g দেশীয় পাদুকা ব্যবসায় মন্দা | AmaderBrahmanbaria.Com – আমাদের ব্রাহ্মণবাড়িয়া

সোমবার, ১৪ই আগস্ট, ২০১৭ ইং ৩০শে শ্রাবণ, ১৪২৪ বঙ্গাব্দ

দেশীয় পাদুকা ব্যবসায় মন্দা

AmaderBrahmanbaria.COM
আগস্ট ১০, ২০১৭

---

হুমায়ূন কবির : দিন দিন কমছে পুরান ঢাকার ঐতিহ্যবাহী রিসাইকেল পাদুকা শিল্পের ব্যবসা। বিদেশ থেকে আমদানি করা রিসাইকেল পাদুকার প্রভাবে সংকটে পড়েছে দেশীয় এ শিল্পটি। এক সময় পুরান ঢাকার চকবাজার, সোয়ারিঘাট, ছোট কাটারা, বড় কাটারা, বেগম বাজার, জেল রোড ঘিরে গড়ে ওঠা শত শত রিসাইকেল পাদুকা তৈরির কারখানা ও দোকানে ছিল জমজমাট ব্যবসা। বর্তমানে এক রকম ঝিমিয়ে পড়েছে পুরান ঢাকার এ শিল্পটি। আগে এ শিল্পকেন্দ্রিক প্রতিদিন লেনদেন হতো ৩০ থেকে ৪০ কোটি টাকা বর্তমানে তা নেমে এসেছে অর্ধেকেরও নিচে।

এ খাতের সংশ্লিষ্টরা বলেন, চীন ও ভারত থেকে বিভিন্নভাবে শুল্ক ফাঁকি দিয়ে রিসাইকেল পাদুকার আমদানি করছে অনেকে। এ কারণে স্বল্প মূল্যে এ সব পাদুকা বাজারে ছাড়ছে তারা। যার ফলে মার খাচ্ছে আমাদের দেশীয় শিল্প। জানা যায় ৪০ শতাংশ পাদুকা আসে চীন থেকে। এসব সস্তা জুতার ভিড়ে মার খেয়ে যাচ্ছে দেশীয় জুতা। দেশীয় এ শিল্প খাতকে বাঁচাতে বিদেশ থেকে সব ধরনের রিসাইকেল পাদুকা আমদানি বন্ধ ও পাদুকা আমদানিতে উচ্চ শুল্ক প্রয়োগের দাবি জানান সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা। এ খাতে ব্যবসায়ীদের স্বল্প সুদে ঋণ প্রদানসহ সরকারি সহায়তা প্রদানের উদ্যোগ নেয়ারও দাবি জানান তারা।

সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, চকবাজার, সোয়ারিঘাট, ছোট কাটারা, বড় কাটারা, বেগম বাজার, জেল রোড, মালিটোলা লেন, সুরিটোলা লেন ঘিরে প্রায় ৫শ’ রিসাইকেল পাদুকার দোকান রয়েছে। প্রত্যেক দোকান মালিক ও ব্যবসায়ীদের রয়েছে আলাদা কারখানা, যেখানে তৈরি হয় এসব জুতা। কারখানাগুলো রয়েছে সাধারণত কামালবাগ, ইসলামবাগ, কামরাঙ্গীরচর এলাকায়। এ ব্যবসার সঙ্গে জড়িত রয়েছে প্রায় ৫ লাখ ব্যবসায়ী-শ্রমিক। কারখানাগুলোতে সাধারণত রিসাইকেল প্লাস্টিক জুতা, রাবারের জুতা ও ইবা জুতা তৈরি হয়। জুতার ছোল ও বেল্ট তৈরি হয় আলাদা আলাদাভাবে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সারা দেশ থেকে অব্যবহৃত ও নষ্ট এসব প্লাস্টিক জুতা, রাবারের জুতা ও ইবা জুতাগুলো পুরান ঢাকার মিটফোর্ড এলাকার নলগোলা মার্কেটে আসে। সেখান থেকে রিসাইকেল পাদুকা উৎপাদনকারী ব্যবসায়ীরা নিজেদের পরিমাণমতো এসব অব্যবহৃত ও নষ্ট জুতা কিনে নিয়ে আসে তাদের কারখানায়। সেখানে এসব জুতা পরিষ্কার করে প্লাস্টিক, রাবার ও ইবা জুতা আলাদা আলাদা করে রাখা হয়। এরপর জুতার সোল ও বেল্টগুলোকে আলাদা আলাদা করে ছোট ছোট টুকরা করে কাটা হয়। এ টুকরাগুলোকে আগুনে পুড়িয়ে গলানো হয়। এরপর এটাকে শুকিয়ে দানায় পরিণত করা হয়। এ দানাগুলোকে জোকার মেশিনে রেখে নির্দিষ্ট রংসহ আনুষঙ্গিক পদার্থ দিয়ে তৈরি হয় রিসাইকেল জুতা।

প্লাস্টিক অ্যান্ড রাবার সু মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি আবদুুল কুদ্দুস খান বলেন, ২০০৮ সাল থেকে চীন ও ভারত থেকে এসব জুতা বাংলাদেশ আসছে তখন থেকেই আমাদের রিসাইকেল পাদুকা শিল্পের করুণ অবস্থা শুরু। যারা আমদানি করে তারা ঠিকমতো শুল্ক দেয় না, সরকারকে বড় অংকের কর ফাঁকি দিচ্ছে। কারণ এক কার্টন রিসাইকেল পাদুকা আমদানি করতে যে পরিমাণ শুল্ক আসে তা তারা পরিশোধ করে না। তারা জুতাগুলো খুলে বেল্ট ও সোলগুলোকে আলাদা করে দেশে নিয়ে আসে এ ক্ষেত্রে সরকারকে নামমাত্র শুল্ক দিতে হয়। এতে করে তারা দেশের বাজারে কম দামে এসব জুতা ছাড়তে পারে। ফলে আমাদের শিল্পটি হুমকির মুখে পড়ে যায়।

তিনি আরও বলেন, এ ছাড়াও যত্রতত্র মার্কেট, পুরান ঢাকার রাস্তাঘাটের অব্যবস্থাপনা, যানজট, পরিবহন সমস্যার কারণে ঢাকা ও ঢাকার বাইরের পাইকাররা এদিকে আসতে চাচ্ছে না। ফলে এক রকমের বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে এ খাতটি।

সরকারের এদিকে বিশেষ নজর দেয়া উচিত। প্লাস্টিক অ্যান্ড রাবার সু মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক হাজী কামরুল হাসান বলেন, আগে এ খাতের ব্যবসায়ীরা প্রতিদিন প্রতিটি দোকানে ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকার লেনদেন করত। বর্তমানে বিদেশি জুতার প্রভাবে দিন দিন কমে আসছে তাদের ব্যবসা।

বর্তমানে প্রতিটি দোকানে দেলদেন হয় মাত্র ৮ থেকে ১০ হাজার টাকা। আমাদের এক একটি দোকানের ভাড়া, কর্মচারী বেতন বিদ্যুৎ বিলসহ প্রতিদিন খরচ হয় প্রায় ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা। তিনি বলেন, সরকারের এদিকে নজর দেয়া দরকার এবং এ ঐতিহ্যবাহী শিল্পকে বাঁচাতে এ খাতে ভর্তুকি দেয়া উচিত। সবচেয়ে বড় বিষয় হল সরকারকে রিসাইকেল পাদুকা আমদানি বন্ধ বা নিরুৎসাহিত করতে এ খাতে উচ্চ শুল্ক আরোপ করা উচিত।