‘সুপ্রিম কোর্ট তো সরকারকে শেষ করে দিচ্ছে না’
---
নিজস্ব প্রতিবেদক : প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা বলেছেন, ‘১৬তম সংশোধনী বিচারাধীন থাকাবস্থায় আপনারা তাড়াহুড়ো করে আইনের খসড়া করেছেন। আমরা আইন না করার জন্য মন্ত্রণালয়কে বলেছিলাম। কিন্তু তা মানলেন না। এখানে তাড়াহুড়োর কি ছিল? সুপ্রিম কোর্ট তো সরকারকে শেষ করে দিচ্ছে না।’
সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিদের অপসারণ ক্ষমতা সংসদের হাতে থাকা অবৈধ ঘোষণা করে হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে যুক্তি উপস্থাপনের সময় অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলমকে উদ্দেশ্য করে প্রধান বিচারপতি এসব কথা বলেন।
অ্যাটর্নি জেনারেল এ সময় বলেন, ‘সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল ব্যবস্থা তো সামরিক আইন জারির মাধ্যমে প্রবর্তন করা হয়েছে। তাই রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে নয়, ১৯৭২ এর মূল চেতনায় ফিরে যেতেই সংবিধানের ১৬তম সংশোধনী আনা হয়েছে। দেশের স্বার্থে এ সংশোধনী।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের সংবিধান অনুযায়ী জনগণ সব ক্ষমতার মালিক। ৭ অনুচ্ছেদের চেতনা পুনর্বহালের জন্যই ৯৬ অনুচ্ছেদ সংশোধন করা হয়েছে। সংসদ সদস্যরা জনগণের প্রতিনিধিত্ব করেন। তাছাড়া বিষয়টি এমন না যে সংসদ সদস্যরা হাত তুললেই বিচারপতি অপসারিত হয়ে যাবেন। এ বিষয়ে আইনে পুরো প্রক্রিয়া বলা আছে। সে প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হবে।’
প্রধান বিচারপতি অ্যাটর্নি জেনারেলের বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে বলেন, ‘এ আইন কয়দিন পরই তো সংশোধন হতে পারে।’
অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলতো সামরিক আইন জারির মাধ্যমে হয়েছে। সেই কলঙ্ক মুছে ফেলার জন্যই ৯৬ অনুচ্ছেদ সংশোধন করা হয়েছে।’
প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বে আপিল বিভাগের সাত বিচারপতির পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে এই আপিলের শুনানি চলছে। বুধবার রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। এছাড়া অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মুরাদ রেজা ও রিট আবেদনকারীপক্ষে অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ উপস্থিত ছিলেন।
আগামীকাল বৃহস্পতিবার পরবর্তী শুনানির জন্য দিন ধার্য করেছেন আদালত।
বুধবারের শুনানিতে প্রধান বিচাপরতি আরও বলেন, ‘সামরিক আইনের কলঙ্ক মুছে ফেলতে একমাত্র বিচার বিভাগ ভূমিকা রেখেছে।’
এ সময় অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মুরাদ রেজা বলেন, ‘একজন প্রধান বিচারপতি শপথ ভঙ্গ করে সামরিক আইন প্রশাসক হয়েছিলেন। সংবিধান স্থগিত করেছিলেন।’
প্রধান বিচারপতি এর জবাবে বলেন, ‘ওই সময়তো অনেক কিছু হয়েছে। যা এখন আপনারাও সংরক্ষণ করছেন।’
শুনানির এ পর্যায়ে প্রধান বিচারপতি অ্যাটর্নি জেনারেলকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘সংবিধানে ৭০ অনুচ্ছেদ রেখেছেন কেন?’ জবাবে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘এর একটি ইতিহাস আছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে হর্স ট্রেডিং (দর-কষাকষি) হচ্ছে।’
প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘তাদের (সংসদ সদস্য) প্রতি আস্থা রাখতে পারছেন না? তাহলে বিচারকদের ক্ষেত্রে হর্স ট্রেডিং হবে না তার নিশ্চয়তা কোথায়? সংসদ সদস্যরা স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারছেন কিনা- আপনারা নিজ দলের সদস্যদের ওপর আস্থা রাখতে পারছেন না কেন?’