পৌরসভার চেয়েও শক্তিশালী ডাক্তার,মেয়র বললেন আমি অসহায়
---
আমিরজাদা চৌধুরী, ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে : এক ডাক্তারের কাছে অসহায় হয়ে পড়েছে ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌরসভা। নোটিশের পর নোটিশ দিয়েও বন্ধ করা যায়নি ওই চিকিৎসকের অবৈধভাবে ১০ তলা ভবন নির্মান করার কাজ। শুধু প্লান বহিভূর্তই নয় পৌরসভার পুকুরের জায়গাও দখল করে ফেলেছেন শহরের খ্রিষ্টান মিশনারী নামের এক প্রাইভেট হাসপাতালের মালিক ডাক্তার ডিউক চৌধুরী। পৌরসভা নোটিশ দিতে দিতে হয়রান। এসব নোটিশ কলাপাতা তুল্য হয়ে উঠেছে ডাক্তারের কাছে। এমনি অবস্থায় শনিবার ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রেসক্লাবে সাংবাদিক সম্মেলন করেন শহরের মুন্সেফপাড়া-বাগানবাড়ি এলাকাবাসী। এতে পৌরসভার পুকুর দখল ও নকশা বহিভূর্তভাবে করা বিল্ডিংটির অবৈধ অংশ অপসারনের দাবী জানানো হয়। ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌরসভার মেয়র নায়ার কবিরও দখলের কথা স্বীকার করে বলেছেন ডাক্তারের তদবিরের কাছে আমি অসহায়। পৌরসভা এবং সাংবাদিক সম্মেলন থেকে জানা যায়- শহরের বাগানবাড়ি এলাকায় ১৩.২৩ শতক ভূমি (পশ্চিম পাইকপাড়া মৌজার সাবেক এসএ ১২২ দাগের আন্দরে অবস্থিত) ক্রয় করেন খ্রিষ্টান মিশনারী হাসপাতালের চিকিৎসক ডিউক চৌধুরী ও তার স্ত্রী ডাক্তার এনজেলা চৌধুরী। সেখানে বেইসমেন্টসহ ১০ তলা বানিজ্যিক ভবন নির্মানে একটি প্রস্তাবিত নকশা অনুমোদনের জন্যে পৌরসভায় জমা দেন তারা। পৌরসভা ইমারত নির্মান নির্দেশিকা অনুসারে ডাক্তার দম্পতি কর্তৃক দাখিলা নকশা ও লেআউট প্লান সংশোধিত আকারে অর্থাৎ উত্তরে ১.৯৬ মিটার,দক্ষিনে ১.৫২ মিটার,পূর্বে ২.৩৪মিটার ও পশ্চিমে ৫.৫৭ মিটার করে ভূমি খালি রেখে নির্মান কাজ করার অনুমতি দেয়। কিন্তু অনুমোদিত নকশা বহিভূর্তভাবে ডাক্তার ডিউক ভবন নির্মান কাজ শুরু করলে পৌর কর্তৃপক্ষ তাকে নোটিশ দিয়ে কাজ বন্ধ রাখতে বলে।
২০১৫ সালের ১২ ই ফেব্রুয়ারী তাকে প্রথম নোটিশ করা হয়। এরপর পর্যায়ক্রমে ওই বছরের ৬ ই ডিসেম্বর,২০১৬ সালের ৪ ঠা আগষ্ট,১০ই আগষ্ট ও ২১ শে আগষ্ট মোট ৫ দফা নোটিশ প্রদান করা হয়। সর্বশেষ ৩১ শে আগষ্ট চূড়ান্ত নোটিশ করে পৌরসভা। এই নোটিশে বলা হয়- বারবার নোটিশের পরও পৌরসভার নির্দেশ অমান্য করে আপনি (ডাক্তার ডিউক) জোরপূর্বক নির্মান কাজ করছেন এবং পৌরসভার মালিকানাধীন পুকুরের ভূমি জবর দখল করে রেখেছেন। এই নোটিশেও কর্নপাত করেননি ডাক্তার ডিউক দম্পতি। এরপর গত ১০ ই অক্টোবর প্লান বহিভূর্ত ও পৌরসভার জায়গায় করা ওই বিল্ডিংটির অবৈধ অংশ ভাঙ্গার জন্যে জেলা প্রশাসকের কাছে একজন নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট চেয়ে চিঠি দেয় পৌরসভা। এরপর গত দু-আড়াইমাসে আর কোন পদক্ষেপ নেয়নি পৌরসভা। স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো: খবির উদ্দিন জানান- ডাক্তার ডিউক এই বিল্ডিং নির্মানে পৌরসভার অনেক জায়গা দখল করেছেন। তার মুল বিল্ডিং এর সাড়ে ৮ ফুট জায়গা পৌরসভার। এরবাইরেও অনেক জায়গা রয়েছে। পুরো রিটের্নিং ওয়াল সে পৌরসভার জায়গায় করেছে। কাউন্সিলর আরো জানান- ২০১৬ সালের ৭ ই আগষ্ট পৌরসভা থেকে জায়গাটি মাপঝোক করা হয়। পৌরসভার সার্ভেয়ার ছাড়াও জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সার্ভেয়ার অংশ নেন এই মাপঝোকে। পৌরসভার সহকারী প্রকৌশলী,নির্বাহী প্রকৌশলী,এলাকার বিশিষ্ট ব্যাক্তিবর্গ ও আমার উপস্থিতিতে এই মাপঝোক হয়। মাপঝোকে দেখা যায় পৌরসভার পুকুরের ভেতরে ৮ ফুট ৬ ইঞ্চি জায়গা দখল করা হয়েছে ।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌরসভার মেয়র নায়ার কবির বলেন- ডাক্তার ডিউক পৌরসভার জায়গা দখল করে রেখেছে এটা সত্যি। কিন্তু ভাঙ্গা যাচ্ছেনা। ওপরের তদবিরের কারনে আমি এব্যাপারে কোন ব্যবস্থা নিতে পারছিনা। আমরা ম্যাজিষ্ট্রেট পেয়েছি। এ সপ্তাহেই একটা পদক্ষেপ নেব।
ডাক্তার ডিউক চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন- আমি পুকুরের কোনো দিকেই জায়গা দখল করিনি। তাছাড়া চারদিক থেকে পৌরসভার পুকুরের জায়গা ঠিক আছে কিনা তা মেপে দেখা উচিত। তিনি আরও বলেন, পৌরসভার প্রকৌশলীরাই আমার নকশা অনুমোদন দিয়েছে,এখন তাঁরাই ভিন্ন কথা বলছে।
শনিবার ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রেসক্লাবে অনুষ্টিত সংবাদ সম্মেলনে ডাক্তার ডিউক চৌধুরীর বিরুদ্ধে ফৌজদারী আইনে ব্যবস্থা গ্রহন ও অবৈধ অংশ ভেঙ্গে সমাজ ও রাষ্ট্র ব্যবস্থায় শৃঙ্খলা রক্ষা করার আহবান জানানো হয়। এলাকাবাসীর পক্ষে সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন আরাফাত মোশারফ খান অপু। এসময় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ওয়ার্ড কাউন্সিলর খবির উদ্দিন, এডভেকেট তারিকুল ইসলাম জুয়েল,এডভোকেট সাইফুল ইসলাম প্রমুখ।