মঙ্গলবার, ২০শে জুন, ২০১৭ ইং ৬ই আষাঢ়, ১৪২৪ বঙ্গাব্দ

গাড়িচালকের বর্ণনায় সেই রাত : ধর্ষিতা দুই তরুণীকে জোর করে জন্মনিয়ন্ত্রক বড়ি খাওয়ানো হয়

AmaderBrahmanbaria.COM
মে ১৬, ২০১৭

---

জন্মদিনের পার্টিতে দুই তরুণীকে রাতভর ধর্ষণ করেই ক্ষান্ত হয়নি দুই ধর্ষক সাফাত আহমেদ ও তার বন্ধু নাঈম আশরাফ (প্রকৃত নাম আবদুল হালিম)। ধর্ষণের পর গর্ভধারণ রোধে দুই তরুণীকে সেদিন জোর করে জন্মনিয়ন্ত্রক বড়ি খাওয়ায় তারা।
ধর্ষিত দুই তরুণীর এক চিকিৎসক বন্ধু সেই বড়ি খাওয়ার জন্য নিষেধ করে। এ কারণে সেই বন্ধুকে মারধর করে ইয়াবা খেতে বলে। পরে সেই ইয়াবা খাওয়ার ভিডিও ধারণ করে সাফাতের গাড়িচালক বিল্লাল। তারপর সাফাত ও নাঈম বলে, ‘এই ঘটনা যদি কাউকে বলিস, তবে ইয়াবার মামলা দিয়ে পুলিশে ধরিয়ে দেব। তোদের ইয়াবাখোর বানিয়ে দেব।’
জন্মনিয়ন্ত্রক বড়ি খাওয়ানোর পরও দুই তরুণীকে আবারও ধর্ষণ করা হয়। যে দুটি কক্ষে দুই তরুণীকে সাফাত ও নাঈম ধর্ষণ করে তার মাঝখানে একটি ফলস পার্টিশন ছিল। সেখানে দাঁড়িয়ে থেকে বিল্লাল ধর্ষণের ভিডিওচিত্র ধারণ করে।
বনানীর দি রেইনট্রি হোটেলে বন্ধুর জন্মদিনের পার্টিতে গিয়ে ২৮ মার্চ রাতে দুই তরুণী ধর্ষণের শিকার হন। র‌্যাবের হাতে গ্রেফতারের পর ভয়াবহ সেই রাতের ঘটনার এমন বর্ণনা দিয়েছে ধর্ষক সাফাতের ব্যক্তিগত গাড়িচালক বিল্লাল।
সোমবার সন্ধ্যা ৬টায় পুরান ঢাকার নবাবপুর থেকে র‌্যাব-১০ এর একটি দল তাকে গ্রেফতার করে। প
রে রাত ১০টায় রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র‌্যাবের গণমাধ্যম কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে র‌্যাব। সেদিন দি রেইনট্রি হোটেলে যা ঘটেছিল পুরো ঘটনা তুলে ধরেন র‌্যাব-১০ এর অধিনায়ক জাহাঙ্গীর হোসেন মাতুব্বর।
সোমবার রাতে ডিবি পুলিশ গুলশান ১ নম্বর সার্কেল থেকে ধর্ষণ মামলার অন্যতম আসামি সাফাতের বডিগার্ড রহমত আলীকে গ্রেফতার করে। তবে বডিগার্ড হিসেবে যোগদানের সময় তার নাম গোপন করেছিল। সে সময় রহমত তার প্রকৃত নাম গোপন করে আবুল কালাম আজাদ পরিচয়ে কাজে যোগ দেয়। গত রাতে টেলিফোনে বিষয়টি নিশ্চিত করেন গোয়েন্দা পুলিশের উপ-কমিশনার শেখ নাজমুল আলম।
সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাব-১০ এর অধিনায়ক জাহাঙ্গীর হোসেন মাতুব্বর জানান, ঘটনার সময় ধর্ষিত দুই তরুণীর দুই বন্ধু তাদের সঙ্গে ছিল। তাদের মধ্যে শাহরিয়ার নামে একজন ছিল চিকিৎসক। সাফাত ও নাঈম দুই তরুণীকে ধর্ষণের পর জন্মনিয়ন্ত্রক বড়ি খাওয়ানোর দায়িত্ব দেয় শাহরিয়ারকে। শাহরিয়ার এতে অস্বীকৃতি জানালে তাকে মারধর করে ইয়াবা খেতে বাধ্য করে তারা। পরে ইয়াবা সেবনের ভিডিও ধারণ করে সাফাতের গাড়িচালক বিল্লাল। এ ঘটনা যদি বাইরে প্রকাশ করে তবে ইয়াবা দিয়ে পুলিশে ধরিয়ে দেয়ারও ভয় দেখানো হয় শাহরিয়ারকে। সেই ভিডিও বিল্লালের মোবাইল ফোন থেকে উদ্ধার করা হয়েছে।
র‌্যাবের জিজ্ঞাসাবাদে ধর্ষণের ভিডিও ধারণের কথা স্বীকার করেছে বিল্লাল। তবে সেই ভিডিও তার মোবাইল ফোনে পাওয়া যায়নি বলে দাবি করেছেন র‌্যাব-১০ এর অধিনায়ক জাহাঙ্গীর হোসেন মাতুব্বর।
তিনি বলেন, বিল্লালের মোবাইল ফোনের ফরেনসিক পরীক্ষার মাধ্যমে ভিডিও উদ্ধারের চেষ্টা করা হবে।
র‌্যাব জানায়, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে বিল্লাল সেদিনের ঘটনার পুরো বর্ণনা দিয়েছে। সে র‌্যাবকে বলেছে, ঘটনার দিন সাফাতকে নিয়ে সাড়ে ৪টার দিকে দি রেইনট্রি হোটেলে যায়। হোটেলে তাকে রেখে বনানীর আগোরার সামনে থেকে সাফাতের এক মেয়ে বন্ধুকে গাড়িতে উঠায়। তাকে নিয়ে বনানীর ১১ নম্বর যায়। সেখান থেকে সাফাতের আরও এক মেয়ে বন্ধুকে গাড়িতে উঠায় বিল্লাল। দু’জনকে নিয়ে সাড়ে ৬টার দিকে হোটেলে ফেরে সে। সেখানে তখন নাঈমও অবস্থান করছিল।
দুই মেয়েকে রেখে সাড়ে ৮টা পর্যন্ত নিচে সে অবস্থান করে। রাত সাড়ে ৯টার দিকে গুলশান থেকে ভুক্তভোগী দুই তরুণীকে নিয়ে হোটেলে যায় বিল্লাল। রাত ১০টার দিকে সাফাতের দুই বান্ধবীকে নিয়ে সে হোটেল ত্যাগ করে। পরে রাত ৪টার দিকে আবার হোটেলে যায়। সাফাত তাকে দুই কক্ষের ফলস পার্টিশন আছে সেখানে থেকে ভিডিও করতে বলে। এ সময় সে সেখান থেকে ধর্ষণের ঘটনা ভিডিও করে।
র‌্যাব জানায়, ঘটনার পর সাফাতসহ সবাই ঢাকাতেই ছিল। মামলা হওয়ার পর তারা মাওনা হয়ে সিলেটে যায়। সেখানে একেকজন একেকটি রিসোর্টে অবস্থান নেয়। বিল্লাল সিলেট শহরের উপকণ্ঠের একটি রিসোর্টে ছিল। সাফাত ও সাদমান গ্রেফতার হওয়ার আগ পর্যন্ত তাদের মধ্যে যোগাযোগ ছিল। কিন্তু গ্রেফতারের পর যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। তারপর আর কারও সঙ্গে কারো যোগাযোগ হয়নি।
বিল্লাল সিলেট থেকে ছাতক যায় শুক্রবার। ছাতকে গিয়ে এক আত্মীয়ের বাসায় ওঠে। সেখান থেকে রোববার আইনজীবীর সঙ্গে পরামর্শ করতে ঢাকায় আসে। নবাবপুরে একটি বোর্ডিংয়ে সুজন নামে ওঠে।
ধর্ষণের ঘটনায় রিমান্ডে থাকা সাফাত আহমেদ তদন্ত সংশ্লিষ্টদের বলেছেন, সিলেট যাওয়ার পর তার সঙ্গে থাকা বন্ধু নাঈম, গাড়িচালক বিল্লাল ও দেহরক্ষী আবুল কালাম আজাদকে অন্য কোথাও আশ্রয় নেয়ার পরামর্শ দেন তিনি (সাফাত)। সাফাত গোয়েন্দাদের বলেছেন, এ সময় নাঈম সবাইকে একসঙ্গে সিলেটের কোনো সীমান্ত দিয়ে ভারত চলে যাওয়ার প্রস্তাব দিয়েছিল। কিন্তু সাফাত এতে রাজি হয়নি। এরপরই তারা যে যার মতো আলাদা হয়ে যায়। সাফাতের দেয়া এ তথ্যে গোয়েন্দারাও ধারণা করছেন, নাঈম অবৈধপথে ভারতে পালিয়ে যেতে পারে।
শিল্পপতি কিংবা বড় ব্যবসায়ী না হলেও কেন সার্বক্ষণিক সশস্ত্র দেহরক্ষী সঙ্গে রাখতেন এমন প্রশ্নের জবাবে সাফাত গোয়েন্দাদের বলেছেন, সারাদিন বাসায় ঘুমিয়ে কাটলেও সন্ধ্যায় বাসা থেকে বেরিয়ে তিনি ভোররাতে ফিরতেন।
তার বেপরোয়া চলাফেরার বিষয়টি পরিবারের সবাই জানতেন। কোনো ধরনের সমস্যা হলে তাকে রক্ষা করতে তার বাবা আপন জুয়েলার্সের মালিক দিলদার আহমেদ সেলিম সার্বক্ষণিক বডিগার্ড দিয়েছিলেন। এর আগে যখন তার ব্যক্তিগত বডিগার্ড ছিল না, তখন মাঝে মধ্যে বাসার নিরাপত্তাকর্মী নিয়ে বাইরে বের হতেন। তবে পিয়াসার (সাফাতের সাবেক স্ত্রী) সঙ্গে দাম্পত্য কলহ শুরুর পর থেকে তার বাবা সার্বক্ষণিক বডিগার্ড নিয়োগ দিয়েছিলেন। যুগান্তর

এ জাতীয় আরও খবর