রাগীব আলী ও তার ছেলের ১ বছরের কারাদণ্ড
সিলেট প্রতিনিধি : পলাতক থেকে প্রতারণার মাধ্যমে পত্রিকা সম্পাদনা ও প্রকাশের দায়ে সিলেটে রাগীব আলী এবং তার ছেলে আবদুল হাইকে এক বছরের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। পাশাপাশি আদালত তাদের ৫ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরও এক মাস কারাবাসের আদেশ দেন। বৃহস্পতিবার (৯ মার্চ) সিলেটের মুখ্য মহানগর বিচারিক হাকিম মো. সাইফুজ্জামান হিরো এ রায় দেন।
আদালতের অতিরিক্ত পিপি মাহফুজুর রহমান জানান, গত ১৫ ফেব্রুয়ারি এই মামলার অভিযোগ গঠন করেন আদালত। সাক্ষ্যগ্রহণের পর সোমবার (৬ মার্চ) যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে আজ বৃহস্পতিবার রায় ঘোষণার তারিখ নির্ধারণ করা হয়।
মামলার আইনজীবী শহীদুজ্জামান চৌধুরী বলেন, ‘আমরা আদালতে প্রতারণার বিষয়টি যথাযথভাবে উপস্থাপন করতে সক্ষম হয়েছি। পলাতক অবস্থায় সম্পাদনাজনিত প্রতারণার জন্য রাগীব আলীর (৫৮) ও তার ছেলে আবদুল হাইয়ের (২৯) কারাদণ্ডের জন্য আবেদন করেছেন মামলার বাদী। এ রায়ের মধ্য দিয়ে পত্রিকা সম্পাদনা ও প্রকাশনার ক্ষেত্রে আইন মান্য করার অনন্য একটি উদাহরণ স্থাপিত হবে বলে আমরা মনে করি।’
তিনি আরও বলেন, ‘সিলেটের সাবেক জেলা প্রশাসক জয়নাল আবেদীনকে প্রধান আসামি করে এবং সংবাদপত্রের সম্পাদক, প্রকাশক, মুদ্রক পলাতক থাকা অবস্থায় যাদের দ্বারা সংবাদপত্রটি প্রকাশিত হয়েছে তাদেরকে আসামি করে দুদক মাধ্যমে মামলা দায়েরের নির্দেশনা চেয়ে আদালতে আবেদন করা হয়েছে।’
একই আদালতে গত ২ ফেব্রুয়ারি তারাপুর চা-বাগান বন্দোবস্ত নিতে ভূমি মন্ত্রণালয়ের স্মারক জালিয়াতির মামলায় ছেলেসহ রাগীব আলীকে ১৪ বছর করে কারাদণ্ড দেওয়া হয়। ছেলে-মেয়েসহ রাগীব আলীর বিরুদ্ধে তারাপুর চা-বাগান দখল করে সরকারের হাজার কোটি টাকা আত্মসাতের অপর একটি মামলার যুক্তিতর্ক শেষ হয়েছে গত ২৩ ফেব্রুয়ারি। রাগীব আলীর ছেলে আবদুল হাই স্বাস্থ্য পরীক্ষার আবেদন করায় এ মামলার রায় ঘোষণা উচ্চ আদালতের নির্দেশে স্থগিত রয়েছে।এ দু’টি মামলায় গত বছরের ১০ আগস্ট গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হলে রাগীব আলী ছেলেকে নিয়ে পালিয়ে ভারত চলে যান।
জানা গেছে, এরপরও রাগীব আলী সিলেটের ডাক পত্রিকার প্রকাশক ও সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি এবং তার ছেলে আবদুল হাইয়ের নাম পত্রিকার সম্পাদক হিসেবে ছাপা হয়। পলাতক অবস্থায় পত্রিকা সম্পাদনার দায়িত্ব পালন করে পাঠকের সঙ্গে প্রতারণা করেছেন—এ অভিযোগে সিলেট নগরের শাহজালাল উপশহরের বাসিন্দা গিয়াস উদ্দিন তালুকদার গত বছরের ৮ সেপ্টেম্বর প্রতারণার মামলা করেন। আদালত ওই দিন মামলাটি আমলে নিয়ে দণ্ডবিধির ৪১৭ ধারায় তাদের বিরুদ্ধে সমন জারির আদেশ দেন। তবে সমন পাওয়ার পরও জবাব না দেওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হয়।
গত ২৩ ফেব্রুয়ারি আদালতে অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে বিচারপ্রক্রিয়া সাক্ষ্যগ্রহণের তারিখ ধার্য্য হয়। পত্রিকা প্রকাশনা ও সম্পাদনা সংক্রান্ত বিষয়ে নিয়মিত প্রকাশিত ২৯টি জাতীয় দৈনিক পত্রিকার প্রকাশনাকে সাক্ষী রাখা হয়। এছাড়া মামলার বাদী ও বাদীপক্ষের আইনজীবীসহ ছয়জন সাক্ষী ছিলেন। এরমধ্যে গুরুত্বপূর্ণ তিনজনের সাক্ষ্য গ্রহণ শেষে আদালত সাক্ষ্য গ্রহণ সমাপ্ত করে যুক্তিতর্কের তারিখ নির্ধারণ করেন।
কে এই রাগীব আলী :
আটাত্তর বছর বয়সী রাগীব আলী বেসরকারি সাউথইস্ট ব্যাংকের ভাইস চেয়ারম্যান। ওই ব্যাংকের ওয়েবসাইটে দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, চা বাগান থেকে শুরু করে আর্থিক প্রতিষ্ঠান, শিক্ষা ও মিডিয়াতে ছড়িয়ে আছে তার ব্যবসা।
সংবাদপত্রে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, চা বাগানের ব্যবসার লাভের কিছু অংশ দান করে রাগীব আলী সিলেটে ‘দাতা’র খ্যাতি পান। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা রেখে ‘শিক্ষানুরাগী’ নামও কুড়ান।
ব্রিটিশ বাংলাদেশিদের নিয়ে প্রকাশিত বার্ষিক সাময়িকী ‘হু’জ হু’র তথ্য অনুযায়ী, ১৯৫৬ সালে ১৮ বছর বয়সে লন্ডনে যান রাগীব আলী। সেখানে শেয়ার বাজার, বীমা, আবাসন ও রেস্তোরাঁ ব্যবসা করে তিনি বিত্তশালী হন। পরে দেশে এসে ব্যবসায় হাত দেন।
সাউথইস্ট ব্যাংকের ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী, রাগীব আলী সিলেট টি কোম্পানি লিমিটেড, কর্ণফুলী টি কোম্পানি লিমিটেড, রাজনগর টি কোম্পানি লিমিটেডের মালিক।
ইউনিয়ন সিন্ডিকেট লিমিটেড, রাগীব আলী সিকিউরিটিজ লিমিটেড, দৈনিক সিলেটের ডাকে তার মালিকানা রয়েছে। ইংরেজি দৈনিক ফিনানশিয়াল এক্সপ্রেসের পর্ষদেও তার নাম রয়েছে।
সিলেটের রাগীব-রাবেয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, লিডিং ইউনিভার্সিটি ও ঢাকার ইউনিভার্সিটি অব এশিয়া প্যাসিফিকের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান তিনি। এক সময় নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বোর্ডেও চেয়ারম্যান ছিলেন তিনি।
নিজের, স্ত্রীর এবং মায়ের নামে সিলেটের বিভিন্ন স্থানে আরও অনেক স্কুল কলেজ প্রতিষ্ঠা করেছেন রাগীব আলী। মৌলভীবাজার চেম্বার অব কমার্সের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি রাগীব আলী।