নিরাপদ পানি পাচ্ছে দেশের ৯৮ শতাংশ মানুষ
---
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, নিরাপদ পানি নিশ্চিত করতে বর্তমান সরকার বিশেষ সাফল্যের স্বাক্ষর রেখেছে। ২০১৫ সালের মধ্যে ৮৪ শতাংশ মানুষের জন্য নিরাপদ পানি নিশ্চিত করার লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে ৮৭ ভাগ মানুষকে ওই সুবিধা দিতে সক্ষম হয়েছি। এখন দেশের ৯৮ ভাগ মানুষ নিরাপদ পানির আওতায় এসেছে।
শনিবার রাজধানীর হোটেল সোনারগাঁওয়ে পানি সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
‘টেকসই উন্নয়নে পানি’ এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখেই শুরু হলো দুই দিনব্যাপী পানি সম্মেলন। সম্মেলন আয়োজনের দায়িত্বে রয়েছে স্থানীয় সরকার বিভাগ।
টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) বাস্তবায়নে পানির সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করে খাদ্য নিরাপত্তাসহ এসডিজির সাতটি অভিষ্ট লক্ষ্য সামনে রেখে এই সম্মেলন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। সম্মেলনে দক্ষিণ এশিয়া, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া, পূর্ব এশিয়া ও ডেল্টা কোয়ালিশনভুক্ত অঞ্চলের ২৭টি দেশের মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রীসহ ৮২ জন বিদেশি প্রতিনিধি অংশ নেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘পৃথিবীর শতকরা ৯০ ভাগ বিপর্যয়ের জন্য দায়ী হচ্ছে পানি। প্রাকৃতিক দুর্যোগজনিত কারণে মৃত্যুর মধ্যে ৭০ ভাগের মৃত্যু হয় বন্যাসহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দুর্যোগে। বিশুদ্ধ খাবার পানি শুধু মানুষের বেঁচে থাকার জন্য নয় সমস্ত প্রাণিকূলের জন্য অপরিহার্য, তাই পানির অপর নাম জীবন।’
তিনি বলেন, ‘বিশ্বের প্রায় ১ ভাগের কম সুপেয় পানি। যা নিরাপদ মনে করা হয়। এখনো বিশ্ববাসীর জন্য শতভাগ সুপেয় পানি প্রাপ্যতা নিশ্চিত করা যায়নি। জনসংখ্যা বৃদ্ধি, নগর সভ্যতার ক্রমবিকাশ ও প্রযুক্তিগত বিভিন্ন কারণে পানির চাহিদার ধরণ বদলেছে।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘বিশ্বের প্রায় ৪০ ভাগ মানুষ বিশুদ্ধ পানির অভাবে ভূগছে। ১০৭ কোটির বেশি মানুষ নদী অববাহিকতায় বসবাস করেও পানির সংকটে ভুগছে। অপরিকল্পিত বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় ৮০ শতাংশ অপরোশিত পানি প্রকৃতিতে ফিরে গিয়ে আরো বড় আকারে পরিবেশ দূষিত করছে। আমি আশা করি, ঢাকা পানি সম্মেলন-২০১৭ এর বিভিন্ন বৈঠকে বিশুদ্ধ পানি ও পয়োনিষ্কাশনের চ্যালেঞ্জগুলো বেরিয়ে আসবে। একই সঙ্গে ভবিষ্যৎ কর্মকৌশলও নির্ধারণ করা সক্ষম হবে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশ নদীমাতৃক দেশ। আমাদের অভ্যন্তরে ৮০০ নদ-নদী ও ৫৭টি আন্তঃদেশীয় নদীর সংযোগ রয়েছে। পানির গুরুত্ব অনুধাবন করে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭২ সালে পানি কমিশন গঠন করেছিলেন। এরই ধারাবাহিকতা আওয়ামী লীগ সরকার ১৯৯৬ সালে ৩০ বছর মেয়াদী চুক্তির মাধ্যমে গঙ্গা নদীর পানি সঙ্কটের সমাধান করে।’
নিরাপদ পানি নিশ্চিতে সরকারের সাফল্য তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ‘নিরাপদ পানি নিশ্চিত করতে আমরা ইতিমধ্যে বিশেষ সাফল্যের স্বাক্ষর রেখেছে। ২০১৫ সালের মধ্যে ৮৪ শতাংশ মানুষের নিরাপদ পানি নিশ্চিত করার লক্ষ্যমাত্রা ছিল, কিন্তু ওই সময়ের মধ্যে ৮৭ ভাগ নিরাপদ পানির আওতায় এসেছে। বর্তমানে বাংলাদেশের ৯৮ ভাগ মানুষ নিরাপদ পানি সুবিধা পাচ্ছে। অন্যদিকে ৯৯ শতাংশ মানুষ নিরাপদ পয়োনিষ্কাশনের আওতায় এসেছে। যেখানে ২০০৩ এই হার ছিল ৪২ শতাংশ।’
তিনি বলেন, ‘আমরা ভূগর্ভস্থ পানির ব্যবহার কমিয়ে ভূ-উপরিভাগের পানি ব্যবহারে বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছি। এরই অংশ হিসেবে লবনাক্ত ও আর্সেনিক ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা, পাহাড়ি অঞ্চলে বিশুদ্ধ পানি নিশ্চিত করতে বহুমুখী ব্যবস্থা হাতে নিয়েছি। দীর্ঘমেয়াদী পানি ব্যবস্থপানার উদ্যোগের অংশ হিসেবে আগামী ১০০ বছরের পরিকল্পনায় পানির প্রাপ্যতা, পানির ব্যবহার ও প্রকৃতিগত বিষয়গুলো বিবেচনায় রাখা হয়েছে।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘নিরাপদ পানি নিশ্চিতে ১৯৯৯ সালে জাতীয় পানি নীতি প্রণয়নসহ বিভিন্ন পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়েছে। ২০২১ সালের মধ্যে ঢাকা ও চট্টগ্রামসহ সকল বিভাগীয় শহরে নিরাপদ পানি ভূ-উপরিভাগ উৎস থেকে নিশ্চিত করার কার্যক্রম হাতে নিয়েছি।’
এসডিজির ১৭টি লক্ষ্যের মধ্যে প্রথম লক্ষ্যটিই পানিসংশ্লিষ্ট। এ ছাড়া ‘এসডিজি-৬’ এর অধীনে আরো ছয়টি পৃথক লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। এর অগ্রগতি পর্যালোচনার জন্য নির্ধারণ করা হয়েছে আটটি ইন্ডিকেটর।
এসডিজি-৬ ছাড়াও এসডিজিভুক্ত আরো সাতটি লক্ষ্য প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে পানি ব্যবস্থাপনার সঙ্গে সম্পর্কিত।
পানি সম্মেলনে নিরাপদ পানি, স্যানিটেশন, পানির গুণগতমান, ব্যবহার এবং সমন্বিত পানি ব্যবস্থাপনার ওপর চারটি কারিগরি আলোচনা পর্ব অনুষ্ঠিত হবে। সম্মেলনের শেষ পর্যায়ে অংশগ্রহণকারী দেশগুলোর সঙ্গে সুপারিশের ভিত্তিতে ‘ঢাকা পানি ঘোষণাপত্র’ গ্রহণ করা হবে।