সোমবার, ৯ই জানুয়ারি, ২০১৭ ইং ২৬শে পৌষ, ১৪২৩ বঙ্গাব্দ

ডাক্তারের ছাড়পত্র পাননি খাদিজা

AmaderBrahmanbaria.COM
জানুয়ারি ৮, ২০১৭

সিলেট প্রতিনিধি : সিলেটের কলেজছাত্রী খাদিজা আক্তার নার্গিস এখনো ডাক্তারের ছাড়পত্র পাননি। ঢাকার সাভারে সিআরপি হাসপাতালে সে চিকিৎসাধীন রয়েছে। এ কারণে আজ আদালতে উপস্থিত নাও হতে পারেন খাদিজা। গতকাল বিকেল পর্যন্ত সে সিআরপিতে ছিল। পরিবার জানিয়েছে, তাদের পক্ষ থেকে খাদিজাকে সিলেটে নিয়ে আসার কোনো উদ্যোগ নেই। তবে সরকারি পক্ষ থেকে নেয়া হলে সেটি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষই জানেন।

খাদিজা হত্যাচেষ্টা মামলার বিচার শেষ পর্যায়ে রয়েছে। ইতিমধ্যে ৩৬ জন সাক্ষীর মধ্যে ৩৩ জনই সাক্ষ্য দিয়েছেন। মামলার তদন্ত কর্মকর্তাও ইতিমধ্যে আদালতে সাক্ষ্য দিয়েছেন। এখন কেবল খাদিজার বক্তব্য গ্রহণের বাকি হয়েছে। এই অবস্থায় গত ১৫ই ডিসেম্বর নিধারিত বিচারিক আদালতে খাদিজাকে উপস্থিত হয়ে সাক্ষ্য গ্রহণের নির্দেশ দেয়া হয়েছিল। কিন্তু ডাক্তারের ছাড়পত্র না পাওয়ায় খাদিজা ঢাকা থেকে সিলেটে আসতে পারেননি। এরপর আদালত দীর্ঘ বিরতি দিয়ে আজ রোববার খাদিজাকে আদালতে উপস্থিত হওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন। এরই মধ্যে প্রায় ১০ দিন আগে হাসপাতালে গিয়ে খাদিজার সঙ্গে দেখা করে এসেছেন সিলেট জেলা বারের পিপি এডভোকেট মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ। ওই সময় তিনি খাদিজার পরিবারকে জানিয়েছিলেন- ন্যায় বিচারের স্বার্থে আদালত খাদিজার বক্তব্য শুনতে চাইছেন।

তিনি খাদিজাকে হেলিকপ্টারযোগে সিলেট নেয়া যায়নি সে বিষয়টিও বিবেচনায় আনেন। এদিকে, খাদিজার সঙ্গে ঢাকার সিআরপি হাসপাতালে থাকা তার পিতা মাসুক মিয়া মানবজমিনকে জানিয়েছেন- সিআরপি’র হেড ডাক্তার সাঈদ আহমদ এখনই খাদিজাকে ছাড়পত্র দিচ্ছেন না। তিনি জানিয়েছেন, খাদিজাকে আরো দুই মাস ঢাকার হাসপাতালে থাকতে হবে। আর মাঝখানে তারা চিকিৎসার বিরতি দিতে পারবেন না। এ কারণে তাদের পক্ষ থেকে খাদিজাকে সিলেটে নিয়ে আসার কোনো উদ্যোগ নেই। তবে, সরকারি ভাবে খাদিজাকে নিয়ে আসতে চাইলে সেটিতে তার আপত্তি নেই। তবে, খাদিজাকে গাড়ি যোগে নিয়ে আসা যাবে না।

যদি আসতে হয় কেবল হেলিকপ্টারেই আসতে হবে। সেটি সরকার থেকে উদ্যোগ নিলে সম্ভব বলে জানান তিনি। এদিকে, সিআরপিতে খাদিজার ফিজিও থেরাপি, ল্যাংগুয়েজ থেরাপি চলছে। প্রতিদিন চার বেলা তাকে থেরাপি দেয়া হচ্ছে। থেরাপিতে খাদিজা ধীরে ধীরে সুস্থ হচ্ছে। এখন সে কারও সাহায্য ছাড়াই উঠে দাঁড়াতে পারে। তবে, সাহায্য ছাড়া হাঁটতে পারে না। এদিকে, সিলেটে বিচারিক আদালতের পিপি এডভোকেট মাহফুজুর রহমান বিকেলে মানবজমিনকে জানিয়েছে- খাদিজা আদালতে না আসতে পারলে কিছু করার নেই। আদালতে আমরা সময় চাইবো। হয়তো আদালত আরও একটি তারিখ দিতে পারেন। ন্যায় বিচারের স্বার্থে আদালত খাদিজার বক্তব্য গ্রহণ করতে চাইছেন বলে জানান তিনি।

গত বছরের ৩ অক্টোবর খাদিজা বেগম নার্গিসকে এমসি কলেজের পুকুরপাড়ে চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে গুরুতর আহত করে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অনিয়মিত শিক্ষার্থী ও শাবি ছাত্রলীগের সহ-সম্পাদক বদরুল আলম। ঘটনার পরপরই শিক্ষার্থীরা ধোলাই দিয়ে বদরুলকে পুলিশে সোপর্দ করেন। এ ঘটনায় বদরুলকে একমাত্র আসামি করে মামলা দায়ের করেন তার চাচা আবদুল কুদ্দুস। পরে ৫ই অক্টোবর আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয় বদরুল। আদালত তাকে কারাগারে প্রেরণ করেন।

৩রা অক্টোবর দিবাগত রাতেই খাদিজাকে ঢাকার স্কয়ার হাসপাতালে স্থানাস্তর করা হয়। সেখানে জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে থাকতে থাকতে বেঁচে ফিরেন খাদিজা। পরে তাকে থেরাপি দেয়ার জন্য সিআরপিতে নেয়া হয়। এদিকে, গতবছরের ৮ নভেম্বর খাদিজা হত্যা চেষ্টা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সিলেট নগরীর শাহ্‌পরাণ থানার এসআই হারুনুর রশীদ আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন। পরে ১৫ই নভেম্বর আদালত চার্জশিট গ্রহণ করেন। ২৯শে নভেম্বর আদালত বদরুলের বিরুদ্ধে ৩২৪, ৩২৬ ও ৩০৭ ধারায় অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর নির্দেশ দেন। পরে ৫ ডিসেম্বর, ১১ ডিসেম্বর ও ১৫ ডিসেম্বর বদরুলের বিরুদ্ধে আদালতে সাক্ষ্য দেন ৩৩ জন।