রবিবার, ৮ই জানুয়ারি, ২০১৭ ইং ২৫শে পৌষ, ১৪২৩ বঙ্গাব্দ

খুনের আসামি বকুল সৌদিতে: বিদেশ যাওয়ার স্বপ্ন নিয়ে সিলেট কারাগারে ভুট্টো

AmaderBrahmanbaria.COM
জানুয়ারি ৭, ২০১৭

সিলেট প্রতিনিধি : সিলেটে অপরাধ না করেও একটি হত্যা মামলায় ভাড়ায় জেল খাটছেন যুবক ভুট্টো। প্রকৃত খুনি ইকবাল হোসেন বকুল রয়েছে সৌদি আরবে।

বিদেশ পাঠানোর চুক্তিতে যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামি ইকবাল হোসেন বকুল সেজে কারাগারে যান রিপন আহমদ ভুট্টো। বিদেশ যাওয়ার স্বপ্ন নিয়ে কারাভোগকে স্বেচ্ছায় বরণ করেসন ভুট্টো। কথা ছিল ৩ মাসের মধ্যে বকুল তাকে উচ্চ আদালত থেকে জামিন নিয়ে বের করে আনবে। চুক্তির নির্ধারিত সময় পেরিয়ে গেলেও ভুট্টো জামিন পাননি। এর মধ্যে বকুলের পরিবার দু’বার তাকে জামিনে বের করার জন্য উচ্চ আদালতে আপিল করেছিল। বিধিবাম, উচ্চ আদালত তার জামিন আবেদন নামঞ্জুর করায় ১৪ মাস ধরে কারাগারে থাকতে হচ্ছে ভুট্টোকে। এখন বিদেশ নয়, মুক্ত বাতাসে বের হয়ে আসতে ব্যাকুল ভুট্টো।

কিছুদিন আগে সিলেটের সিনিয়র জেল সুপার ছগির মিয়াকে ভুট্টো জানান, তিনি আসল খুনি নন। কারাগারে যে নামে বন্দি আছেন সেটি তার প্রকৃত নাম নয়। কারাভোগের এমন নাটকীয় কাহিনী বেরিয়ে আসে যুগান্তরের অনুসন্ধানে। সিলেটের আলোচিত সদর উপজেলার মোগলগাও ইউনিয়নের চানপুর গ্রামের আলী আকবর সুমন হত্যা মামলার আসামি হয়ে জেল খাটছেন ভুট্টো। তিনি নগরীর ৬নং ওয়ার্ডের সৈয়দ মুগনী তরঙ্গ আবাসিক এলাকার বাসিন্দা। প্রকৃত আসামি ইকবাল হোসেন বকুল সৌদি আরবে রয়েছে বলে তার আত্মীয়স্বজন সূত্রে জানা গেছে।

২০০৯ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর সিলেট শহর থেকে বাড়ি ফেরার পথে নিখোঁজ হন সিলেট সদর উপজেলার মোগলগাও ইউনিয়নের চানপুর গ্রামের পশ্চিমপাড়ার চেরাগ আলীর ছেলে আলী আকবর সুমন (২৪)। তিনি পেশায় ছিলেন ইলেকট্রিক মিস্ত্রি। পরদিন একই ইউনিয়নের হাউশা গ্রামের পাশেই ঝিলকার হাওরে কুচুরিপানার নিচে আলী আকবর সুমনের লাশ পাওয়া যায়।

এ ঘটনায় কোতোয়ালি থানায় নিহত আলী আকবর সুমনের ছোট ভাই আলী আহসান সুহেল বাদী হয়ে একটি মামলা করেন। যার ১১৭(২৮/০৯/২০০৯)। দীর্ঘ শুনানি শেষে ২০১২ সালের ২০ জুন আলোচিত আলী আকবর সুমন হত্যা মামলার রায় ঘোষণা করেন সিলেটের দ্রুত বিচার ট্রাইবুন্যালের বিচারক দিলীপ কুমার দেবনাথ। মামলার চার্জশিটভুক্ত আসামি ৯ জনের মধ্যে তিনজনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন আদালত। সাজাপ্রাপ্তরা হচ্ছে- দরাছ মিয়া উরফে গয়াছ, তার স্ত্রী রুজিনা বেগম ও ইকবাল হোসেন বকুল। বাকি আসামিদের বেকসুর খালাস দেয়া হয়। সাজাপ্রাপ্ত তিন আসামিই পলাতক। বছরখানেক আগে ইকবাল হোসেন বকুলের আদালতে আত্মসমর্পণ নিয়েই ‘রিপন আহমদ ভুট্টো ও ইকবাল হোসেন বকুল’ নাটকের শুরু।

২০১৫ সালের ১১ অক্টোবর আদালতে আত্মসমর্পণের ১ বছর ২ মাস পর ভুট্টো নিজেই খবর দিয়ে কারাগারে নিয়ে তার এক স্বজনকে ঘটনাটি খুলে বলেন। তার আসল পরিচয় রিপন আহমদ ভুট্টো। তার বাসা নগরীর ৬নং ওয়ার্ডের ইলাশকান্দি। পেশায় ট্রাকচালক। তার বাবা ছনুও ছিলেন ট্রাকচালক। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রিপন আহমদ ভুট্টোকে যাবজ্জীবন দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি ইকবাল হোসেন বকুল সাজিয়ে কারাগারে পাঠানোর মূল নায়ক বকুলের ভাই শামীম আহমদ। সে কোর্টে শিক্ষানবিস আইনজীবী হিসেবে কাজ করত। আইনের মারপ্যাঁচে নিজের ভাইকে বাঁচাতে প্রতারণার আশ্রয় নেয় সে। আসল আসামি ইকবাল হোসেন বকুলকে আত্মগোপনে পাঠিয়ে দেয়। নিহত আলী আকবর সুমনের ছোট ভাই মামলার বাদী আলী আহসান সুমন জানান, যে তিনজনের যাবজ্জীবন সাজা হয়েছিল তারা সবাই পলাতক রয়েছে। সুমনের প্রকৃত হত্যাকারীর শাস্তির দাবি জানান তিনি।

সিলেট সিটি কর্পোরেশনের ৬নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ফরহাদ হোসেন চৌধুরী শামীম জানান, রিপন আহমদ ভুট্টো সনু ড্রাইভারের ছেলে। তাকে ক’দিন ধরে এলাকায় দেখা যাচ্ছে না। এক সপ্তাহ ধরে শুনতে পাচ্ছি সে জেলে রয়েছেন। সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারের জেল সুপার ছগির মিয়া জানান, ৪-৫ দিন আগে রিপন আহমদ ভুট্টো জানান, সে আসল আসামি নন। আমরা তাকে উচ্চ আদালতে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছি।

বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি : সাজাপ্রাপ্ত আসামির বদলে আরেকজন কারাভোগের বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার পর সিলেটের সিনিয়র জেল সুপার ছগির মিয়া তদন্ত কমিটি গঠনের আবেদন জানান। এর প্রেক্ষিতে দুই সদস্যের বিচারবিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আবু সাফায়াৎ মুহম্মদ শাহেদুল ইসলাম জানান, চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কাজী আবুল হান্নানকে প্রধান করে এ কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির অপর সদস্য হলেন, যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ মো. রেজাউল করিম। এই কমিটিকে ৩ কার্য দিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। কমিটি কাল থেকে আনুষ্ঠানিক কাজ শুরু করবে।

এ জাতীয় আরও খবর