সৌদি-যুক্তরাষ্ট্রের ইরানবিরোধী জোটে ঢাকার সমর্থন
---
সৌদি আরবের রিয়াদে অনুষ্ঠিত আরব-ইসলামিক-আমেরিকান শীর্ষ সম্মেলনে ইরানবিরোধী অবস্থান নিয়েছে বাংলাদেশ।
রবিবার (২১ মে) অনুষ্ঠিত এ শীর্ষ সম্মেলনে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প, সন্ত্রাসবাদবিরোধী সৌদি জোটের ৪১টি রাষ্ট্রসহ ৫৫টি দেশের শীর্ষ ও উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিরা অংশ নেন। এ সম্মেলনে যোগ দিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শনিবার (২০ মে) রিয়াদে পৌঁছান।
সম্মেলন শেষে যৌথ বিবৃতিতে ইরানের উদ্দেশে বলা হয়, ইরান সরকার মধ্যপ্রাচ্যকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করছে। এসময় অন্য দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে ইরানের নাক গলানোর প্রচেষ্টার নিন্দা জানানো হয়।
যৌথ বিবৃতিতে আরও বলা হয়, সম্মেলনে অংশ নেওয়া দেশগুলো এ অঞ্চলের নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠার জন্য কাজ করার ব্যাপারে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এবং এসব দেশ ইরানের ধ্বংসাত্মক কার্যক্রম দৃঢ়ভাবে মোকাবিলা করবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বলেন, ‘২০১৫ সালের মার্চে বাংলাদেশ দীর্ঘদিনের নীতি থেকে সরে এসে ইয়েমেনে সৌদি সামরিক অভিযানকে সর্বান্তকরণে সমর্থন করে। রিয়াদের শীর্ষ সম্মেলনের আয়োজন দেখে ধারণা করা হয়েছিল, ইরানবিরোধী বক্তব্য এখানে প্রাধান্য পাবে এবং সৌদি আরব ও যুক্তরাষ্ট্র উভয় দেশই ইরানের বিরুদ্ধে অবস্থান নেবে।’
এ শীর্ষ সম্মেলনে বাংলাদেশের উপস্থিতি ইরানবিরোধী অবস্থান বলে প্রতীয়মান হয় কিনা, জানতে চাইলে ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘প্রতিটি দেশের নিজস্ব জাতীয় স্বার্থ আছে এবং বাংলাদেশও এর ব্যতিক্রম নয়।’ তিনি আরও বলেন, ‘মুসলিম বিশ্বের অত্যন্ত প্রভাবশালী একটি দেশ সৌদি আরব। দেশটিতে প্রায় ২০ লাখ বাংলাদেশি কর্মরত।’ বর্তমান প্রেক্ষাপটে সৌদি আরবের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের মতের মিল বাংলাদেশকে আরও সুবিধাজনক অবস্থানে নিয়ে যাবে বলে মনে করেন তিনি।
বিষয়টি ব্যাখা করতে গিয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ওই জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বলেন, ‘সৌদি আরব ও যুক্তরাষ্ট্রের ইরানবিরোধী নীতির প্রতি বাংলাদেশের সমর্থনমূলক মনোভাব ঢাকাকে এ দু’টি দেশের কাছাকাছি নিয়ে যাবে।’
২০১৪ সালের নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র সমালোচনা করেছিল। তবে আগামী জাতীয় নির্বাচনের ফলাফলে যুক্তরাষ্ট্রের ইতিবাচক মনোভাব চাইবে সরকার।
বাংলাদেশকে সামরিক সহযোগিতা দিতে হবে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ সবসময় জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে সামরিক সহযোগিতা দিয়ে এসেছে। কিন্তু এখন সেই অবস্থার পরিবর্তন হয়েছে। আমাদের প্রকাশ্য অবস্থান হচ্ছে—পবিত্র শহর মক্কা বা মদিনা হামলার শিকার হলে বাংলাদেশ সৈন্য পাঠাতে প্রস্তুত।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সৌদি আরবে বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রদূত আব্দুল মোমেন চৌধুরী বলেন, ‘সৌদি আরবকে অসন্তুষ্ট করলে বাংলাদেশের জন্য অনেক অসুবিধা তৈরি হবে।’ ১৯৯০ সালের উদাহারণ দিয়ে তিনি বলেন, ‘কুয়েত যুদ্ধে সৌদি আরবকে সমর্থন দেয়নি ইয়েমেন এবং সে কারণে কয়েক দিনের ব্যবধানে ১০ লাখ ইয়েমেনি শ্রমিককে সৌদি আরব থেকে বিতারিত করা হয়।’
সাবেক এই রাষ্ট্রদূত আরও বলেন, ‘ডোনাল্ড ট্রাম্প তার নির্বাচনি প্রচারের সময় থেকেই ইরানের বিরোধিতা করে আসছিলেন এবং সৌদি আরবের সঙ্গে মিলে সেটি একটি বর্ধিত রূপ পেয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ একটি ছোট রাষ্ট্র। তাই জাতীয় স্বার্থকে মাথায় রেখেই আমাদের কূটনীতি চালাতে হবে। যেমন, সৌদি আরব বা ইরান কেউ বাংলাদেশের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়নি। ফলে ঢাকার পক্ষে এদের কারও বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়াটা কঠিন।’
বর্ষীয়ান এই কূটনীতিক বলেন, ‘সৌদি আরবের এই জোট ইরানবিরোধী একটি রূপ নিয়েছে। সেখানে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতি এ প্রচেষ্টাকে সমর্থন দেওয়ার সামিল।’ পরবর্তী সময়ে যেন দু’পক্ষের কারও প্রতিই পক্ষপাতিত্ব না করতে হয়, সেজন্য এখন থেকেই বাংলাদেশের আগ্রাসী কূটনীতি অবলম্বন করা উচিত বলে মত দেন তিনি।
বাংলা ট্রিবিউন