সোমবার, ৩রা জুলাই, ২০১৭ ইং ১৯শে আষাঢ়, ১৪২৪ বঙ্গাব্দ

গরুর মুখোশ পরে ভারতীয় মেয়েরা ছবি তুলছেন!

AmaderBrahmanbaria.COM
জুন ২৮, ২০১৭

---

গরুর মুখোশ পরে কিছু ভারতীয় মেয়েরা ছবি তুলছেন নানা জায়গায়। তাদের দেখা যাচ্ছে দিল্লির ইন্ডিয়া গেটের কাছে। কলেজের ক্লাশরুমে। ট্রেনের কামরায়। এমনকি রাষ্ট্রপতি ভবনের সামনে।

এদিকে গরুর মুখোশে নানা জায়গায় ভারতীয় মেয়েদের এই ছবি বিরাট শোরগোল ফেলে দিয়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। এটি আসলে ভারতীয় সমাজে নারী কতটা অবহেলা আর নিরাপত্তাহীনতার শিকার, তা তুলে ধরতে এক অভিনব প্রতিবাদ।

২৩ বছরের ভারতীয় ফটোগ্রাফার সুজাত্র ঘোষ এই ফটোগ্রাফি প্রজেক্ট শুরু করেন ভারতে। এই ফটোগ্রাফির মাধ্যমে তিনি যে প্রশ্নটি ছুঁড়ে দিতে চেয়েছেন তা হলো, ভারতের কি মেয়েরা গরুর চাইতেও অধম। গরুর মুখোশ পরিয়ে তিনি মেয়েদের ছবি তুলেছেন নানা জায়গায়। রাস্তায়, আকর্ষণীয় পর্যটন স্পটে, গুরুত্বপূর্ণ সরকারি ভবনের সামনে, ট্রেনে, নৌকায়, ঘরে। মেয়েরা যে আসলে ভারতের কোথাও নিরাপদ নয় সেই বার্তাই এর মাধ্যমে তুলে ধরাই ছিল তাঁর লক্ষ্য।

এ বিষয়ে ফটোগ্রাফার সুজাত্র ঘোষ বলেন, “আমার দেশে মেয়েদের তুলনায় গরুকে যে এত বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়, সেটা দেখে আমি বিচলিত। এখানে একজন মেয়ে ধর্ষিত বা লাঞ্ছিত হওয়ার পর বিচার পেতে যে সময় লাগে, তার চেয়ে অনেক দ্রুত বিচার পায় একটি গরু, কারণ হিন্দুরা এই গরুকে পবিত্র মনে করে”।

পরিসংখ্যান অনুযায়ী জানা গেছে, ভারতে প্রতি ১৫ মিনিটে একজন নারী ধর্ষিত হয়।

সুজাত্র ঘোষ বলেন, এসব অপরাধের মামলা চলতে থাকে বছরের পর বছর। অথচ যখন একটি গরু জবাই করা হয়, তখন হিন্দু চরমপন্থী গোষ্ঠীগুলো গিয়ে তখনই সন্দেহভাজনদের ধরে পিটিয়ে মারে।

তিনি বলেন, এই হিন্দু গোরক্ষা গোষ্ঠীগুলোর তৎপরতা এবং তাদের প্রভাবের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ হিসেবেই তিনি এই অভিনব ফটোগ্রাফির ধারণা নিয়ে কাজ শুরু করেন।

এদিকে ক্ষমতাসীন বিজেপি বলছে, গরু ভারতীয় হিন্দুদের কাছে খুবই পবিত্র এবং এই গরু রক্ষায় তারা নানা ধরণের কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে। গরু জবাই নিষিদ্ধ করা হয়েছে অনেক রাজ্যে। এখন গরু হত্যার জন্য মৃত্যুদণ্ডের বিধান করে একটি পার্লামেন্টে আইন পাশ করার কথাও ভাবা হচ্ছে।

কিন্তু ভারতের কোটি কোটি মুসলিম, খ্রীষ্টান এবং নিম্নবর্গের দলিত শ্রেণির মানুষ গরুর মাংস খান। কাজেই বিজেপির এসব নীতির ফলে তারা এখন নানাভাবে নিগৃহীত হচ্ছেন।

জানা গেছে, সুজাত্র ঘোষ কয়েক বছর আগে দিল্লি আসার পর ধর্ম আর রাজনীতির এই ‘বিষাক্ত মিশেল’ সম্পর্কে সচেতন হয়ে উঠেন তিনি। তখনই তিনি এর বিরুদ্ধে নীরব প্রতিবাদ হিসেবে গরুর মুখোশে নারীর ছবি তোলার ধারণা নিয়ে কাজ শুরু করেন।

আরো জানা গেছে, এই ছবি তোলার জন্য সুজাত্র তার বন্ধু এবং পরিচিতজনদেরকেই মডেল হিসেবে ব্যবহার করেছেন।

এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এটি এমন এক স্পর্শকাতর বিষয় যে অপরিচিতদের গরুর মুখোশ পরে ছবির জন্য পোজ দিতে বলা খুব কঠিন।

কিন্তু ভারতীয় গণমাধ্যমে যখন তার এই ফটোগ্রাফির খবর বের হলো তখন পাল্টা প্রতিক্রিয়া আসতে শুরু করল। সুজাত্র ঘোষ বলেন, অনেকেই আমাকে হুমকি দেওয়া শুরু করে। টুইটারে লোকজন আমাকে ট্রল করতে শুরু করে। কেউ কেউ এমন কথাও বলে, আমাকে আর আমার মডেলদের দিল্লির জামে মসজিদে নিয়ে জবাই করা উচিত। ভারতের হিন্দু জাতীয়তাবাদীরা প্রচণ্ড অপছন্দ করে এমন দুই নারী সাংবাদিককে আমাদের মাংস খাওয়ানো উচিত।

তিনি আরো বলেন, কিছু লোকতো দিল্লি পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করে আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ করে। তারা বলে আমি নাকি দাঙ্গায় উস্কানি দিচ্ছি।

তবে এসব হুমকিতে ভয় পাননি সুজাত্র ঘোষ। তিনি বলেন, আমি এখানে একটা রাজনৈতিক বক্তব্য তুলে ধরার চেষ্টা করছি। কারণ পুরো বিষয়টাই আসলে রাজনৈতিক। ভারতে হিন্দুদের কর্তৃত্ব আসলে সব সময় ছিল। গত দুই বছরে বিজেপির শাসনামলে সেই বিষয়টা কেবল প্রকাশ্যে চলে এসেছে।