একাদশে ভর্তির সময় তিন দিন বাড়ল
---
নিজস্ব প্রতিবেদক : ঈদুল ফিতরের আমেজ কাটতে না কাটতেই সারা দেশে একাদশ শ্রেণির নতুন শিক্ষাবর্ষের (২০১৬-১৭) ক্লাস শুরু হয়েছে। রমজান, শবে-কদর ঈদের টানা ছুটি শেষে শনিবার দেশের সরকারি-বেসরকারি সব কলেজ খুলেছে। খোলার প্রথম দিনই নতুনের আগমন ঘটে কলেজগুলোতে। উচ্চমাধ্যমিকে ক্লাস শুরু উপলক্ষে কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে শনিবার সকালে রাজধানীর ঢাকা কলেজে একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ওরিয়েন্টেশন ও নবীনবরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। পরে তিনি জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) কার্যালয়ে উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে বই বিতরণ কার্যক্রমেরও উদ্বোধন করেন তিনি।
এরই মধ্যে কলেজগুলোতে শিক্ষার্থী ভর্তি আংশিক কার্যক্রম সম্পন্ন হয়েছে। পবিত্র ঈদুল ফিতরসহ অন্যান্য ছুটির কারণে বিলম্ব ফি ছাড়াই ভর্তির সময় তিন দিন বাড়ানো হয়েছে। ভর্তির অপেক্ষায় থাকা শিক্ষার্থীরা ২, ৩ ও ৪ জুলাই বিলম্ব ফি ছাড়াই ভর্তি হতে পারবে। এদিকে এবার একাদশ শ্রেণিতে ভর্তির আবেদন করেও প্রায় সোয়া ২ লাখ শিক্ষার্থী ভর্তি হয়নি। এদের বাইরে আরো প্রায় দেড় লাখ ছাত্রছাত্রী ভর্তির আবেদনই করেনি। এই পৌনে ৪ লাখ শিক্ষার্থী ভর্তির সুযোগ দিতে আগামী ২০ জুলাই পর্যন্ত সময় দেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন আন্তঃবোর্ড ভর্তি সমন্বয় সাব-কমিটি।
শিক্ষার্থীদের ওরিয়েন্টেশন ও নবীনবরণ অনুষ্ঠানে শিক্ষামন্ত্রী নাহিদ বলেন, শিক্ষার মান কমেনি। বরং শিক্ষাক্ষেত্রে অনেক উন্নতি হয়েছে। আমাদের ছেলেমেয়েদের মান অনেক উন্নত হয়েছে। ইউনেস্কোসহ অনেক আন্তর্জাতিক সংস্থা বলছে, উন্নয়নশীল দেশগুলোর মধ্যে শিক্ষার উন্নয়নে বাংলাদেশ রোল মডেল। তিনি বলেন, নতুন প্রজন্মকে জনগণের প্রতি দায়বদ্ধ থেকে পরিপূর্ণ মানুষ হিসেবে গড়ে উঠতে হবে। জাতির প্রত্যাশা পূরণে তাদেরকে অগ্রসৈনিকের ভূমিকা পালন করতে হবে। ঢাকা কলেজকে দেশের সবচেয়ে প্রাচীন, ঐতিহ্যবাহী ও অন্যতম শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপীঠ উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, এ প্রতিষ্ঠানের কাছে জাতির প্রত্যাশা অনেক। আজকের নবীন ছাত্রদের নিজ নিজ ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত হয়ে জাতির সেই প্রত্যাশা পূরণ করতে হবে। শিক্ষকদের শিক্ষা দান পদ্ধতি উন্নত করার উপর জোর দিতে আহ্বান জানান শিক্ষামন্ত্রী।
ঢাকা কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক মো. মোয়াজ্জম হোসেন মোল্লার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদরাসা বিভাগের ভারপ্রাপ্ত সচিব মো. আলমগীর, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক প্রফেসর ড. এস এম ওয়াহিদুজ্জামান, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব ড. মোল্লা জালাল উদ্দিন, ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মো. মাহাবুবুর রহমান, ঢাকা কলেজের উপাধ্যক্ষ অধ্যাপক নেহাল আহমেদ, অধ্যাপক সৈয়দা হাবিবা প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
পরে এনসিটিবি মিলনায়তনে একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণির পাঠ্যপুস্তক বিতরণ কার্যক্রম উদ্বোধন করেন শিক্ষামন্ত্রী। একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণির সাহিত্য পাঠ, সহপাঠ ও ইংরেজি পাঠ্যবই শিক্ষার্থীদের হাতে তুলে দেন তিনি। এনসিটিবি মুদ্রণ ও প্রকাশিত এসব বই সাশ্রয়ী মূল্যে শিক্ষাথীরা কিনতে পারবে। সাহিত্য পাঠ বইয়ের দাম ১১৩ টাকা, সহপাঠ ৫৫ টাকা এবং ইংলিশ ফর টুডে বইয়ের দাম ৮১ টাকা রাখা হয়েছে। এনসিটিবি চেয়ারম্যান অধ্যাপক নারায়ন চন্দ্র সাহার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদরাসা বিভাগের ভারপ্রাপ্ত সচিব মো. আলমগীর, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ড. এস এম ওয়াহিদুজ্জামান, এনসিটিবি সদস্য ড. মিয়া ইনামুল হক সিদ্দিকী, বাংলাদেশ মুদ্রণ শিল্প সমিতির সভাপতি তোফায়েল হোসেন খান, বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতির সাধারণ সম্পাদক শ্যামল পাল প্রমুখ।
আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষে সরকারি ও বেসরকারি কলেজে ভর্তির জন্য ১৩ লাখ ১০ হাজার ৯৪৭ শিক্ষার্থী আবেদন করেছিল। তাদের মধ্যে প্রথম তালিকায় ১২ লাখ ৪৯ হাজার ৮৪৮ জন একাদশ শ্রেণিতে ভর্তির জন্য মনোনীত করা হয়েছিল। গত ১৮ জুন শেষ দফায় মেধা তালিকা প্রকাশের পর ভর্তির জন্য আবেদনকারী সকল শিক্ষার্থীর জন্য ভর্তির সুযোগ উন্মুক্ত করা হয়েছে। নির্ধারিত ও মাইগ্রেশনের সুযোগ পাওয়া কলেজে ভর্তির সুযোগ দেয়া হয়েছে।
ভর্তি নীতিমালা অনুযায়ী, কলেজে ভর্তিতে এবারো তিন ক্যাটাগরি করা হয়েছে। সেশন চার্জসহ মফস্বলের কলেজে ভর্তি ফি ১ হাজার, জেলা সদরে ২ হাজার, ঢাকা বাদে মেট্রোপলিটন এলাকায় ৩ হাজার টাকা। ঢাকা মেট্রোপলিটনে এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠানে ৫ হাজার, আধা এমপিও বা নন-এমপিও প্রতিষ্ঠানে বাংলা মাধ্যমে সর্বোচ্চ ৯ হাজার ও ইংরেজি মাধ্যমে ১০ হাজার টাকা নেয়া যাবে। উন্নয়ন ফি ৩ হাজার টাকার বেশি নয়। কোনো শিক্ষার্থীর কাছ থেকে অতিরিক্ত ফি নেয়া যাবে না। সব ধরনের ফি রসিদের মাধ্যমে নিতে হবে। ভর্তিতে এবারো কোটা পদ্ধতি থাকছে। ৮৯ শতাংশ মেধায় ভর্তি হবে। বাকি ১১ শতাংশের মধ্যে ৫ ভাগ মুক্তিযোদ্ধা, ৩ ভাগ আসনে সংশ্লি¬ষ্ট কলেজের বিভাগীয় এবং জেলা সদরের বাইরের শিক্ষার্থী, ২ শতাংশ আসনে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও শিক্ষা বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারী। এছাড়া প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা কমিটি ও শিক্ষক-কর্মচারী এবং বিকেএসপি ও প্রবাসীদের সন্তানদের জন্য নির্দিষ্ট থাকবে। বিদেশি প্রতিষ্ঠান থেকে পাস করা শিক্ষার্থীরা সনদের সমমান নিশ্চিত করে ভর্তি হতে পারবে। উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্যও ভর্তি উন্মুক্ত থাকছে।