ব্রিটিশ নির্বাচনে মনোযোগের কেন্দ্রবিন্দুতে ‘বাংলাদেশি তিনকন্যা’
---
নিউজ ডেস্ক : যুক্তরাজ্যের আগামীকাল বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠেয় সংসদীয় নির্বাচনে তিনজন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত নারী প্রার্থী গণমাধ্যমে বিশেষ মনোযোগ আকর্ষণ করছে। অনেকেই এই তিনজনকে বাংলাদেশের ‘তিনকন্যা’ হিসাবে অভিহিত করছেন।
এই নির্বাচনে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত মোট ১৪ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এদের মধ্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নাতনি টিউলিপ রিজওয়ানা সিদ্দিক, রুশনারা আলী এবং রূপা হক জনগণের সবচেয়ে বেশি দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন। তারা তিনজনই বিরোধী লেবার পার্টির প্রার্থী।
২০১৫ সালের নির্বাচনে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত মোট ১১ জন প্রার্থী ছিল। তাদের মধ্যে বাংলাদেশের তিন কন্যা রেকর্ড বিজয় অর্জন করেন। ওই বিজয়ই তাদের তিনজনকে ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে ব্রিটেনের বেরিয়ে যাওয়ার ঘটনার (ব্রেক্সিট) পরবর্তীতে কঠিন নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় অনুপ্রাণিত করেছে।
যুক্তরাজ্যের আগামীকালের নির্বাচনে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ১৪ জন প্রার্থীর মধ্যে তিনকন্যা সহ আটজন লেবার পার্টি থেকে, একজন লিবারেল ডেমোক্র্যাট পার্টি থেকে এবং চারজন স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
কিন্তু অন্য বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত প্রার্থীদের তুলনায় তিন কন্যা- বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নাতনি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভাগনি টিউলিপ রিজওয়ানা সিদ্দিক, রুশনারা আলী এবং ডা. রূপা হক অনেকটা সুবিধাজনক অবস্থায় আছেন। কেননা তারা তিনজনই ইতিপূর্বে ব্রিটিশ পার্লামেন্টের সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। তারা তিনজন যে আসনসমূহ থেকে মাত্র দুইবছর আগে পার্লামেন্ট সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন, সেই আসন থেকেই তারা আবার নির্বাচন করছেন।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নাতনি ও শেখ রেহানার কন্যা টিউলিপ রিজওয়ানা সিদ্দিক তার লন্ডনের ‘হ্যাম্পসটেড এ্যান্ড কিলবুর্ন’ সংসদীয় আসনটি রক্ষার জন্য লড়ছেন। টিউলিপের প্রতিদ্বন্দ্বিরা হলেন- লিবারেল ডেমোক্র্যাট পার্টির ক্রিস্টি এ্যালান, কনজারভেটিভ পার্টির ক্লেয়ার লুইস লেল্যান্ড, গ্রীন পার্টির জন ম্যানসক এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী হুফ ইস্টারব্রুক ও রেইনবো জর্জ ওয়েইস।
রুশনারা আলী বাঙ্গালি অধ্যুষিত ‘বেন্থাল গ্রিন এ্যান্ড বো’ আসন থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তার আসনে অন্য প্রার্থীরা হলেন- কনজারভেটিভ পার্টির চার্লোট চিরিকো, লিবারেল ডেমোক্র্যাট পার্টির উইলিয়াম ডায়ার, গ্রীন পার্টির এ্যালিস্টার পোলসন, ইউকেআইআইপি’র ইয়ান ডি উলভেরন এবং স্বতন্ত্র আজমল মনসুর।
রূপা হক আগামীকালের নির্বাচনে তার ‘ইয়ালিং সেন্ট্রাল এ্যান্ড এ্যাক্টন’ আসন রক্ষার জন্য লড়ছেন। তার দুই প্রতিদ্বন্দ্বী হচ্ছেন- কনজারভেটিভ পার্টির জয় মরিসে এবং লিবারেল ডেমোক্র্যাট পার্টির জন বল।
এর আগে ২০১৫ সালের ৭ মে তারিখে যুক্তরাজ্যে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে ৬৫০ আসনের পার্লামেন্টে ৩৩১ আসন পেয়ে কনজারভেটিভ পার্টি জয়লাভ করে। ওই নির্বাচনে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ১১ জন প্রার্থীর মধ্যে লেবার পার্টি থেকে সর্বাধিক সাতজন, লিবারেল ডেমোক্র্যাট পার্টি থেকে তিনজন এবং কনজারভেটিভ পার্টি থেকে একজন মনোনয়ন লাভ করে। এর মধ্যে লেবার পার্টি মনোনীত ‘তিনকন্যা’ রুশনারা আলী, টিউলিপ রিজওয়ানা সিদ্দিক ও রূপা হক জয়লাভ করেন।
গত নির্বাচনে (২০১৫) টিউলিপ রিজওয়ানা সিদ্দিক যুক্তরাজ্যের ১০টি কঠিন প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ আসনের অন্যতম ‘হ্যাম্পস্টেড এ্যান্ড কিলবুর্ন’ আসন থেকে বিজয়ী হন। নির্বাচিত হওয়ার পর তিনি লেবার পার্টি নেতা জেরেমি করবিনের ছায়া মন্ত্রিসভায় নিযুক্ত হন। তিনি ছায়া শিক্ষামন্ত্রী এনজেলা রেয়নারের চার সদস্যের টিমে ‘শ্যাডো মিনিস্টার অব আর্লি ইয়ারস এডুকেশন’ হিসেবে যোগদান করেন। পরে লেবার পার্টি নেতা জেরেমি করবিনের একটি সিদ্ধান্তের সাথে ভিন্নমত পোষণ করে তিনি ছায়া মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ করেন।
টিউলিপ রিজওয়ানা সিদ্দিক লন্ডনের মিটচ্যামে ১৯৮২ সালে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি লন্ডনের কিংস কলেজ থেকে ইংরেজি সাহিত্যে এবং রাজনীতি, নীতি ও সরকার বিষয়ে- দুইটি মাস্টার্স ডিগ্রি লাভ করেন। ইতিপূর্বে তিনি রিজেন্টস পার্ক-এর কাউন্সিলর এবং ক্যামডেন কাউন্সিলের সংস্কৃতি ও কমিউনিটি বিষয়ক ক্যাবিনেট সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। টিউলিপ ২০১০ সালে ক্যামডেন কাউন্সিলে প্রথম বাঙ্গালী নারী কাউন্সিলর নির্বাচিত হন।
তিনি ২০১৫ সালে প্রথম পার্লামেন্ট নির্বাচনে ‘বেন্থাল গ্রিন এ্যান্ড বো’ সংসদীয় আসন থেকে ৩২ হাজার ৩৮৭ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন। তিনি তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বীর চেয়ে ২৪ হাজার ৩১৭ ভোট বেশি পেয়ে নির্বাচিত হন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী কনজারভেটিভ পার্টির ম্যাথিই স্মিথ পেয়েছিলেন ৮ হাজার ৭০ ভোট।
রুশনারা আলী ২০১০ সালে প্রথম পার্লামেন্ট সদস্য নির্বাচিত হন। তিনিই প্রথম বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ পার্লামেন্ট সদস্য। ২০১৫ সালে তিনি পুননির্বাচিত হন। তার পূর্বপূরুষরা বাংলাদেশের সিলেট জেলার বিশ্বনাথ উপজেলার বাসিন্দা ছিলেন।
রূপা হক ২০১৫ সালে প্রথমবার ব্রিট্রিশ পার্লামেন্টের সদস্য নির্বাচিত হন। তার পূর্বপুরুষদের আবাসস্থল উত্তরাঞ্চলীয় পাবনা জেলায়।