২৩৯ গার্মেন্টসের সঙ্গে ব্যবসা বাতিল করেছে অ্যাকর্ড-অ্যালায়েন্স
---
নিউজ ডেস্ক : যথা সময়ে সংস্কার কাজ শেষ করতে না পারা এবং অসহযোগিতা করার অভিযোগে এ পর্যন্ত দেশের ২৩৯টি গার্মেন্টসের সঙ্গে ব্যবসা বাতিলের ঘোষণা দিয়েছে ইউরোপ ও আমেরিকার দুটি জোট অ্যাকর্ড ও অ্যালায়েন্স। এ দুটি জোট বাংলাদেশের গার্মেন্টস কারখানার নিরাপত্তা ব্যবস্থা পরিদর্শন শেষে সংস্কার কার্যক্রম দেখভাল করছে। ব্যবসা বাতিলের ঘোষণা দেওয়ায় বাংলাদেশের সঙ্গে ব্যবসা করছে ইউরোপ ও আমেরিকার এমন প্রায় আড়াইশ’ ব্র্যান্ডের সঙ্গে প্রত্যক্ষ কিংবা পরোক্ষভাবে কোন ধরণের ব্যবসা করতে পারবে না। ইতোমধ্যে অ্যাকর্ড ও অ্যালায়েন্স তাদের ওয়েবসাইটে এসব কারখানার নাম ও ব্যবসা বাতিলের কারণ জানিয়েছে। আগামী কয়েক মাসে এ তালিকায় আরো কারখানা যুক্ত হতে পারে।
২০১৩ সালের এপ্রিলে রানা প্লাজা দুর্ঘটনার পর ইউরোপের ও আমেরিকার উদ্যোগে আলাদা দুটি প্ল্যাটফর্ম এ দেশের কারখানার পরীক্ষার উদ্যোগ নেয়। ২২৮টি ব্র্যান্ডের সমন্বয়ে গঠিত জোট অ্যাকর্ডের অ্যাকর্ড প্রায় দেড় হাজার কারখানার প্রাথমিক পরীক্ষা শেষে সংস্কার কাজ তদারক করছে। আর অ্যালায়েন্সের সদ্যভুক্ত ব্র্যান্ড ৩০টি। এ জোট প্রায় সাতশ’ কারখানার সংস্কার তদারক করছে।
উভয় জোটের ওয়েবসাইট থেকে প্রাপ্ত তথ্য থেকে জানা যায়, ব্যবসা বাতিলে এগিয়ে আছে অ্যালায়েন্স। এ জোট পরিদর্শনকৃত কারখানার প্রায় এক চতুর্থাংশ কারখানার সঙ্গেই ব্যবসা বাতিল করেছে। এ পর্যন্ত ১৫৬টি কারখানার সঙ্গে ব্যবসা বাতিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছে এ জোট। দুই বছর ধরে বিভিন্ন সময়ে এসব কারখানার সঙ্গে ব্যবসা বাতিলের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সর্বশেষ গত ১৮ জুন তারা টঙ্গীর বিএইচআইএস অ্যাপারেল নামে একটি কারখানার সঙ্গে ব্যবসা বাতিল করেছে। এর আগে ১০ জুন চট্টগ্রামের কর্নফুলি ইপিজেডের লিবার্টি পলি জোন বিডি নামে একটি গার্মেন্টসের সঙ্গে ব্যবসা বাতিলের ঘোষণা দেয়। গত মে মাসে ৬টির সঙ্গে, এপ্রিলে ৫টি, মার্চে ৪টির সঙ্গে ব্যবসা বাতিল করা হয়েছে। অ্যালায়েন্সের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক রাষ্ট্রদূত জেমস এফ মরিয়ার্টি। কারখানাগুলো সঙ্গে ব্যবসা বাতিলের কারণ ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, নিরাপদ কারখানার সঙ্গে ব্যবসা চলমান থাকবে। কিন্তু শ্রমিকের জন্য কোন অনিরাপদ কারখানার সঙ্গে অ্যালায়েন্সভুক্ত কোন সদস্য ব্যবসা না করার বিষয়ে অঙ্গীকারাবদ্ধ। এসব কারখানা কাঙ্ক্ষিত নিরাপত্তামানে উন্নীত হতে পারে নি। কারখানা মালিক তা সংস্কারে অনাগ্রহী বা সমর্থ নন। ফলে নিরাপত্তার স্বার্থেই এসব কারখানা আর আমাদের সরবরাহ চেইনে থাকছে পারছে না।
অ্যালায়েন্সের ওয়েবসাইটে স্পষ্ট করেই জানানো হয়, ১৫৬টি কারখানা অ্যালায়েন্সভুক্ত কোন ব্র্যান্ডের সঙ্গে ব্যবসা করতে পারবে না। অ্যালায়েন্সের চাইতে দ্বিগুণেরও বেশি কারখানা তদারক করা স্বত্বেও অ্যাকর্ডের ব্যবসা ছিন্ন করা কারখানার সংখ্যা অ্যালায়েন্সের চাইতে কম। জুন পর্যন্ত অ্যাকর্ড ব্যবসা বাতিল করেছে – এমন কারখানার সংখ্যা ৮৩।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, অ্যাকর্ড ও অ্যালায়েন্সভুক্ত ব্র্যান্ডের বাইরে অন্য ব্র্যান্ড বা ক্রেতার সঙ্গে কাজ করতে পারবে এসব কারখানা। কিন্তু অ্যকর্ড ও অ্যালায়েন্স ব্যবসা বাতিল করায় অন্য ক্রেতারা এসব কারখানার সঙ্গে ব্যবসা করার ক্ষেত্রে আস্থা হারাবে। কেননা এসব কারখানার সঙ্গে ব্যবসাকালীন ওই কারখানা কোন ধরণের দুর্ঘটনার শিকার হলে এর দায় সংশ্লিষ্ট ক্রেতা বা ব্র্যান্ডও এড়াতে পারবে না। ফলে ধীরে ধীরে এসব কারখানার ক্রয়াদেশ কমতে থাকবে। এর ফলে বেশকিছু সংখ্যক শ্রমিকও বেকার হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
শ্রম মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর (ডিআইএফই) সূত্রে জানা গেছে, ব্যবসা বাতিল হওয়ার তালিকায় থাকা কারখানার বেশিরভাগই মূলত ঢাকা শহরে মধ্যে অবস্থিত। এর বাইরে নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর, সাভার, আশুলিয়া ও চট্টগ্রামের কিছু কারখানা রয়েছে। ব্যবসা বাতিল হওয়া বেশিরভাগ কারখানাই মূলত ভাড়া ভবনের। গার্মেন্টস কারখানার মালিক এক ব্যক্তি আর ভবনের মালিক আরেক ব্যক্তি হওয়ায় ভবনের কাঠামোগত সংস্কারে জটিলতা দেখা দেয়। ব্যবসা বাতিলের তালিকায় থাকা বেশ কয়েকজন কারখানা মালিকের সঙ্গে আলাপ করেও একই ধরণের তথ্য পাওয়া গেছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে রাজধানীর মহাখালীর একটি কারখানার মালিক বলেন, আমরা দুই বছরে অগ্নি ও বৈদ্যুতিক ত্রুটির ৮৫ শতাংশ সংস্কার কাজ সম্পন্ন করেছিলাম। কিন্তু ভবনের মালিক তো অন্য ব্যক্তি। নিচে আছে দোকান। কাঠামোগত সমস্যা অ্যাকর্ডের চাহিদা অনুযায়ী ঠিক করতে ভবনের মালিক রাজি হন নি। ফলে সমস্যা হয়েছে। এ পরিস্থিতিতে ব্যবসা চালিয়ে যেতে পারবেন কিনা এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, অ্যাকর্ড-অ্যালায়েন্সের সঙ্গে ক্রেতা ও ব্র্যান্ড আছে আড়াইশ’। আর পৃথিবীতে মোট ব্র্যান্ড আছে অন্তত ৪ হাজার। ব্যবসা চালিয়ে যেতে পারব। অবশ্য তিনি জানিয়েছেন, ইতোমধ্যে তার ব্যবসা কিছুটা ছোট করে আনতে হয়েছে। ব্যবসা ধরে রাখতে গাজীপুরের পূবাইলের নিরাপদ ভবনে যাওয়ার চেষ্টা করছেন বলেও জানান তিনি।