।

তিনি বলেন, ‘তিস্তায় ফ্লাস বন্যা হয়, এ কারণে এক দুইদিনের মধ্যে পানি দ্রুত নেমে যায়। ’

এ জাতীয় আরও খবর