রয়টার্স-এর বিশেষ প্রতিবেদন: গুলশান হামলায় আইএস-এর অনুমোদন নিয়েছিলেন তামিম
---
বিদেশ ডেস্ক : গুলশানের হলি আর্টিজানে ভয়াবহ জঙ্গি হামলার পরিকল্পনায় আইএসের (ইসলামিক স্টেট) অনুমোদন নেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন হামলার মূল হোতা বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত কানাডিয়ান নাগরিক তামিম চৌধুরী। ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স এক বিশেষ প্রতিবেদনে দাবি করেছে, পরিকল্পনায় আইএসের অনুমোদন পাওয়ার পর তিনি গুলশানে হামলার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন।
বাংলাদেশ পুলিশের এক শীর্ষ কর্মকর্তার বরাত দিয়ে রয়টার্স এই দাবি জানিয়েছে। তবে তারা দাবি করেছে, ওই পুলিশ কর্মকর্তার দেওয়া তথ্যগুলো ‘স্পর্শকাতর’ বলে পরিচয় প্রকাশে রাজি হননি তিনি। রয়টার্স জানিয়েছে, তথ্যগুলো স্বাধীনভাবে পর্যালোচনা করে দেখেনি তারা।
বাংলাদেশ পুলিশের বিশ্বস্ত সূত্রের বরাত দিয়ে রয়টার্সের ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আবু তারেক মোহাম্মদ তাজুদ্দীন কাওসার নামের এক আইএস নেতার সঙ্গে যোগাযোগ ছিল তামিমের। সেই আবু তারেক তাকে বেশি করে বিদেশি সদস্য যোগাড় করার তাগিদ দিতো। রয়টার্সের দাবি অনুযায়ী, যে পুলিশ কর্তকর্তা তাদেরকে এই তথ্য দিয়েছেন, তামিম এবং আবু তারেক দুইজনের যোগাযোগের প্রত্যক্ষদর্শী তিনি।
শীর্ষ ওই পুলিশ কর্মকর্তার বরাত দিয়ে রয়টার্স বলছে, তামিম আর আবু তারেকের যোগাযোগ থাকা অবস্থায় তাদের মধ্যে গুলশান হামলা সম্পর্কে একটি প্রবন্ধের খসড়াও তাদের আলোচ্য প্রসঙ্গের মধ্যে ছিলো। পরে তা ইসলামিক স্টেট-এর কথিত ম্যাগাজিনে প্রকাশ করা হয়।
রয়টার্স-এর প্রতিবেদনে দাবি করা হয়, গুলশান হামলার পরিকল্পনা শেষে তামিম আইএস-এর বিশেষজ্ঞদের হলি আর্টিজানে পাঠাতে বলেন। হামলার আগে সেখানকার পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের জন্য তাদের পাঠানোর প্রস্তাব করেন তামিম।
জুলাইয়ের ১ তারিখে গুলশানের ওই ক্যাফেতে আইএস-এর নামে হামলা চালানো হয়। এতে ২২ জন নিহত হন যাদের বেশিরভাগই ছিলেন বিদেশি নাগরিক।
উল্লেখ্য, পুলিশের দাবি অনুযায়ী নব্য জেএমবির সামরিক কমান্ডার তামিমের পরিকল্পনাতেই গুলশানের হোলি আর্টিজান বেকারিত জঙ্গি হামলা করা হয়। ২০১৩ সালের ৫ অক্টোবর তামিম দুবাই হয়ে ঢাকায় আসার পর থেকেই আত্মগোপনে থেকে জঙ্গি কার্যক্রম চালিয়ে আসছিলো। গত ২৭ আগস্ট নারায়ণগঞ্জের পাইকপাড়ায় সিটিটিসির এক অভিযানে দুই সহযোগীসহ নিহত হয় বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত কানাডিয়ান নাগরিক তামিম চৌধুরী। তবে বাংলাদেশে আইএস-এর প্রত্যক্ষ সাংগঠনিক কার্যক্রম নেই বলে দাবি করে থাকে স্বরাষ্ট্র মস্ত্রণালয়। বাংলাদেশ সরকারের দাবি অনুযায়ী, বাংলাদেশে আইএসের সমর্থক রয়েছে। তবে সরাসরি সাংগঠনিক কোনও কার্যক্রম নেই।
পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের (সিটি) একটি সূত্র জানায়, নারায়ণগঞ্জের পাইকপাড়ায় তামিম নিহত হওয়ার পর তার চেহেরা দেখে প্রাথমিকভাবে তাকে তামিম চৌধুরী বলে শনাক্ত করা হয়। পরবর্তীতে তামিমের শরীর থেকে ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করে কানাডিয়ান পুলিশের কাছে পরিচয় নিশ্চিত হওয়া জন্য পাঠানো হয়। ৮ নভেম্বর (মঙ্গলবার) কানাডিয়ান পুলিশের পক্ষ থেকে তামিমের পরিচয় নিশ্চিত হয়ে এ সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন পাঠায় সিটি ইউনিটের কাছে। কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট (সিটিটিসি) এর বরাত দিয়ে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-কমিশনার (মিডিয়া) মাসুদুর রহমান জানান সে সময় বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, তামিম চৌধুরীর পরিচয় ডিএনএ পরীক্ষাতেও নিশ্চিত হয়েছে। গুলশান হামলার মাস্টারমাইন্ড হিসেবে আলোচিত তামিমের ডিএনএ নমুনার সঙ্গে কানাডায় বসবাসরত তার বাবা ও বোনের ডিএনএ নমুনার মিল পাওয়া গেছে।
সূত্র জানায়, নব্য জেএমবির মাস্টারমাইন্ড বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত কানাডার নাগরিক তামিম আহমেদ চৌধুরী ঢাকায় বসে আইএসের কাছে টুইটারে বার্তা পাঠাতো। এমনকি গুলশানের হোলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয় জঙ্গি হামলার টুইট বার্তা ও নিহতদের ছবিও আইএসের কাছে পাঠিয়েছিল তামিম। পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের (সিটি) অনুসন্ধানে তখন এইসব তথ্য মেলে।
সিটিটিসি সূত্র তখন আরও জানিয়েছিল, গুলশান হামলার আগে আইএসের (ইসলামিক স্টেট) পক্ষ থেকে প্রায় ৫০টি হামলার দায় স্বীকার করা হয়। দায় স্বীকারের প্রতিটি বার্তা তামিম চৌধুরী টুইটারে লিখে পাঠাতো। আইএসের প্রতিনিধির কাছে পাঠানোর পর সেসব বার্তা প্রকাশ করা হতো আইএসের কথিত আমাক এজেন্সির মাধ্যমে। কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের এক কর্মকর্তা জানান, তামিমের ল্যাপটপ থেকে উদ্ধার করা বার্তাগুলোর সঙ্গে আমাক এজেন্সির দায় স্বীকার করা বার্তাগুলোর মিল আছে। ঢাকায় বসেই তামিম এসব বার্তা পাঠাতো।
সিটিটিসির একজন কর্মকর্তা সে সময় জানান, কানাডায় তামিমের পরিবারের সদস্যরা উইন্সসরে থাকেন। তার পৈত্রিক নিবাস সিলেটের বিয়ানীবাজার উপজেলার দুবাগ ইউনিয়নের বড়গ্রামে। তার দাদার নাম আব্দুল মজিদ চৌধুরী। তামিমের বাবা শফি আহমেদ জাহাজে চাকরি করতেন। মুক্তিযুদ্ধের পরপরই তামিমের বাবা পরিবার নিয়ে কানাডায় পাড়ি জমান। তামিমের জন্ম ও বেড়ে ওঠা সেখানেই। বাংলা ট্রিবিউন